আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
সিলেট একসময় বাঁশ-বেতের কাজের জন্য মশহুর ছিল। বালাগঞ্জের শীতল পাটির কদর ছিল দারুণ। পরিপাটি সুক্ষ্ম কাজ, শক্ত বুনন এ পাটিতে দুপুরের ঘুমভাত মনে প্রশান্তি এনে দিত। ডা. ওয়াজেদ খান রচিত ‘বাংলাদেশের স্বপ্ন ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ’ শীর্ষক বইটি একটি শক্ত বুননের কাজ। ঝকঝকে ছাপা পুস্তকটির প্রকাশক আহমদ পাবলিশিং হাউস, বাংলাবাজার, ঢাকা । মনকাড়া প্রচ্ছদ অঙ্কনের কৃতিত্ব লেখকের ছেলে শিল্পী জিহান ওয়াজেদের।
১৭৬ পৃষ্ঠার বইটি বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে সম্প্রতি (জুলাই ২০২৪) ঘটে যাওয়া চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে নিয়ে। লেখক তার সুক্ষ্ম দৃষ্টিকাণ থেকে সাবেক শেখ হাসিনা সরকার আমলের অনাসৃষ্টির উন্মোচন করেছেন। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সময়ে যে প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্র আঁতুড় ঘরেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল, সেই একই প্রেক্ষাপট পরিস্ফুষ্টভাব্ তুলে না ধরলে গণতন্ত্র বিকাশের পথের প্রধান অন্তরায় আড়ালেই থেকে যায়; ডা.ওয়াজেদের গ্রন্থটিতে এ সীমাবদ্ধতা কিছুটা হলেও লক্ষণীয় ।
‘গণঅভ্যুত্থান’ এর সমার্থক দুটি ইংরেজি শব্দ kã peopleÕs Uprising বা Insurrection ধরে নিয়ে, আমার ধারণায়, ডা. ওয়াজেদ খানের লেখাটি শুরু থেকে শেষ অব্দি একই লক্ষ্যে এগিয়েছে। আর তা হলো সীমাহীন অপশাসন ও শোষণের জাঁতাকলে মানুষ বলি হয়েছে, গণতন্ত্র, মানবিধাকার ভূলুন্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের নামে যে প্রহসন করা হয়েছে তারই ফলশ্রুতিতে বৈষম্য বেড়েছে, “সুশাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচারের দেখা পায়নি রাষ্ট্র। বিপন্ন হয়েছে গণতন্ত্র। নাগরিকরা হয়েছে অধিকার বঞ্চিত। সর্বশেষ দেড় শতকের স্বৈরতন্ত্র ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে দেশকে । লেখকের দৃঢ প্রত্যয়, “এমন একটি ক্রান্তিকালে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান কবর রচনা করেছে স্বৈরাচারের।”
সুগভীর অন্তর্জ্বালা অনুভূতি থেকে লেখক সাংবাদিক হিসেবে তার অগুনতি লেখা থেকে ৩৩টি প্রবন্ধ বেছে নিয়ে আলোচিত পুস্তকটি প্রকাশ করা হয়েছে। কোন রাখঢাক না রেখে তিনি খোলাখুলি বলেছেন, বইটিতে প্রধানত প্রাধান্য পেয়েছে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান। মূলত, একারণেই সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে পুস্তকটির অধিকাংশ প্রবন্ধে একপেশে প্রবণতা তথা নিরপেক্ষতার অভাব দেখা যায়। পুস্তকটিকে বস্তুনিষ্ঠ বলার কোন উপায় নেই। লেখক বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেননি।
শ্রেণীবিভক্ত সমাজে সংস্কার গণতন্ত্রের, রাষ্ট্রযন্ত্রের জন্য নানাবিধ সুবিধা নিয়ে আসে যা জনস্বার্থের পক্ষে কদাচিৎ কাজ করে। তাছাড়া, আইনানুগ খুঁটি ছাড়া সংস্কার অর্থহীন; বড়জোর খসড়া হিসেবে গণতান্ত্রিক সরকার, সংসদ কার্যকর হলে চটজলদি আইনসিদ্ধ ভাবে কাজে লাগানো সম্ভব। লেখক এ বিষয়টি নিয়ে আলোকসম্পাত করেছেন মাত্র যেমন করেছেন প্রয়াত প্রেসেডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম, সুশাসন নিয়ে। সবমিলিয়ে বইটি সুখপাঠ্য, বাংলাদেশের রাজনীতি, অপশাসন, কুশাসন সময়ের চমৎকার উন্মোচন। বইটির পাঠকপ্রিয়তা কামনা করি।
জুলাই ০৯, ২০২৫, ম্যানহাসেট হিলস্, লং আইল্যান্ড।
Posted ১১:৩৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh