বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৩
নিউইয়র্ক স্টেটের প্রথম নির্বাচিত নারী গভর্নর হকুল গত রোববার রাজধানী অ্যালবেনিতে তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্টেটকে অপরাধ মুক্ত নিরাপদ ও অ্যাফোর্ডেবল করার উদ্দেশ্যে সকলের প্রতি ঐক্যের আহবান জানিয়েছেন।
শপথ অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর আগে ইতিহাস সৃষ্টিকারী নারী হ্যারিয়েট টাবম্যান ও হিলারি ক্লিনটনের নাম উল্লেখ করে বলেছেন যে পরবর্তী চার বছর তিনি তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে স্টেট পরিচালনা করবেন। তিনি বলেন, আমি ইতিহাস সৃষ্টি করার জন্য আসিনি, আমি একটি ব্যবধান সৃষ্টির জন্য এসেছি।
বাফেলো এলাকার ডেমোক্রেট গত নভেম্বর মাসে তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী লী জেলডিনকে পরাজিত করে গভর্নর পদে নির্বাচিত হওয়ার দু’মাস পর শপথ গ্রহণ করলেন। তিনি তার দায়িত্ব পালনকালে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে স্টেটে গর্ভপাতের অধিকার সংরক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করবেন, যে অধিকারের পক্ষে তিনি ব্যাপক সমর্থন লাভ করেন। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের পর অ্যালবেনিতে এ উৎসবমুখর ও জাঁকজমকপূর্ণ শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
২০১১ সালে এন্ড্রু ক্যুমো প্রথম বার গভর্নর নির্বাচিত হওয়ার পর এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল। নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি স্পিকার কার্ল ই হিস্টি ক্যাথি হকুলকে অনুষ্ঠানস্থলে স্বাগত জানান। শপথ অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস, সিনেটর চাক শ্যুমার, এটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস, স্টেট কম্পট্রোলার থমাট বি ডিনেপোলি, লেফটেন্যান্ট গভর্নর অ্যান্টোনিও ডেলগাদো উপস্থিত ছিলেন। হকুল তার বক্তব্যে করোনা মহামারীর দীর্ঘস্থায়ী বিরূপ প্রতিক্রিয়ার উল্লেখ করে বলেন যে মহামারী শিক্ষা ও অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে ও নিউইয়র্ক সিটিসহ অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্টেটের সর্বোচ্চ পদে ক্যাথি হকুলের প্রথম অভিষেক তার জন্য নি:সন্দেহে সুখকর, যে সুযোগ তার জন্য এসেছে অনেকটা অপ্রত্যাশিভাবেই। যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে তার পূর্বসূরী গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমোকে পদত্যাগ করতে না হলে হকুল হয়তো এই সুযোগ লাভ করতেন না। সাবেক ডেপুটি গভর্নর হিসেবে তিনি ভারপ্রাপ্ত গভর্নরের দায়িত্ব লাভ করেন এবং পরবর্তী গভর্নর পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন লাভের ক্ষেত্রে তা কাজে লাগে এবং প্রাইমারীতে তিনিই সকলের প্রিয়ভাজন বলে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হন। সাবেক কংগ্রেসম্যান হকুল নিউইয়র্ক স্টেটের প্রথম নারী গভর্নর এবং স্টেটের পশ্চিমাঞ্চল থেকে গত এক শতাব্দীর অধিক সময়ের মধ্যে প্রথম গভর্নর নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। সকলে আশা করছেন যে তিনি তার যোগ্যতা দ্বারা অ্যালবেনিতে নিজস্ব ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন। ভারপ্রাপ্ত গভর্নর হিসেবে তিনি ৫০০ দিনে ২২০ বিলিয়ন ডলারের বাজেট পাস এবং স্টেটের জামিন ও আগ্নেয়াস্ত্র আইনের সংশোধন আনাসহ স্টেট আইনসভা নিয়ন্ত্রণকারী ডেমোক্রেটদের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছেন বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
গভর্নর ক্যাথি হকুল চলতি বছরের শেষ দিকে আগামী দশ বছরে স্টেটে ৮ লাখ ইউনিট নতুন অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের পরিকল্পনা উদ্বোধন করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ক্রমবর্ধমান বাড়ি ভাড়া ও জ্বালানি ব্যয় নিউইয়র্কারদের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। তিনি মানুষের অর্থনৈতিক জীবনকে স্বচ্ছন্দ করার লক্ষ্যে স্টেট জুড়ে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
অপরাধ দমন ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করার কথা বললেও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের কথা না করে তিনি বলেন, আমরা এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই যাতে নিউইয়র্কাররার নির্বিঘ্নে রাস্তায় চলাফেরা করতে পারে, কোনো ধরনের আশঙ্কা ছাড়াই সাবওয়েতে ওঠতে পারে এবং ভীতিশূণ্যভাবে শিশুরা স্কুলে যেতে পারে। চলতি মাসের শেষ দিকে তিনি তার ‘স্টেট অফ দ্য স্টেট’ ভাষণে তার নীতি বিষয়ক রূপকল্প বিস্তারিত তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ ভাষণে তিনি স্টেটে বাজেট প্রস্তাবের ওপরও আলোকপাত করবেন। কিন্তু একই সাথে সন্দেহ পোষণ করা হচ্ছে যে তার বেশ কিছু নীতি স্টেটের ডেমোক্রেট আইন প্রনেতাদের তীব্র বাধার মুখে পড়বে।
কারণ স্টেট সিনেটের বামপন্থী ডেমোক্রেটরা ইতোমধ্যে স্টেটের প্রধান বিচারক পদে গভর্নর হকুলের মনোনীত প্রাথীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সিনেটের ডেপুটি মেজরিটি লিডারসহ অন্তত এক ডজন স্টেট সিনেটর প্রধান বিচারক পদে হকুলের পছন্দের প্রার্থী হেক্টর লা’সালি’র বিরুদ্ধে তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তাদের প্রবল আপত্তির মুখে হেক্টরের অবস্থা অত্যন্ত বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়েছে যে, গভর্ণর হকুল, যিনি এতদিন পর্যন্ত তার সিদ্ধান্তের প্রতি অটলতা ব্যক্ত করে এসেছেন, তাকে হয়তো মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং এটি হবে গভর্নর পদে তার পূর্ণ মেয়াদের প্রথম বছরের সূচনায় বিব্রতকর রাজনৈতিক পরাজয়।
Posted ৪:২৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh