বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত সম্ভাবনাময় তরুণ ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ড নিউইয়র্কে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে টেকনোলজি উদ্যোক্ত হিসেবে তার অভাবনীয় উত্থান বাংলাদেশী আমেরিকানদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশে ‘পাঠাও’র সফলতা টেকনোলজি ব্যবসায়ীদের অবাক করে দিয়েছে।
গত ১৪ জুলাই নিজ এপার্টমেন্টে তার বিক্ষত লাশ উদ্ধারের তিন দিনের মাথায় খুনিকে গ্রেফতার করেছে নিউইয়র্কের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। মিলিওনিয়ার ফাহিমের খুনের নেপথ্যে কী এ নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে। খুনি আগেই তার লাখ ডলার লোপাট করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বেরিয়ে আসা তথ্যে ধারণা করা হচ্ছে, তার খুনের নেপথ্যে অর্থ বিত্তই কাজ করেছে।
এদিকে ফাহিম সালেহকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। ১৯ জুলাই নিউইয়র্ক শহরের উপকণ্ঠে অরেঞ্জ কাউন্টির প্রাচীন কবরস্থান পোকেসপি রুরাল সেমেট্রিতে তাকে সমাহিত করা হয়। ম্যানহাটনে নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ১৪ জুলাই ফাহিম সালেহর খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১৭ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয় তার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী টাইরেস হ্যাসপিলকে। ১৩ জুলাই দুপুরের পর ম্যানহাটনে নিজের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে খুন হন ফাহিম সালেহ।খুন করে হত্যাকারী ওই দিন চলে যায়। পরদিন আবার ওই অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আসে সে। এরপর ইলেকট্রিক করাত দিয়ে ফাহিম সালেহের মরদেহ কয়েক টুকরা করে সেগুলো ব্যাগে ভরে। রক্ত মুছে ফেলারও চেষ্টা করে।
জানাজার দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফাহিম সালেহর মরদেহ কবরস্থানে পৌঁছায়। আধা ঘণ্টার মধ্যেই সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়। নিউইয়র্ক পুলিশের পাহারার মধ্য দিয়ে লাশবাহী একটি গাড়ি ফাহিম সালেহর মরদেহ কবরস্থানে নিয়ে যায়।কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ফাহিম সালেহর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় অংশ জানাজায় ফাহিমের পরিবারের সদস্যরা এবং কিছু আমন্ত্রিত লোকজন উপস্থিত ছিলেন। একমাত্র পুত্র হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা সালেহ আহমেদ শুধু বললেন, ‘আপনারা ওর জন্যে দোয়া করবেন। ওর আত্মা যেন শান্তিতে থাকে’।। ফাহিমের বাবা সালেহ আহমেদ জানাযার প্রাক্কালে আরো বললেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থায় আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে, নিশ্চয়ই সুবিচার পাবো।’ ফাহিমের বাবা সালেহ আহমেদ আইবিএম এর উপদেষ্টা-প্রকৌশলী হিসেবে কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন। পরিবার নিয়ে বাস করছেন এই অরেঞ্জ কাউন্টি সংলগ্ন পকিস্পীতে। জানা যায়, ফাহিমের বাবা সালেহ উদ্দিন বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে আর মা নোয়াখালীতে। ফাহিম ইনফরমেশন সিস্টেম বিষয়ে আমেরিকার বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। গত বছর প্রায় সাড়ে ২২ লাখ ডলার দিয়ে ম্যানহাটনের ডাউনটাউনে একটি অ্যাপার্টমেন্টটি কিনেছিলেন তিনি। পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও নাইজেরিয়া এবং কলম্বিয়ায় এমন আরও দুটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানির মালিক ছিলেন ফাহিম সালেহ।
ফাহিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৭ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয় তার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী হ্যাসপিলকে। এদিন মধ্যরাতে ম্যানহাটনের ক্রিমিনাল কোর্টে হ্যাসপিলকে হাজির করে তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মাত্রার খুনের অভিযোগ আনা হয়। হ্যাসপিলকে আগামী ১৭ আগস্ট ফের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এদিকে, নৃশংসভাবে এ হত্যাকাণ্ডের জন্যে অভিযুক্ত ফাহিমের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারি টাইরেস হ্যাসপিল (২১) নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছে। হ্যাসপিলের এটর্নি স্যাম রোবার্টস এ তথ্য জানিয়েছেন ১৯ জুলাই রবিবার। লিগ্যাল এইড সোসাইটির এই এটর্নি উল্লেখ করেছেন যে, হ্যাসপিল আগে গুরুতর কোন অপরাধে লিপ্ত ছিলেন না। এই মুহূর্তে আমরা দায়েরকৃত অভিযোগের ব্যাপারে একেবারেই প্রথম পর্যায়ে রয়েছি। প্রকৃত সত্য জানতে অনেক জটিল পথ পাড়ি দিতে হবে এবং এজন্যে সময়েরও দরকার। ফাহিমের ৯০ হাজার ডলার চুরি করেছিল হ্যাসপিল। ফাহিম তখন তাকে নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত করেছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। বরং হ্যাসপিল যেন কিস্তিতে টাকাটা ফেরত দিতে পারে, তার পথ বাতলে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। হত্যাকাণ্ডের পর ফাহিম সালেহর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছিলেন ঘাতক হ্যাসপিল। সেই সূত্র ধরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হত্যার পর পার্টি করার পরিকল্পনা ছিল হ্যাসপিলের
ফাহিম সালেহকে হত্যার দুদিন পরই গ্রেপ্তার হ্যাসপিলের পার্টি করার পরিকল্পনা ছিল বলে জানা গেছে। এদিকে ফাহিম সালেহর হত্যায় জড়িত ২১ বছরের তরুণ হ্যাসপিল সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। ফাহিম সালেহকে হত্যার দুদিন পরই পার্টি করার জন্য বেলুন কিনেছেন হ্যাসপিল। নিউইয়র্ক পুলিশের কাছে আসা ভিডিও চিত্রে দেখা যাচ্ছে, ইস্ট হাউস্টন স্ট্রিটের প্রায় এক মাইলের কম দূরত্বের ক্রসবি স্ট্রিটের একটি অ্যাপার্টমেন্টের সামনে তিনি বেলুন ধরে আছেন। তাঁর সঙ্গে একজন নারীকেও দেখা গেছে। বড় আকারের পার্টি বেলুনটি কিনতে ফাহিম সালেহর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ব্র“কলিনে বসবাস করা হ্যাসপিল এয়ারবিএনবি থেকে ক্রসবি স্ট্রিটের অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট কয়েক দিনের জন্য ভাড়া করেন। হ্যাসপিল যখন পার্টি বেলুন কেনাকাটা করছেন, অদূরেই নিউইয়র্ক পুলিশ ফাহিম সালেহর খুনিকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল।নিউইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা হ্যাসপিলকে ‘নিউ আমেরিকান সাইকো (মনোবিকারি)’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফাহিম সালেহকে হত্যার পরও তাঁর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছিলেন হ্যাসপিল। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে উবার পরিবহনের ভাড়া মিটিয়েছেন হোম ডিপোট নামের দোকানে ইলেকট্রিক করাত কেনার জন্য যাওয়া–আসার সময়ে। ক্রেডিট কার্ডের সূত্র ধরেই পুলিশ তাঁকে শনাক্ত করতে সক্ষম একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ফাহিম সালেহকে বৈদ্যুতিক টেজার গান দিয়ে (যার সাহায্যে মানুষকে সাময়িকভাবে নিশ্চল করা হয়) আঘাত করার পর নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।হত্যাকারী কালো রঙের স্যুট, সাদা শার্ট ও টাই এবং কালো মাস্ক পরে ফাহিম সালেহর পেছন পেছন ওই অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকেছিলেন। ফাহিম সালেহের লাশ টুকরো করার কাজে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক করাত ও ধোয়ামোছার সরঞ্জাম ফাহিমের অ্যাপার্টমেন্টেই পাওয়া গেছে।এনওয়াইপিডি’র একজন অফিসার জানিয়েছেন, মূলত হ্যাসপিলের ব্যবহার করা উবার-লিমুজিনের সূত্র ধরেই তাকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। ভিডিও সার্ভেইলেন্সের মাধ্যমে হ্যাসপিলের ব্যবহার করা উবারের চালককে বৃহস্পতিবার খুঁজে বের করে পুলিশ। তার মাধ্যমেই বেরিয়ে আসে উবারের ভাড়া পরিশোধে ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের তথ্য।
ফাহিম সালেহ’র ভেনচার ক্যাপিটাল কোম্পানি ‘অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল’-এর নামে ইস্যুকৃত ক্রেডিট কার্ড দিয়েই উবারের ভাড়া পরিশোধ করে হ্যাসপিল। ম্যানহাটনের ২৩ স্ট্রিট ও সিক্সথ এভিনিউতে অবস্থিত নির্মাণ সামগ্রীর চেইন স্টোর হোম ডিপোতে যাওয়া এবং আসার কাজে সে উবার ব্যবহার করে। হোম ডিপো থেকে সে ইলেক্ট্রিক করাত, গার্বেজ ব্যাগ এবং রক্তের দাগ পরিষ্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র ক্রয় করে। গত মাসে হ্যাসপিল তার ব্যক্তিগত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে একটি ট্যাজার বা ইলেক্ট্রিক্যাল স্টান গান ক্রয় করে। এরপর নিজের ব্রুকলিনের বাসায় সেটি ডেলিভারি নেবার সময় ডেলিভারি স্লিপে স্বাক্ষরও করে। ফাহিমকে হত্যার আগে এই ট্যাজার বা ইলেক্ট্রিক্যাল স্টান গান দিয়েই তার ওপর প্রথম আক্রমণ চালায় হ্যাসপিল। তাতে ফাহিম জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় তাকে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সেখান থেকে চলে যায় হ্যাসপিল। পরদিন ১৪ জুলাই মঙ্গলবার সে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে আবার আসে। এদিন সে ইলেক্ট্রিক করাত দিয়ে কেটে ফাহিমের মৃতদেহের বিভিন্ন অংশ আলাদা করে ফেলে এবং সেগুলো পৃথক পৃথক গার্বেজ ব্যাগে রাখে। তার উদ্দেশ্য ছিল ভবনটির সপ্তম তলা থেকেই এসব গার্বেজ ব্যাগ ময়লা ফেলবার জন্য নির্ধারিত সুড়ঙ্গে ফেলে দেয়া, যাতে ফাহিমের খুনের বিষয়টি কেউ জানতে না পারে। হত্যাকাণ্ডের অন্যান্য আলামত নিশ্চিহ্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রও নিয়ে আসে। কিন্তু ফাহিমের খোঁজে তার খালাতো বোন মীরান চৌধুরী এপার্টমেন্ট ভবনটির নিচতলায় এসে কলিং বেলের সুইচে চাপ দেয়ার পর সবকিছু এলোমেলো রেখেই পালিয়ে যায় হ্যাসপিল। পালানোর সময় সে মূল দরজা দিয়ে বের না হয়ে পেছনের দরজা দিয়ে সোজা সিড়িপথে নেমে যায়।
অন্যদিকে বেশ কয়েকবার কলিংবেল চেপেও ফাহিমের তরফ থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ৯১১ নম্বরে কল দিয়ে পুলিশের সাহায্য চান মীরান। এরপর দ্রুততম সময়ে সেখানে হাজির হয় সেভেনথ প্রিসিঙ্কট এর একদল পুলিশ। তারা মীরানকে সঙ্গে নিয়েই সপ্তম তলায় যায় এবং এপার্টমেন্টের দরজা খুলে দিয়ে মীরনকে আগে ভেতরে প্রবেশ করতে বলে। তিনি ড্রয়িংরুমের ভেতরে উঁকি দিয়েই চিৎকার করে ওঠেন। কারণ সেখানে মস্তক ও হাত-পা বিহীন অবস্থায় পড়েছিল ফাহিমের দেহ। এরপর পুলিশ সদস্যরাও ভেতরে ঢুকে দেখতে পান সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য। তাৎক্ষণিকভাবে তারা হত্যাকাণ্ডের সবরকম আলামত জব্দ করেন। পরবর্তীতে সেসব আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষার ভিত্তিতেই পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডে টাইরেস ডি হ্যাসপিলের সম্পৃক্ততা সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত হয়। এর মধ্যে ইলেক্ট্রিক্যাল স্টান গানের সঙ্গে থাকা কাগজ সদৃশ একটি বস্তুতে হ্যাসপিলের আঙ্গুলের পরিষ্কার ছাপ পাওয়া গেছে।
টাইরেস ডেভোন হ্যাসপিল ২০১৬ সালে ভ্যালি স্ট্রিমের সেন্ট্রাল হাইস্কুল থেকে দ্বাদশ ক্লাসের গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে। পরের বছর ২০১৭ সালে সে লং আইল্যান্ডের হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। হাইস্কুলে পড়ার সময় সে ওয়েবসাইট ডিজাইনের ওপর একটি পুরষ্কারও লাভ করে। হ্যাসপিলের এক বন্ধু নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিককে জানিয়েছেন যে, হ্যাংআউটের জন্য মাঝে-মধ্যে আমরা তাকে গাড়িতে তুলে নিতাম। সে একটি ফস্টার হাউজে (সরকারি খরচে অন্যের বাড়িতে থাকা) থাকতো।
এনওয়াইপিডি’র একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ফাহিম সালেহ’র সঙ্গে হ্যাসপিলের সম্পর্কের সূচনা ২০১৬ সালে। এরপর সে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেও পড়াশোনায় অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ফাহিমের অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিতে তাকে ‘চিফ অব স্টাফ’ পদবী দেয়া হলেও বাস্তবে সে ফাহিমের সব কাজের সঙ্গেই যুক্ত ছিল। বিশেষত, ফাহিমের নিজস্ব আর্থিক বিষয়াদির পুরো দায়িত্ব ছিল তার ওপর। তাদের পারস্পারিক সম্পর্ক ‘এমপ্লয়ার-এমপ্লয়ী’র চেয়েও বেশি কিছু ছিল। এমনকি ফাহিমের বন্ধু মহলে এবং পারিবারিক পরিসরেও পরিচিত ছিল হ্যাসপিল।
নিজের যোগ্যতা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রম দিয়ে অতি অল্প বয়সে সাফল্য পান কোটিপতি ফাহিম। তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং কোম্পানি পাঠাওয়ের একজন প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পরবর্তীতে নাইজেরিয়ায় গোকাডা নামে একটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে। ডিজিটাল স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করতেন শুরু থেকেই। তিনি ছিলেন টেক মিলিওনেয়ার। যে বাড়িটিতে তিনি থাকতেন তার দাম কয়েক লাখ ডলার। সহকারি হ্যাসপিল তার আর্থিক বিষয়গুলো দেখতেন। ধারণা করা হচ্ছে, ফাহিমের অনেকগুলো টাকা নয়ছয় করেছিলেন হ্যাসপিল। সেগুলো নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই এই হত্যা করা হতে পারে। ম্যানহাটানের তদন্ত পুলিশ বিভাগের প্রধান রডনি হ্যারিসন মঙ্গলবার প্রেস কনফারেন্সে বলেন, ‘মনে করা হচ্ছে, অপরাধের শিকার ব্যক্তির অভিযুক্তের কাছে বড় অঙ্কের অর্থ পাওনা ছিল।’ এই ঘটনায় আর কেউ জড়িত ছিল কি না তাও খুঁজে দেখা হচ্ছে।
ফাহিমের ঘাতকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
নিউইয়র্ক : বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, তরুণ মেধাবী ফাহিম সালেহ (৩৩) হত্যার নিন্দা এবং ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবির পাশাপাশি তার আত্মার শান্তি কামনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং নিউ অর্লিন্সে মানববন্ধন, ভার্চুয়াল আলোচনা ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।এদিকে নতুন প্রজন্মের মেধাবী প্রবাসীর এহেন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কমিউনিটিতে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ১৮ জুলাই শুক্রবার রাতে ফাহিমের স্মৃতিচারণা ও তার আত্মার শান্তি কামনায় আন্তর্জাতিক এক জুম মিটিংয়ে অংশ নেন লুইঝিয়ানা স্টেটের নিউ অর্লিন্স, লাফায়েত, লেক চার্লস, মিসিসিপি, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, ওহাইও, ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ছাড়াও সাউথ আফ্রিকা, লন্ডন ও বাংলাদেশ থেকে পেশাজীবীরা।
এই মিটিংয়ে অংশ নেওয়া নিউ অর্লিন্সের ডেলাগো কমিউনিটি কলেজের চ্যান্সেলর এবং নিউ অর্লিন্স আঞ্চলিক ট্রানজিট অথরিটির কমিশনার ড. মোস্তফা সারোয়ার জানান, সৌদি আরব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসে ফাহিমরা সপরিবারে এখানকার লেক চার্লস এলাকায় ছিলেন বেশ কয়েক বছর। সে কারণে অনেকেই ফাহিমের স্মৃতিচারণা করেন এবং তার মতো অসাধারণ উদ্ভাবনী মেধাসম্পন্ন একজন উঠতি টেক জায়েন্টকে এ ধরনের নিষ্ঠুর পরিস্থিতির ভিকটিম হওয়ায় সবাই গভীর হতাশা ব্যক্ত করেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই মিটিংয়ে ৬০ জনেরও অধিক পেশাজীবী অংশ নেন।
দেশ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সিটির সোনার বাংলা চত্বরে ফাহিম হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট কাজী মাশহুরুল হুদা এবং সমন্বয় করেন সেক্রেটারি লস্কর আল মামুন। ফাহিম হত্যার নেপথ্য মদদদাতাদের হদিস উদ্্ঘাটন এবং ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে অংশ নেন প্রবাসীরা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ফিরোজ আলম, আজীজ মোহাম্মদ, ডেনী তৈয়ব প্রমুখ। এর আগে ফাহিমের হত্যায় মদদদাতাদের শনাক্ত এবং ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ‘ইউএস বাংলাদেশ কো-অপারেশনের (ইউবকো)র প্রেসিডেন্ট জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন ইউবকোর উপদেষ্টা হাকিকুল ইসলাম খোকন এবং মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান, ইউবকোর সহসভাপতি পলাশ, সাধারণ সম্পাদক আবুল হায়াত, সাংবাদিক তোফাজ্জেল হোসেন লিটন, ইশতিয়াক আহম্মেদ প্রমুখ।
Posted ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh