মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০
প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট জো বাইডেন তাঁর কেবিনেট গঠনের কাজ শুরু করেছেন। কোন পদে কাকে নিয়োগ করবেন তা এখনো চূড়ান্ত করা না হলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ সেক্রেটারী অফ ষ্টেট হিসেবে দু’জন সিনেটরের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হচ্ছেন ডেলাওয়ারের সিনেটর ক্রিস কুন ও কানেকটিকাটের সিনেটর ক্রিস মার্কি। এ প্রতিযোগিতায় ক্রিস মার্কি এগিয়ে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ এটর্নি জেনারেল বা আইনমন্ত্রীর পদে নিউইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমোর নাম শোনা গেলেও গভর্নর ক্যুমো এ ব্যাপারে সাড়া দেননি। জো বাইডেন বলেছেন যে তিনি তার কেবিনেটে কিছু রিপাবলিকানকে স্থান দেবেন। এক্ষেত্রে ওহাইয়োর সাবেক রিপাবলিকান গভর্নর জন কাসিসের নাম শোনা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য জন কাসিস এবারের নির্বাচনে জো বাইডেনকে সমর্থন করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অত্যন্ত নীতিবান ও ভদ্রলোকখ্যাত সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স জো বাইডেনের কেবিনেটে যোগ দিচ্ছেন। সিনেটর স্যান্ডার্স ডেমোক্রেটিক প্রাইমারী থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বাইডেনকে সমর্থন করে বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। তখন সাংবাদিকদের কাছে স্যান্ডার্স বলেন যে বাইডেন জয়ী হলে তার কেবিনেটে যোগ দেয়ার কথা ভাবতে অসুবিধা কোথায়? নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি জো বাইডেনের প্রচারণার ব্যয় হিসেবে একশ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়া ছাড়াও বাইডেনের পক্ষে ব্যাপক প্রচারণায় অংশ নেন। এছাড়া ম্যাসাচুসেটসের প্রভাবশালী সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ও ইলিনয়ে সিনেটর টমি ডাকওয়ার্থের নামও শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনে জয়লাভের পর তার প্রথম চ্যালেঞ্জই হচ্ছে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় মহামারীতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশটিতে কভিড-১৯ পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা। অন্যদিকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে দেশটি যে জটপাকানো পরিস্থিতিতে পড়ে গিয়েছিল, সে ঊর্ণাজাল ছিঁড়েও যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনার গুরুদায়িত্ব এখন জো বাইডেনের কাঁধে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাইডেনের প্রয়োজন হবে দক্ষ ও কার্যকর একটি মন্ত্রিসভা। এ কারণে নির্বাচন চলাকালেই নিজের সম্ভাব্য মন্ত্রিসভা নিয়ে অনেক মাথা ঘামাতে হয়েছে জো বাইডেন ও তার সহযোগীদের। উইলমিংটন ও ওয়াশিংটনে জো বাইডেনের উপদেষ্টা এবং মিত্রদের মধ্যে এ নিয়ে বাদানুবাদও হয়েছে প্রচুর। তবে সার্বিকভাবে জো বাইডেনের পরিকল্পনা হলো মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ মন্ত্রিসভা গড়ে তুলবেন তিনি। এমনকি ঠাঁই পেতে পারেন কয়েকজন রিপাবলিকান রাজনীতিবিদও।
৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্ত্রিসভায় কে কে থাকছেন, সে বিষয়ে জল্পনাকল্পনা চালু থাকতে পারে আরো কিছুদিন। তবে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে কোনো কোনো সূত্র নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছে, আসন্ন থ্যাংকসগিভিং ডের আশপাশে যেকোনো একদিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করে দিতে পারেন জো বাইডেন।
হোয়াইট হাউজে বাইডেন ক্যাবিনেটের চিফ অব স্টাফ হতে পারেন রন ক্লেইন। এর আগে বাইডেন দুই মেয়াদে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে তিনিই চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব পালন করেছেন। ওবামা প্রশাসনের আমলে হোয়াইট হাউজের ইবোলা রেসপন্স টিমের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
জো বাইডেনের অধীন প্রশাসনের রূপরেখা কী হবে, সেটি নিয়ে যারা এখন মাথা ঘামাচ্ছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা অ্যানিটা ডুন, বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ের আরেকজন চিফ অব স্টাফ স্টিভ রিচেত্তি ও রন ক্লেইন। এছাড়া বিভিন্ন পদের জন্য বাছাইকৃত নামগুলো নিয়ে জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে নিয়মিত আলোচনাও হচ্ছে।
বাইডেনের প্রচার শিবিরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে জেক সুলিভান ও অ্যান্থনি জে ব্লিনকেন প্রশাসনে খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। জেক সুলিভান আগে হিলারি ক্লিনটনের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া অ্যান্থনি ব্লিনকেন এক সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো কারা পেতে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে এরই মধ্যে নানা হিসাবনিকাশ সামনে নিয়ে আসছে মার্কিন গণমাধ্যম। জো বাইডেনের প্রতিরক্ষা বিভাগের শীর্ষ পদের জন্য এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় দাবিদার হলেন মিশেল ফ্লোরনয়। অতীতে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন ও ওবামার আমলে প্রতিরক্ষা বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। জো বাইডেন প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেলে তিনিই হতে যাচ্ছেন এ পদে আসীন হওয়া প্রথম নারী।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের শীর্ষ পদের দাবিদার এ মুহূর্তে দুজন-এলিজাবেথ ওয়ারেন ও লায়েল ব্রেইনার্ড। এর মধ্যে এলিজাবেথ ওয়ারেন তুলনামূলক প্রগতিশীল হিসেবে পরিচিত হওয়ায় রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে তার নিয়োগ অনুমোদনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সেক্ষেত্রে শিকেটা লায়েল ব্রেইনার্ডের কপালেই ছেঁড়ার সম্ভাবনা বেশি।
এলিজাবেথ ওয়ারেনের মতো অনিশ্চয়তা রয়েছে সুসান রাইসকে নিয়েও। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিজের রানিংমেট হিসেবে তাকেও বিবেচনা করেছিলেন জো বাইডেন। কিন্তু ২০১২ সালে একবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার নিয়োগ আটকে দিয়েছিল রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেট। সেক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেন ওবামা প্রশাসনের সাবেক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিনকেন। এছাড়া ডেলাওয়ারের সিনেটর ক্রিস কুনসের নামও বিবেচনায় আনা হচ্ছে। মার্কিন বিচার বিভাগের শীর্ষ নির্বাহীর পদটির জন্য এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম অ্যালাবামার সিনেটর ডোগ জোনস। সাবেক এ অ্যাটর্নির মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেশ খ্যাতি রয়েছে। এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল জ্যাভিয়ের বেচ্চেরা ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েটসের নামও বিবেচনায় রয়েছে বাইডেন ও হ্যারিসের।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের (হোমল্যান্ড সিকিউরিটি) দায়িত্ব পেতে পারেন আলেজান্দ্রো মায়োর্কা। এখানেও তার সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে জ্যাভিয়ের বেচেরার নামটি উঠে এসেছে।
এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় সংকট হলো কভিড-১৯। দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের হাত থেকে বাইডেন প্রশাসনের হাতে ক্ষমতার রূপান্তর নিয়ে আলোচনায় মহামারী মোকাবেলাই এখন গুরুত্ব পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এরই মধ্যে গত ৯ নভেম্বরই এ-সংক্রান্ত একটি উপদেষ্টা বোর্ডের নামও ঘোষণা করেছেন বাইডেন।
বোর্ডের নেতৃত্বে আছেন তিন চিকিৎসক ডেভিড কেসলার, বিবেক মূর্তি ও মার্সেলা নুনেজ স্মিথ। এদের মধ্যে ডেভিড কেসলার বুশ ও ক্লিনটন প্রশাসনের আমলে এফডিএ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু মহামারী মোকাবেলা নয়, বাইডেন প্রশাসনে যারা স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে তাদের অন্যতম হলেন বিবেক মূর্তি। বারাক ওবামা প্রশাসনের অধীনে সার্জন জেনারেলের কাজ করেছেন তিনি। মহামারী মোকাবেলার সম্ভাব্য প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরেই বাইডেনকে পরামর্শ দিয়ে এসেছেন তিনি। বোর্ডের নেতৃত্বদাতা ত্রয়ীর মধ্যে মার্সেলা নুনেজ স্মিথ ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে ইন্টারনাল মেডিসিন, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানবসেবা খাতের ভার পুরোটাই ছেড়ে দেয়া হতে পারে নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের গভর্নর মিশেল লুজান গ্রিশামের ওপর। তিনি কোনো কারণে দায়িত্ব নিতে অসমর্থ হলে মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানবসেবামন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ডা. বিবেক মূর্তি অথবা নর্থ ক্যারোলাইনার স্বাস্থ্য সচিব ডা. ম্যান্ডি কোহেন। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের দায়িত্ব নিতে পারেন মেগ হুইটম্যান। স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম কুইবির প্রধান নির্বাহী মেগ হুইটম্যান আগে ই-বে ও হিউলেট প্যাকার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানেও প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া রিপাবলিকান পার্টির হয়ে এক সময় ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর পদেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। এছাড়া এ পদে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির সাবেক চেয়ার ও জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর টেরি ম্যাকঅলিফ বা এরিয়েল ইনভেস্টমেন্টের সহ-সিইও মেলোডি হবসনকে দেখতে পেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ওবামা প্রশাসনের জ্বালানিমন্ত্রী ও নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট আর্নেস্ট মনিজ এবারো একই ভূমিকায় থাকতে পারেন। তার বিকল্প হতে পারেন জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির প্রফেসর এলিজাবেথ শেরউড-র্যান্ডাল বা স্ট্যানফোর্ডের প্রকৌশল বিভাগের প্রফেসর অর্জুন মজুমদার।
এছাড়া মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সিনেটর টম ইউডাল বা মার্টিন হেইনরিখকে নিয়োগ দিতে পারেন বাইডেন। অথবা কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টির প্রতিনিধি ডেব হ্যালান্ডকেও এ ভূমিকায় দেখা যেতে পারে। এর বাইরেও ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো হাইডি হেটক্যাম্পকে কৃষিমন্ত্রী হিসেবে, ক্যালিফোর্নিয়া লেবার অ্যান্ড ওয়ার্কফোর্স ইনস্টিটিউটের সচিব জুলি সুকে শ্রমমন্ত্রী, জ্যাকসনভিলের সাবেক মেয়র অ্যালভিন ব্রাউনকে গৃহায়ন ও নগরমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও স্কুল শিক্ষিকা লিলি এস্কেলেন গার্সিয়াকে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দেখা যেতে পারে। এছাড়া জাতিসংঘে মার্কিন প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন রাষ্ট্রদূত ওয়েন্ডি শেরম্যান অথবা ইউএস নেভি রিজার্ভের সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা পিট বুটিগিয়েগ।
Posted ১০:২২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh