নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট ২০২৪
বাংলাদেশের জাতীয় নিরপত্তার প্রতিটি ক্ষেত্র রেড জোনে রয়েছ বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। গেল ১৫ বছরে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা দেখবার চেয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গোয়েন্দা বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেশি রাষ্ট্র থেকে গনঅভ্যুণ্থানের বিপক্ষে তথ্য সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে । রোববার বাংলাদেশে ইনষ্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট এন্ড সিকিউরিটি ষ্টাডিজ আয়োজিত ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন প্যানেলে অংশ নেয়া আলোচকরা।
সাংবাদিক জিমি আমিরের সঞ্চালনায় আয়োজিত ওয়েবিনারে স্বাগত ক্তব্য রাখেন বিডস এর পরিচালক মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন আনসারী। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম শাহিদুজ্জামান, সংযুক্ত আরব আমিরাত সেনাবাহিনীর আইসিটি নীতি বিভাগের প্রধান ও ওপেন সোর্স ইন্টিলিজেন্স বিশেষজ্ঞ ড. ফাহিম সুফী।
স্বাগত বক্তব্যে ইমরান আনসারী বলেন, আজকে যখন আমরা গণঅভ্যুণ্থান পরবর্তী বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনায় বসেছি তখন আমরা দেখতে পাচ্ছি ১৯২৫ সালে বিনায়ক দামোদার সাভারকার উপস্থাপিত আফগানিস্তান থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত একটি অভিন্ন উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিষ্ঠ লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত । যার কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি , অর্থনীতি ও সংস্কৃতি। শুধু তাই নয় ভারতের পানি আগ্রাসনে আজ ক্ষতবিক্ষত বাংলার বিস্তীর্ন জনপদ। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমার কথায় কথায় বাংলাদেশের আকাশ সীমা লংঘন করছে । বিশ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে এক বিরাট জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকিতে ফেলেছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার নাঁজুক দিক তুলে ধরতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, আজকে যখন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার চেয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরাপত্তা বাহিনীতে পরিণত হয়েছে , আজকে যখন দেশে বিগত ৫০ বছরে শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিসটেম প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি, প্রতিষ্ঠিত করা যায় নি জাতীয় সাইবার কমান্ড সেন্টার । সে মূহূর্তে জাতীয় নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে এমন সকল বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটাতে হবে।
এম শাহিদুজ্জামান বলেন, গেল ১৫ বছরে বাংলাদেশের সমর নীতি পুরোপুরি ভারত নির্ভর হয়ে পড়েছিল । সেনাবাহিনীর সদস্যদের ভারতে প্রশিক্ষণে বাধ্য করা হযেছিল। ন্যাশানাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স -এ আওয়ামী ক্যাডারদের নিয়োগ দিয়ে একটি দলীয় বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। এখন সময় এসেছে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার এ বিষয়গুলোর প্রতি সুভীরভাবে নজর দেওয়ার। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমার-এর কাছ থেকে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি । বিগত বছরগুলোতে মিয়ানমার সাথে আমাদের দেশ ভূল পলিসি গ্রহণ করেছিল। তাঁর মতে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে প্রস্তুত করা দরকার ছিল। এম শাহিদজ্জামান মনে করেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সহযোগিতা অত্যবশ্যকীয়।
ড. ফাহিম সূফী বলেন, গণঅভ্যন্থান পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের ৩৫০% শতাংশ তথ্য অভিযান ভেড়েছে। তিনি তাঁর বক্তব্যে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টশনের মাধ্যমে দেখিয়েছেন কিভাবে ভারত থেকে সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভূল তথ্য, অপপ্রচার পরিবেশিত হচ্ছে। ড. সুফি তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, বাংলাদেশের গণ অভ্যুত্থানের পর তথ্য অভিযানের ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে বিশেষত আওয়ামী লীগ সমর্থক ও তাদের মিত্রদের দ্বারা
পরিচালিত কার্যক্রমগুলো চোখে পড়ার মত। তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন যে, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য তথ্য অভিযানের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবেলায় কৌশলগত কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। তার সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে; ১) তথ্য অভিযান প্রতিরোধে একটি সমন্বিত জাতীয় কৌশল তৈরি করা, যা সামরিক, গোয়েন্দা, এবং জননীতি খাতের মধ্যে সমন্বয় করবে; ২) সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এবং প্রযুক্তি কোম্পানির সাথে সহযোগিতা করে দ্রুত ক্ষতিকর কন্টেন্ট এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য অপসারণ করা; ৩) বিভিন্ন বিচারব্যবস্থায় হুমকি মোকাবেলার জন্য একটি বৈশ্বিক তথ্য অভিযান টাস্ক ফোর্স নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা; ৪) আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় শক্তিশালী করা, কারণ তথ্য অভিযান প্রায়ই জাতীয় সীমানা অতিক্রম করে; ৫) তথ্য অভিযানের হুমকি পর্যবেক্ষণ ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে একটি দ্রুত প্রতিক্রিয়া দল গঠন করা; ৬. কৌশলগত যোগাযোগ এবং পাল্টা-প্রোপাগান্ডা প্রচেষ্টা বাস্তবায়ন করা, যাতে সঠিক তথ্য সরবরাহ করে বর্ননাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
উল্লেখ্য বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট এন্ড সিকিউরিটি ষ্টাডিজ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল গভর্নমেন্ট-এর রেজিষ্ট্রকিৃত সংগঠন আনসারী একাডেমি ইউএসএ-এর একটি প্রজেক্ট হিসেবে ২০২৩ সালে যাত্রা শুরু করে।
Posted ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh