রশীদ আহমদ : | বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩
করোনাকালীন বিরূপ পরিস্থিতির কারণে গত ৩ বছর আমেরিকান-বাংলাদেশিদের অন্যতম বৃহৎ এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। দীর্ঘ বিরতির পর এবার নতুন রূপে এবং আরও বৃহৎ পরিসরে ‘মুনা কনভেনশন-২৩’-এর আয়োজন করা হয়েছে। তিন দিনব্যাপী কনভেনশনের প্রাথমিক সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া কনভেনশন সেন্টারে আগামী ১৮, ১৯ ও ২০ আগস্ট (শুক্র, শনি ও রবিবার) অনুষ্ঠিত হবে এবারের মুনা কনভেনশন-২৩। ‘আল-কুরআন গাইডেন্স ফর হিউম্যানিটি’ এই স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে এবারের কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে মুসলিম জীবনে বিশেষ করে বাংলাদেশি-আমেরিকান পরিবারের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। উল্লেখ্য, মুনা হচ্ছে আমেরিকার একটি দাওয়াতি ও সামাজিক সংগঠন। মানুষের ব্যক্তিগত, নৈতিক ও সামাজিক মানোন্নয়নের জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় মুনা। ১৯৯০ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে করপোরেশনভুক্ত হওয়া সংগঠনটি বর্তমানে ৪০টিরও বেশি অঙ্গরাজ্যে নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছে। একটি দাওয়াতি সংগঠন হিসেবে মুনা মুসলিমদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইসলাম পালনের পাশাপাশি অমুসলিমদের কাছে ইসলামের সঠিক শিক্ষা তুলে ধরার আহ্বান জানায়।
অলাভজনক সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় এ সংগঠন কোনো দেশের কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়। নিজস্ব সংবিধান ও কর্মসূচির আলোকেই সংগঠনটি জন্মলগ্ন থেকে পরিচালিত হচ্ছে। মুনা চায় এমন প্রশিক্ষিত মানবসম্পদের উন্নয়ন, যারা স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে রাখবে উৎপাদনমুখী ভূমিকা। এবারের ২০২৩ হচ্ছে ৬ষ্ঠ কনভেনশন। এবারের কনভেনশনে ২০ হাজার ডেলিগেটের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১৫ হাজার রেজিস্ট্রেশন ছাড়িয়ে গেছে। কনভেনশন সফল করতে মুনার ন্যাশনাল, জোনাল,চ্যাপ্টার ও সাব চ্যাপ্টার দায়িত্বশীলরা দিনরাত পরিশ্রম করে চলছেন। বিভিন্ন সময় ইমাম-উলামা,কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আলোচনা,ডিনার পার্টি, সংবাদ সম্মেলন, ব্রিফিংসহ নামাভাবে প্রচার-প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন।
মুনার দায়িত্বশীলরা জানান, অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও মুনা রাজনীতি সম্পর্কে উদাসীন নয়। মুনা চায় সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, ইনসাফ ও রাজনৈতিক সচেতনতা গড়ে তুলতে, যাতে তারা রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে নাগরিকেরা সচেতনভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। মুনা আমেরিকায় জাতীয়ভিত্তিক সংগঠন হলেও এর প্রাথমিক লক্ষ্য বাংলা ভাষাভাষী তথা বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটি। এটি প্রধানত বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যেই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। মুনা চায় মুসলিমেরা এখানকার মূলধারার জীবনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করবে এবং একই সঙ্গে নিজের আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ করবে। তাই মুনা চায় আরও বেশিসংখ্যক বাংলাদেশিকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে। এ ক্ষেত্রে মুনা ইয়ুথ ও ইয়ং সিস্টার অব মুনার সঙ্গে সন্তানদের সম্পৃক্ত করতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানায় মুনা। এ লক্ষ্যে প্রতিবারের মতো এবারও তরুণদের জন্য থাকবে আলাদা ইয়ুথ কনভেনশন। আলোচনা ছাড়াও থাকবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। থাকবে বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান। এ ছাড়া ফিলাডেলফিয়া ভ্রমণকারীদের জন্য থাকবে নানা দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের সুযোগ।
এবারের কনভেনশনের মূল থিম ‘আল-কুরআন গাইডেন্স ফর হিউম্যানিটি’ এ কারণে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, কুরআন গোটা মানবজাতিকে সত্য ও সঠিক পথ দেখায়। কুরআন হচ্ছে বিশ্বাসী মানুষের বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই মহাগ্রন্থের কল্যাণকর পতাকা প্রতিটি হৃদয়ে, প্রতিটি ঘরে। তা ছাড়া ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ পরিবর্তনের একমাত্র শাশ্বত বিধান এই কুরআন। এটি শুধু মুসলিম তথা ইসলামে বিশ্বাসীদের জন্য নয় ।এটা গোটা মানবগোষ্ঠীর উন্নতি ও অগ্রগতির সোপান। মুনা এই বিশ্বাস ধারণ করেই এবারের কনভেনশনে মূল থিম বা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘আল-কুরআন গাইডেন্স ফর হিউম্যানিটি’।
মুনা নিজের সদস্য ও অন্যান্য মুসলিমদেরকে নিয়ে এমন একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে দিতে চায় যাতে তারা অন্য ধর্মাবলম্বী, ভিন্ন ভাষাভাষী বর্ণ ও গোত্রের জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবেশীদের সাথে পারস্পরিক সংলাপে নিয়োজিত হতে পারে। যার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বোঝাপড়া, সামাজিক প্রসার ও উন্নয়ন ঘটানো যায়। মুনা মনে করে- এ প্রক্রিয়ায় সমাজের সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব। এবারের কনভেনশন এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
মুনা চায় বাংলাদেশি-আমেরিকানরা কর্মতৎপরতায় বেশি বেশি করে সক্রিয় অংশগ্রহণ করুক। সাথে সাথে বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে গড্ডালিকা প্রবাহ থেকে বাঁচাতে চায়। প্রতিটি বাংলা ভাষাভাষী অভিভাবক তাদের সন্তানকে মুনা ইয়ুথ এবং ইয়ং সিস্টার অফ মুনার সাথে সম্পৃক্ত করুক। মুনা চায় বাংলাদেশি-আমেরিকানদের আমেরিকার মূলধারার মুসলিম স্কলার ও নেতৃবৃন্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। এবারের কনভেনশনে দিকনির্দেশনা-সংবলিত আলোচনা রাখবেন বিশ্বখ্যাত আলোচকবৃন্দ। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষায় আলোচকগণ আলোচনা করবেন।
সম্মেলনে প্রতিবারের মতো এবারও রয়েছে কুরআন ও নাশিদ প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি থাকছে মনোজ্ঞ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন ইসলামি পণ্য ও অন্যান্য সামগ্রীর দোকান নিয়ে বিশাল বাজার। শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ‘লার্ন এন্ড ফান’ এবং বিভিন্ন খেলাধুলা রাইডের ব্যবস্থা। প্রতিযোগিতার প্রতিটি বিভাগে রয়েছে আলাদা আলাদা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বা তালিকাভুক্ত হওয়ার বেশ কিছু নিয়মাবলি।
এ ছাড়া ফিলাডেলফিয়া ভ্রমণকারীদের জন্য থাকছে নানা দর্শনীয় স্থান পরিবহন ও পরিদর্শনের সুযোগ। পরিবার-পরিজন বন্ধু স্বজন আর গোটা আমেরিকা থেকে আসা বাংলা ভাষাভাষীদের এই সর্ববৃহৎ মিলনমেলায় অংশগ্রহণের সুবর্ণ সুযোগ।
মুনা কনভেনশনে দূর থেকে আসা ডেলিগেটরা থাকবেন বিভিন্ন হোটেল এবং প্রাইভেট বাসা-বাড়িতে। তবে কনভেনশন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ম্যারিয়েট, শেরাটন, হিলটন, ডাবলট্রিসহ ১২টি উন্নতমানের হোটেল ইতিমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে জানা গেছে। তবে পাশ্বাবর্তী অঙ্গরাজ্য থেকে আসা ডেলিগেটরা নিজ নিজ ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রোগ্রামে যাওয়া আসা করবেন। ডেলিগেটদের আপ্যায়নের জন্য কয়েকটি রেস্টুরেন্টের সাথে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
যদিও খাবার নিজ খরচেই খেতে হবে। কনভেনশনের প্যারালাল বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচারে মুনার সংশ্লিষ্ট বিভাগের পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। কনেভনশনে নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে ২ ডজনেরও বেশি ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক উপস্থিত থাকবেন। ফিলাডেলফিয়ায় তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য এবারের কনভেনশনের কনভেনর ও সংগঠনের ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আরমান চৌধুরী এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, কনভেনশনের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। তবে তিনি ডেলিগেটদের সময়মতো কনভেনশনে যোগদান করে সুষ্ঠু ও সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন।
Posted ৪:৫৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh