বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার জেএমসি নিউইয়র্কে বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটির বৃহত্তম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বহুমুখী এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম জামিয়া কুরানিয়া একাডেমি। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্রতিবছর এই একাডেমি থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী কুরআনে হাফেজ হিসেবে ডিগ্রীপ্রাপ্ত হচ্ছেন। চলতি বছর কুরআনে হাফেজ হয়েছেন ৭ জন। এরা হলেন-আনসার সিদ্দিকী, আহমেদ নভো, সামির চৌধুরী, মোহাম্মদ হামজা, নোহান রাকিন, শাকিল হোসেন ও ওয়ালিউর রহমান। জেএমসি জামিয়া কুরানিয়া একাডেমি থেকে এ পর্যন্ত ১০২ জন কোরআনে হাফেজ হয়েছেন।
গত ১১ আগষ্ট, শুক্রবার বাদ মাগরেব অনুষ্ঠিত হয় নূতন হাফেজদের গ্রাজুয়েশন। জেএমসির মূল ভবনে অনুষ্ঠিত অনাড়ম্বর এ গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে ৭ জন হাফেজকে পাগড়ী পড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি প্রদান করা হয় সনদ পত্র। চার পর্বে অনুষ্ঠিত গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী, তাদের পরিবার এবং অতিথিসহ বিপুল সংখ্যক মুসল্লি অংশ নেন এবং তা চলে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী আফতাব মান্নানের উপস্থাপনায় প্রথম পর্বে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করে শিক্ষার্থী সাফির মারুফ। স্বাগত বক্তব্য দেন জেএমসি’র প্রেসিডেন্ট ডাঃ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান।
স্বাগত বক্তব্যে নূতন হাফেজ এবং তাদের অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান ডাঃ রহমান। তিনি বলেন, কোরআনে হাফেজরা আমাদের সমাজের গর্ব। হিফজ স্কূল থেকে বের হয়ে সিটির স্পোশালাইজ্্ড স্কুলগুলোতে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতা করছে এবং সেখানেও ভর্তির ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন ডাঃ রহমান। তিনি আরো বলেন, জেএমসি’র হিফজ স্কুল থেকে যারা হাফিজ হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা ইতোমধ্যে নিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং অনেক ইসলামী সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দিচ্ছেন। মাদ্রাসায় লেখাপড়া করলে শুধু মসজিদে ইমামতিই নয় এখন আমাদের ছাত্ররা প্রচলিত ধারার অনেক ক্ষেত্রে ভালো চাকুরী করছে। এই পর্বে নাশিদ পরিবেশন করে নাহিয়ান ও তার গ্রুপের সদস্যরা।
দ্বিতীয় পর্বে হাফেজ শেখ আবু সুফিয়ানের উপস্থাপনায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন এবং হাফেজ হওয়াকালীন তাদের শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন দিক ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন নতুন হাফেজ আহমেদ নভো ও হাফেজ সামির চৌধুরী। এই পর্যায়ে ক্লাশে উপস্থিতি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্য বিভিন্ন শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জেএমসির সেক্রেটারী আফতাব মান্নান, জয়েন্ট সেক্রেটারী মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ডাঃ মাহমুদুর রহমান তুহিন, কোষাধ্যক্ষ বাবুল মজুমদার, সাবেক সেক্রেটারী জুন্নুন চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহাদাত হোসেন, সদস্য আতাউর রহমান, এমাদ সিদ্দিকী, মাওলানা আবু সুফিয়ান প্রমুখ।
মাওলানা শেখ আবু সুফিয়ানের পরিচালনায় তৃতীয় পর্বে বক্তব্য রাখেন জেএমসি’র পরিচালক ইমাম শামসী আলী। তিনি নূতন গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তদেরকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, কোরআনে হাফেজ হতে হলে কঠোর অধ্যয়ন ও একাগ্রতা প্রয়োজন। তিনি পবিত্র কোরআনের বাণী মানুষের মাঝে পৌছে দেয়ার ব্রত নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীদের প্রতি। বর্ষ সেরা শিক্ষার্থীর হাতে এওয়ার্ড তুলে দেন জেএমসি’র ইমাম মাওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ, জেএমসি’র পরিচালক ইমাম শামসী আলী ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য শামসুল ইসলাম চতুর্থ পর্বে সদ্য গ্রাজুয়েশন প্রাপ্ত হাফেজদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সার্টিফিকেট তুলে দেন জেএমসি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান, প্রেসিডেন্ট ডাঃ মো: সিদ্দিকুর রহমান, ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ, হাফিজ মামুনুর রশীদ, জেএমসি নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ রহমান লাবু। গ্র্যাজুয়েশন প্রাপ্ত হাফেজদেরকে অভিনন্দন জানান জাহিদুর রহমান। তিনি সমবেতদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। জাহিদুর রহমান বলেন, এসব হাফেজরাই ভবিষ্যতে আমদের ধর্মীয় কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সকল অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান জাহিদুর রহমান। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে ইসলামী ধারায় বিচারকার্যের ওপর নাটিকা উপস্থাপন করে শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফেজ সাকিল হোসেন, হাফেজ ওয়ালিউর রহমান ও কোরানের গুরুত্বেও উপর আলোচনা করে আইয়ুব বাচ্চু। অনুষ্ঠানের শুরুতে জামিয়া কোরানিয়া একাডেমির প্রিন্সিপাল হাফেজ মুজাহিদুল ইসলাম পবিত্র কোরআন এবং ধর্মীয় শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করে নূতন প্রজন্মকে এ শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে অভিভাবকদের আরো যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এই একাডেমির কর্মসূচীর লক্ষ্য হচ্ছে চার বছরের মধ্যে কোরআন হিফজ করা। এ সময়ে নিউইয়র্ক বোর্ড অফ এডুকেশন এর একাডেমিক কারিকুলামে অন্তর্ভূক্ত অন্যান্য বিষয়ের পাঠও দেয়া হয়। হিফজ স্কুলের ছাত্ররা সিটিওয়াইড টেস্ট ও টেরানোভা টেস্টের জন্য জেএমসি’র অন্য প্রতিষ্ঠান আল মামুর স্কুলের সাথে তালিকাভূক্ত হয়, যাতে তারা বোর্ড অফ এডুকেশনের শিক্ষার দিক থেকে কোনভাবেই পিছিয়ে না থাকে। টেরানোভা ও ইএলএ দু’টি পরীক্ষায়ই আমাদের ছাত্রদের সাফল্য অত্যন্ত সন্তোষজনক। ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগের পরিচালনায় দোয়া মুনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।
Posted ৫:০২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh