রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫ | ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

আমেরিকার ঋণ এখন ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশ অনলাইন :   |   শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

আমেরিকার ঋণ এখন ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার

প্রতীকী ছবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান জাতীয় ঋণ বিশ্বজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ‘বিগ বিউটিফুল বাজেট বিল’ কংগ্রেসের অনুমোদন পাওয়ার পর এই ঋণের মাত্রা এবং এর স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচকেরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের কর-হ্রাস মূলক বাজেট বিলটি যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণে আরও অন্তত ৩ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ক্রমবর্ধমান ঋণ নিয়ে সমালোচকের অভাব নেই। এমনকি ট্রাম্পের সাবেক মিত্র ইলন মাস্কও বাজেট বিলকে ‘ঘৃণ্য জঘন্য’ বলে অভিহিত করেছেন। এই বিপুল ঋণের বোঝা দেখে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, বিশ্ব আর কতদিন ‘আংকেল স্যাম’কে ঋণ দিতে প্রস্তুত থাকবে।

এই উদ্বেগগুলো ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি ডলারের দুর্বলতা এবং আমেরিকাকে ঋণ দেওয়ার জন্য বিনিয়োগকারীদের উচ্চ সুদের হার দাবি করতে শুরু করেছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্ষিক আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য কমানোর জন্য এই অর্থ ধার করতেই হয়।

চলতি বছরের শুরু থেকে ডলারের দর পাউন্ডের বিপরীতে ১০ শতাংশ এবং ইউরোর বিপরীতে ১৫ শতাংশ কমেছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের খরচ সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে, তবে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের সুদের হার এবং স্বল্পমেয়াদি ঋণের সুদের হারের মধ্যে পার্থক্য, যা ‘ইল্ড কার্ভ’ নামে পরিচিত, তা বেড়েছে বা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এটি মার্কিন ঋণ দীর্ঘ মেয়াদে কতটা টেকসই হবে তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান শঙ্কার ইঙ্গিত দেয়।

অথচ, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের চেয়ে ধীরে সুদের হার কমিয়েছে, এতে ডলার শক্তিশালী হওয়ার কথা। কারণ, উচ্চ সুদ হারের কারণে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক আমানতে বেশি সুদ পেতে পারেন।

বিশ্বের বৃহত্তম হেজ ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা রে ডালিও বিশ্বাস করেন, মার্কিন ঋণ একটি সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি অনুমান করছেন, বর্তমান গতিতে চলতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্রকে শিগগিরই বছরে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ এবং সুদ পরিশোধে ব্যয় করতে হবে।

ডালিও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে (মার্কিন) সরকারের আর্থিক অবস্থা একটি বাঁক বদলের মুখে। যদি এখন এর মোকাবিলা না করা হয়, তবে ঋণ এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে যেখানে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে না।’

এদিকে ট্রাম্পের নতুন বাজেট বিল কিছু ব্যয় হ্রাস করলেও, কর কমানোর পরিমাণ আরও বেশি, ফলে বর্তমান রাজনৈতিক গতিপথ বিপরীত দিকে যাচ্ছে। এ ছাড়া ক্রমবর্ধমান ঋণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ ‘পারফেক্ট ক্রেডিট রেটিং’ হারিয়েছে। যদি বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়া না যায়, তবে ভবিষ্যতে তিনটি সম্ভাব্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশ্লেষকেরা।

তাঁদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সামনে প্রথম বিকল্পটি হলো সরকারি ব্যয় হ্রাস, বড় ধরনের কর বৃদ্ধি, অথবা উভয়ই। রে ডালিও পরামর্শ দিয়েছেন, বর্তমান ৬ শতাংশ থেকে বাজেট ঘাটতি দ্রুত ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা ভবিষ্যতে বড় বিপদ এড়াতে সাহায্য করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, অতীতের সংকটের মতো, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ফেডারেল রিজার্ভ) আরও বেশি ডলার ছাপিয়ে সরকারি ঋণ নিতে পারে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পরেও এমনটি করা হয়েছিল। তবে এই কৌশল মূল্যস্ফীতি এবং বৈষম্য বাড়াতে পারে, কারণ এতে বাড়িঘর এবং শেয়ারের মতো সম্পদের মালিকেরা শ্রমের মূল্যের ওপর নির্ভরশীলদের চেয়ে অনেক বেশি লাভবান হন।

তৃতীয় এবং সবচেয়ে ভয়াবহ বিকল্পটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া বা ডিফল্ট করা। অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না, তাই করছে না। এই পরিস্থিতিতে যদি মার্কিন ট্রেজারির প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থাকে সমর্থন করে, তাহলে ভয়ানক আর্থিক সংকটকেও ছোটখাটো পিকনিক বলেই মনে হবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, আপাতত, সৌভাগ্যক্রমে, এর কোনোটিই ঘটার সম্ভাবনা খুব বেশি নয়। তবে এর কারণগুলো খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। বাস্তবতা হলো, আমরা পছন্দ করি বা না করি, ডলারের খুব বেশি বিকল্প এখনো বিশ্বে নেই।

অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক বন্ড বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ এল-এরিয়ান বিবিসিকে বলেন, অনেকেই ডলার ধারণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ডলারের ভার বেশি এবং বিশ্ব এটা জানে, এ কারণেই আমরা সোনা, ইউরো এবং পাউন্ডের উত্থান দেখেছি। কিন্তু বড় পরিসরে মুদ্রা পরিবর্তন করা কঠিন, তাই যাওয়ার মতো খুব বেশি জায়গা নেই।’ তিনি ডলারকে ‘পরিষ্কারতম নোংরা শার্ট’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন, যেটি পরতেই হবে।

তবুও, ডলারের ভবিষ্যৎ এবং বিশ্বের বেঞ্চমার্ক সম্পদ—মার্কিন সরকারি বন্ড—নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর সম্প্রতি বিবিসিকে বলেছেন, মার্কিন ঋণের মাত্রা এবং ডলারের অবস্থান সম্পর্কে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি বেসেন্ট অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। তিনি মনে করেন না যে ডলার বর্তমানে মৌলিকভাবে হুমকির মুখে, তবে তিনি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন এবং এটিকে তিনি অবমূল্যায়ন করছেন না।

তবে যাই হোক, ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ একটা অকল্পনীয় সংখ্যা! যদি একজন বিত্তবান দৈনিক ১ মিলিয়ন (১০ লাখ) ডলার সঞ্চয় করেন, তাহলেও এত টাকা সঞ্চয় করতে তাঁর ১ লাখ বছর সময় লাগবে!

অর্থনীতিবিদেরা বলেন, ঋণকে একটি দেশের আয়ের শতাংশ হিসেবে দেখা বুদ্ধিমানের কাজ। মার্কিন অর্থনীতি বছরে প্রায় ২৫ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করে। যদিও এর আয়-ঋণের অনুপাত অনেকের চেয়ে বেশি, তবে জাপান বা ইতালির মতো নয়। এর পেছনে কাজ করছে বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী এবং সম্পদ সৃষ্টিকারী অর্থনীতি।

১৯৬৮ সালে উইলিয়াম এফ. রিকেনবেকার ‘ডেথ অব দ্য ডলার’ (Death of the Dollar) নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। বইয়ে তিনি বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের মর্যাদার ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। রিকেনবেকার আর নেই—কিন্তু ডলার এখনো আছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, ডলারের এই মর্যাদা এবং মূল্য একটি ঐশ্বরিক অধিকার, যার কোনো ব্যত্যয় হওয়া সম্ভব নয়!

Posted ৩:৪৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.