বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩
চ্যান্সেলর ডেভিড সি বাঙ্ক
জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউয়ের পাশে পারসন্স বুলেভার্ডে অবস্থিত হিলক্রেস্ট হাইস্কুলের এক ইহুদি শিক্ষিকা তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইসরায়েলকে প্রকাশ্যে সমর্থন ও তার ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে নিয়ে আসার মাধ্যমে স্কুলের নীতি লংঘনের মাধ্যমে ছাত্রদের ক্ষোভের শিকার হয়েছেন। স্কুলের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদে সোচ্চার হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে স্কুলের অন্যত্র সরিয়ে নেয়।
গত ২০ নভেম্বর এ ঘটনার সূত্রপাত হলেও গত ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিউইয়র্ক স্কুল বোর্ডের চ্যান্সেলর ডেভিড সি বাঙ্ক গত সোমবার স্কুল পরিদর্শন করেন এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষিার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। তিনি শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার জন্যও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, হিলক্রেস্ট হাইস্কুলের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীই মুসলিম চ্যান্সেলর ডেভিড বলেছেন, নিউইয়র্ক সিটির কর্মকর্তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন যখন কুইন্স হাই স্কুলের কয়েকশ’ ছাত্র ইসরায়েলপন্থী শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল, যাকে বিক্ষোভের সময় ভবনের অন্য অংশে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। তিনি বলেন, হিলক্রেস্ট হাই স্কুলে ঘটনার ষুচনা হয় যখন সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকা, যিনি একজন ইহুদি, তিনি একটি সামাজিক মাধ্যমে তার প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে “আই স্ট্যান্ড উইথ ইজরায়েল” স্টিকার যুক্ত করেছিলেন।
গত ২০ ২০ নভেম্বর প্রায় ৪০০ জন শিক্ষার্থী যখন এর প্রতিবাদে মুখর হয় তখন শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে উক্ত শিক্ষিকাকে অন্য তলায় একটি কক্ষে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। তিনি যে শিক্ষার্থীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন , এর মূল কারণ ইসরায়েলের প্রতি তার সমর্থন ঘোষণা ও তার ইহুদি পরিচয় প্রকাশ করা, যা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, টিকটক ক্লিপের কৌতুকপূর্ণ দৃশ্য প্রথমে অনলাইন দুনিয়ায় মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং এরপর নিউ ইয়র্ক পোস্ট একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকাকে ক্ষুব্ধ ছাত্রদের হাত থেকে রক্ষা করতে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। উত্তেজনাপূর্ণ এ ঘটনা সিটিতে আলোড়ন সৃষ্টি করে, ইসরাইয়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুল ডিস্ট্রিক্ট এবং কলেজ ক্যাম্পাসগুলোকেও নাড়িয়ে দিয়েছে।
স্কুল চ্যান্সেলর ডেভিড বাঙ্কস এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, স্কুলে যা ঘটেছে তা নিয়ে অনেক গুজব সৃষ্টি হয়েছে এবং ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে। তিনি বলেন, উক্ত শিক্ষিকা কখনোই প্রত্যক্ষভাবে বিপদে পড়েননি অথবা তাকে কোনো কক্ষে আটকে রাখা হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ শুরু হলে তাকে স্কুলভবনের অন্য একটি তলায় স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। মিঃ ব্যাঙ্কস, যিনি স্বয়ং সত্তরের দশকে হিলক্রেস্ট স্কুলের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন, তিনি গত সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সহিংসতা, ঘৃণা-বিদ্বেষ ও বিশৃঙ্খলার কোনো স্থান নেই। ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ হিলক্রেস্ট স্কুলে অত্যন্ত দৃশ্যমান আবেগের বিষয়, যেখানে প্রায় ৩০ শতাংশ ছাত্র মুসলিম।
তারা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে এক ধরনের আত্মীয়তার নৈকট্য অনুভব করে। কিন্তু যারা এটিকে শিশুদের ‘মৌলবাদী’ হওয়ার ধারণা দিয়েছে, তারা যথার্থই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে। গত সপ্তাহে ঘটনাটি জানার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস এটিকে সেমিটিক বিরোধী ‘জঘন্য প্রদর্শন’ বলে নিন্দা করেন। কুইন্স বরোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মেলিন্ডা কাটজ, যিনি হিলক্রেস্টের প্রাক্তণ ছাত্র, তিনি বলেছেন, এ ঘটনা আমাকে ক্রুদ্ধ করেছে এবং একই সঙ্গে আমার হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছে যে, ইসরায়েলের সমর্থকদের থামিয়ে দিতে তরুণরা সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে।
একজন রিপাবলিকান সিটি কাউন্সিলওম্যান পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত হিলক্রেস্ট হাইস্কুল বন্ধ রাখার আহবান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, হিলক্রেস্ট হাইস্কুলের ঘটনার ওপর প্রথম দিকের রিপোর্ট অনুযায়ী এটি কুইন্স বরোর জ্যামাইকাস্থ একটি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২,৫০০। ছাত্রদের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর অভিযুক্ত শিক্ষিকা প্রকাশ্যে কোনো কথা বলেননি। গত ২৭ নভেম্বর তিনি সোমবার স্কুলে উপস্থিত ছিলেন না। স্কুল প্রশাসন জানিয়েছে যে চলতি সপ্তাহের শেষর দিকে তিনি স্কুলে ফিরে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কিছু কিছু স্থানীয় রাজনীতিবিদ বলেছেন যে, অসহিষ্ণুতা ও সেমিটিক বিরোধিতায় তারা উদ্বিগ্ন, যা তাকে তার কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। হিলক্রেস্টের ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে সোমবার আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তব্য দানকালে সিটি কাউন্সিলের ইহুদি ককাসের নেতা এরিক ডিনোভিটজ বলেছেন, বিদেশে যা ঘটছে তা কারো জন্য ঘৃণাবিদ্বেষ ছড়ানোর লাইসেন্স নয়। আমাদের শিক্ষা বিভাগ এই মুহূর্তে জরুরী ভিত্তিতে কাজ করছে না। মেয়র অ্যাডামস শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, ঘটনাটি অজ্ঞতা প্রসূত হলেও তা ঘৃণার ইন্ধন ছিল।
এ ধরনের কোনো আচরণ আমাদের সিটির কোথাও কোনো স্কুলে সহ্য করা হবে না। স্কুল কর্মকর্তারা বলেছেন যে, প্রতিবাদে জড়িত কিছু শিক্ষার্থীকে তাদের আচরণের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। তারা সাংবাদিকদের কাছে ওইসব শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশ করেননি। কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডনোভান রিচার্ডস বলেছেন যে, এই স্কুলের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ইহুদি-বিদ্বেষী বলা ভুল।
গত সোমবার হিলক্রেস্ট স্কুলের বাইরে, এক ডজনেরও বেশি পুলিশ অফিসার এবং স্কুল নিরাপত্তা এজেন্ট মোতায়েন ছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেড় ডজন শিক্ষার্থী উদ্ভুত ঘটনা সম্পর্কে তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। অনলাইনে তাদের স্কুলকে কীভাবে চিত্রিত করা হয়েছে তা নিয়ে তারা হতাশা ব্যক্ত করেছে। তবে সামগ্রিকভাবে তারা ঘটনাটিকে অবাঞ্ছিত বলে বর্ণনা করা ছাড়াও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বলেছে যে, কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষিকার পোস্টের প্রতিবাদ করতে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করতে চেয়েছে, তবে তাদের অনেক সহপাঠী এতে অংশ নিয়েছিল কৌতুহলি হয়ে মজা করতে। ২০ নভেম্বর সকাল সোয়া ১১টার দিকে শত শত কিশোর-কিশোরী স্কুলের তৃতীয় তলায় উঠে এবং তাদের পরবর্তী ক্লাসের জন্য বেল বাজলেও অনেকেই ক্লাসরুমে ফিরে আসেনি। কেউ কেউ ফিলিস্তিনি পতাকা নেড়েছে এবং কেউ একটি বড় মাইক্রোফোন বহন করেছে। অনেকে অভিযুক্ত ইহুদি শিক্ষিকার ক্লাসরুমের দিকে ছুটে যায়।
কিন্তু অন্যান্য শিক্ষক ও প্রশাসনের লোকজন তাকে সেখান থেকে স্কুল ভবনের অন্য বিভাগে নিয়ে যায়। বেলা ১২টার দিকে দিকে স্কুল সিকিউরিটির সদস্যরা তাদের সার্জেন্টের সাথে যোগাযোগ করে ছাত্রদের একটি উচ্ছৃঙ্খল দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য কামনা করে। এরপর প্রায় ২৫ জন নিরাপত্তা অফিসারকে পাঠানো হয় এবং সকল শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে ফিরে যায়। দু’জন শিক্ষক জানিয়েছেন যে, হিলক্রেস্টের কিছু ছাত্র ২০ নভেম্বরের প্রতিবাদ সম্পর্কে প্রকাশ্যেই আলাপ আলোচনা করেছিল।
অভিযুক্ত ইহুদি শিক্ষিকাও তা জানতে পেরেছিলেন যে তিনি ছাত্রদের বিক্ষোভের টার্গেট হতে পারেন এবং বিষয়টি তিনি শিক্ষক ইউনিয়নের একজন প্রতিনিধি ও স্কুলের প্রিন্সিপালকে জানিয়েছিলেন। দুই শিক্ষক বলেছেন, বিস্তারিত বিষয় সকল স্কুলকর্মীর সঙ্গে বলা হয়নি বলে বিশৃঙ্খলা শুরু হওয়ার পর তারা হতাশ অনুভব করেন। প্রস্তুতি থাকলে পরিস্থিতি আরও ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেত বলে তারা মনে করেন। স্কুলের সিনিয়র ক্লাসের ছাত্র সভাপতি মুহাম্মদ গাজালি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে ঘটনাগুলি যেভাবে প্রচারিত হয়েছে তাতে তিনি হতাশ হয়েছিলেন। গুটিকয়েক ছাত্রের আচরণের কারণে পুরো হিলক্রেস্ট কমিউনিটি ব্যথিত। তার মতে, ঘটনাটি যেভাবে হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। প্রথম থেকেইউদ্দেশ্য ছিল একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের। কিন্তু ছাত্রদের মধ্যে পরিপক্কতার অভাব রয়েছে।
Posted ১০:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh