বাংলাদেশ রিপোর্ট : | শুক্রবার, ০৭ আগস্ট ২০২০
যুক্তরাষ্ট্র এখন ভয়াবহ আর্থিক মন্দার কবলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন দৈন্যদশা কখনো প্রত্যক্ষ করেনি কেউ। করোনা কালের প্রথম পাঁচমাস ফেডারেল সরকারের প্যান্ডেমিক রিলিফ সহায়তা ও স্টেট সরকারের বেকার ভাতায় মোটামুটি কাটছিলো। কিন্তু সামনে অপেক্ষমান দুঃসময়ের আবাহন ভাবিয়ে তুলছে আমেরিকানদের। ব্যবসায় ধ্বস, ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের হার সহসা কেটে যাবে এমন কোন পূর্বাভাস নেই। স্বস্থি নেই কোন রাজ্য, শহর বা লোকালয়ের মানুষ নিউইয়র্কের অবস্থা অনেকটাই সূচনীয়। করোনা ভাইরাস দেশটির অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। মহামারির শুরুতেই বড় ধরণের ধাক্কা লাগে নিউইয়র্ক সিটিতে। বন্ধ হয়ে যায় রেস্টুরেন্ট, বার, দোকানপাট সহ ক্ষুদ্র ব্যবসায় সমূহ। দীর্ঘ পাঁচমাস পরও কোন লক্ষণ নেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবার। ফেডারেল ও স্টেট সরকারের অপ্রতুল সাহায্য সহযোগিতায় হতাশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
দিন যতো যাচ্ছে, হতাশা ও অনিশ্চিয়তা ততোই বাড়ছে। উপায়ন্তর না দেখে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা গুটিয়ে নিচ্ছেন তাদের প্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে কফিশপ, লন্ড্রোমেট, হার্ডওয়ার শপ থেকে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ক্ষুদ্র ব্যবসায় চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পথে। ইতোমধ্যে গত মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮০০ ক্ষুদ্র ব্যবসায় স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে স্থায়ীভাবে। ইয়েলপ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের যেকোন শহরের তুলনায় এসংখ্যা সর্বোচ্চ। বন্ধ হওয়া ব্যবসায়ের অর্ধেকই ম্যানহাটানের। ম্যানহাটানের অফিস পাড়া ফাঁকা। এপার্টমেন্ট ছেড়ে সিটির উপকন্ঠে ও অন্যান্য বরোতে দ্বিতীয় আবাসস্থলে উঠেছেন অনেকে। পর্যটকের কোন আগমন নেই নিউইয়র্ক সিটিতে। করোনায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মহামারির শুরুতেই পাততারি গুটাতে হয় তাদেরকে। আমেরিকার অর্থনীতিতে ৪৪ শতাংশের যোগান দেয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। গত মার্চের পর ১ লাখ ১০ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায় বন্ধ হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপ দ্যা পার্টনারশীপ অব নিউইয়র্কার সিটি’র রিপোর্ট অনুযায়ী এ সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার। এক তৃতীয়াংশ এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায় বন্ধ হলে চাকুরী হারাবে ৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ। সিটির তথ্যানুযায়ী এ নগরীতে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাঁচশতাধিক সদর দপ্তর। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাই সিটির মেরুদন্ড। ৩০ লাখেরও অধিক মানুষ চাকরির সংস্থান করে থাকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। সিটির মোট কর্মজীবী মানুষের অধিকই নিয়োজিত এসব প্রতিষ্ঠানে। যা সিটির চাকুরীদাতার ৯৮ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে থাকে করোনার শুরুতে ধারণা ছিলো অস্থায়ী এ দুর্যোগ দ্রুত কেটে যাবে। ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি। সবকিছু ফিরে আসবে স্বাভাবিক অবস্থায়। কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের ধ্বস ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে এবং ধারণ করছে স্থায়ী রূপ। সিটি পুনরায় খুলে দিলেও তেমন কোন প্রভাব পড়েনি ব্যবসায় ক্ষেত্রে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ বা অর্থ সহায়তার ক্ষেত্রে ফেডারেল সরকার কার্যত কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাছাড়া করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নিউইয়র্কে আঘাত হানতে পারে এমন সম্ভাবনায় মানুষ আতঙ্কিত। জন সমাগম ও জীবনযাত্রা স্বাভাবিক না থাকলে খুচরা ব্যবসায় অচল হয়ে পড়ে। যেসকল ব্যবসায় ৫০০ এর কম কর্মচারী রয়েছে এমন সব প্রতিষ্ঠানকেই ক্ষুদ্র ব্যবসায় বলে গণ্য করা হয়। সিটির ব্যবসায় বেশী ধ্বস নেমেছে ম্যানহ্টাান ও ব্রঙ্কসে।
মার্চে মহামারি ব্যাপক আকার ধারণ করলে ফেডারেল ২.২ ট্রিলিয়ন ডলারের প্যান্ডেমিক ইমার্জেন্সী রিলিফ প্যাকেজ ঘোষণা করে। তন্মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেয়া হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে। এ ঋণের উদ্দেশ্য ছিলো কর্মচারীদেও ধরে রেখে ব্যবসায় জীবিত রাখা। কিন্তু এই অর্থের সিংহভাগ বেতন, বিল ও ভাড়া পরিশোধ করতেই সাবাড় হয়ে যায়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে আরো একটি অর্থ সহায়তা বিল নিয়ে কংগ্রেস ও হোয়াইট হাউস প্রশাসনে আলোচনা চলছে।
নিউইয়র্ক সিটির হসপিটালিটি এ্যালায়েন্সের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ৮০শতাংশ রেস্টুরেন্টে এবং বার জুন মাসের ভাড়া পরিশোধ করতে পারেনি। সিটির রাস্তার পার্শের অনেক ভবনের পাশেই এখন শোভা পাছে “ফর লীজ” বিজ্ঞপ্তি। অনেক ভবন মালিক ভাড়ার ক্ষেত্রে ছাড় দিতে চাইলেও ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় বন্ধ করে দিচ্ছে অর্থাভাবে। অদূর ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক মন্দা কাটবে বা তারা পুনরায় ব্যবসায় ফিরতে পারবে এমন কোন সম্ভাবনা দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। সিটির রেস্টুরেন্ট মালিকদের ধারণা ছিলো জুলাইতে তারা টর্নেডোর সার্ভিস শুরু করবে। এজন্য কেনা কাটা এবং প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু চতুর্থ ধারা আগের দিন গভর্নর এক আদেশ তা নিষেধ করে দেন। অন্যান্য রাজ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমন বৃদ্ধির কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।
সিটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও মহিলা মালিকানাধীন, ক্ষুদ্র ব্যবসায় সমূহ অধিকার ঝুঁকিতে রয়েছে। সিটিতে ব্যবসায়ের ৩০শতাংশ আগামী এ মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিটি কম্পট্রোলার অফিস। লকডাউনকালে প্রতিদিন সিটি কর্তৃপক্ষকে লোকসান গুনতে হয়েছে ১৭৩মিলিয়ন ডলার। বহুজাতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এ নগরীতে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৬ লক্ষ। বিশাল এ কর্মী বাহিনীর সিংহভাগ মানষের প্রধান কর্মস্থল রেস্টুরেন্ট, বার, হোটেল, থিয়েটার ও রিটেইল স্টোরস। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগ, সুপারমার্কেট ও ট্রান্সপোর্টেশন বিভাগে কাজ করে বহু মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে বেশীর ভাগই কাজ করতেন রেস্টুরেন্ট, ট্রান্সপোর্টেশন ও রিটেইল স্টোরে। করোনাকালে এসব কর্মস্থল থেকে চাকুরী হারান সাড়ে ৮ লাখ মানুষ।।
বাংলাদেশী কম্যুনিটির অনেকেরই রয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়। প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশী অভিবাসীর মাঝে নেমে এসেছে এক ধরণের হতাশা, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। ব্যবসার ক্ষেত্রেও তেমন ভালো কোন লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না বাংলাদেশীরা। করোনার শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে কম্যুনিটির ৯০ শতাংশ ব্যবসায়রেস্টুরেন্টগুলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের আওতায় পড়ে। করোনাকালে তাদের মাথায় হাত পড়েছে। অনেক রেস্টুরেন্টের মালিকানায় রয়েছে অভিবাসী বাংলাদেশী। ম্যানহাটান সহ প্রায় প্রতিটি বরোতেই বাংলাদেশীদের রেস্টুরেন্ট আছে।। নিউইয়র্ক সিটিতে রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ২৬ হাজার ৬১৮টি। আর রেস্টুরেন্ট কাম বার রয়েছে ১ হাজার ৬০০টি। এসব রেস্টুরেন্টে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী চাকরি করেন।
Posted ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ আগস্ট ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh