বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ ২০২১
ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিবেশী কানাডা বা সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়েসহ অধিকাংশ নরডিক রাষ্ট্রের কল্যাণ রাষ্ট্র নয়, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ করে রাষ্ট্র, যার অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা। যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নততর। চিকিৎসার মান নিয়ে কারো প্রশ্ন নেই। চিকিৎসার জন্য অত্যাধুুিনক চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য সেবার মান নিয়ে সর্বমহলে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এমনকি হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গুরুতর অসুস্থ রোগীকেও ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় চিকিৎসা লাভের জন্য। এ অবস্থার মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে এমন লোকদের জন্য এবং অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক আয়, বয়স এবং আরো কিছু বিবেচনায় ফেডারেল সরকার যাদেরকে উপযুক্ত বলে বিবেচনা করেন, তাদের চিকিৎসা ব্যয়সহ আরো কিছু ব্যয় বহন করে থাকে। বিভিন্ন স্টেটে এ সুবিধার মধ্যে কিছু তারতম্য রয়েছে।
নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসকারীদের যারা তাদের চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করার প্রয়োজনীয় আয় করেন না তাদের জন্য চিকিৎসা সেবা কর্মসূচি “মেডিকেইড” নামে পরিচিত। কারো মেডিক্যাল বিল যদি অনেক বেশী হয়ে যায়, কেউ যদি ডিপার্টমন্ট অফ সোস্যাল সার্ভিসেস থেকে সাপ্লিমেন্টাল সিকিউরিটি ইনকাম গ্রহণ করেন, এমনকি কারো যদি কোন নির্দিষ্ট আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে হয় তাহলে মেডিকেইড থেকে তা পূরণ করা হয় এবং এ ধরণের ব্যক্তি মেডিকেইড সুবিধা লাভের যোগ্য বলে বিবেচিত। কে বা কোন পরিবার কোন ধরণের সরকারি স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচির আওতায় আসবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য অনলাইনে নিউইয়র্ক পাবলিক হেলথ ইন্স্যুরেন্স এলিজিবিলিটি স্ক্রিনিং টুল ব্যবহার করতে পারেন। যারা মেডিকেইডের জন্য আবেদন করার যোগ্য বলে বিবেচনা করছেন তারা সরাসরি ফোন করে, লিখে বা স্থানীয় ডিপার্টমেন্ট অফ সোস্যাল সার্ভিস অফিসে গিয়ে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে নিজে অথবা তালিকাভুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন।
অনলাইনে ‘একসেস এনওয়াই হেলথ কেয়ার এপ্লিকেশন’ পূরণ করে সরাসরি বা ডাকযোগেও আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। নিউইয়র্ক নিউইয়র্ক সিটিতে ৭১৮-৫৫৭-১৩৯৯ ফোনে হিউম্যান রিসোর্সেস এডমিনিস্ট্রেশন এ ফোন করে অথবা সিটির পাঁচটি বরোতে বসবাসকারীরা ১-৮৭৭-৪৭২-৮৪১১ এ ফোন করে এ সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারেন। তারা তাদের আবেদনপত্র ইনিশিয়াল এলিজিবিলিটি ইউনিট, আরএইচআরএ/মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম, পোস্ট বক্স: ২৭৯৮, নিউইয়র্ক ১০১১৭-২২৭৩। গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের পক্ষে তাদের অভিভাবকরা নির্দিষ্ট ক্লিনিক ও হাসপাতালেও মেডিকেইডের জন্য আবেদন করতে পারেন।
আবেদন করার জন্য প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া আবশ্যক এবং তার বৈধ সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর থাকতে হবে। নাগরিকের জন্য আর কোন প্রমাণের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যারা অভিবাসী নাগরিক তাদেরকে নাগরিক হওয়ার প্রমাণ অর্থ্যাৎ এন-৫৫০ অথবা এন-৫৭০ বা যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট দেখাতে হবে। কারো যদি ‘এলিয়েন স্ট্যাটাস’ হয় তার প্রমাণ, সকল উৎস থেকে আয়ের প্রমাণ ইত্যাদি প্রদর্শন করতে হবে। কোথায় বসবাস করেন, আবেদনকারীকে সে সম্পর্কেও প্রমাণ দিতে হবে।
কারো যদি স্বাস্থ্য বীমা বা মেডিকেয়ার কভারেজ থাকে, কিন্তু বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে পারছেন না, তাহলে বিশেষ পরিস্থিতিতে মেডিকেইড প্রিমিয়াম পরিশোধ করবে, এমনকি তিনি যদি মেডিকেইড বেনিফিটের উপযুক্ত বলে বিবেচিত নাও হন। কেউ যদি তার চাকুরি হারান বা কর্মঘন্টা কমিয়ে দেয়া হয় তাহলে তার ক্ষেত্রে মেডিকেইড সুবিধা প্রযোজ্য। এইডস আক্রান্ত রোগীরা মেডিকেইড সহযোগিতা নিয়ে তাদের স্বাস্থ্য বীমা পরিশোধ করতে পারেন। কে মেডিকেইড সুবিধা পেতে পারেন তা নির্ভর করে তার আয়ের উপর। কারো ব্যক্তিগত বার্ষিক আয় যদি ১৩,৮০০ ডলারের নিচে হয় এবং কোন পরিবারের আয় যদি ২০,১০০ ডলারের নিচে হয় তাহলে তারা মেডিকেইডের জন্য আবেদন করতে। অন্ধ বা অন্য ধরণের শারীরিক প্রতিবন্ধী অথবা ৬৫ বছরের উপর বয়সীদের বার্ষিক আয় ও সম্পদের পরিমাণ অধিক হলেও তাদেরকে মেডিকেইড সুবিধা দেয়া হয়। প্রতিবছর মেডিকেইড সুবিধাভোগীদের আয়ের পরিমাণে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়ে থাকে। কারো যদি গাড়ি, বাড়ি বা অন্য সম্পত্তি থাকে, তাহলে তারাও অনেক ক্ষেত্রে মেডিকেইড সুবিধা পেতে পারেন। কোন বয়স্ক নাগরিকের আয় এবং সম্পদের পরিমাণ যদি বেশী থাকে তাহলে তিনি মেডিকেইডের উপযুক্ত বিবেচিত না হলেও ‘ফ্যামিলি হেলথ প্লাস’ বা ফ্যামিলি প্ল্যানিং বেনিফিট প্রোগ্রামের জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হতে পারেন। কোন শিশুর আয় যদি অধিক হয় এবং মেডিকেইডের উপযুক্ত না হয়, তাহলে তার উপযুক্ততা ‘চাইল্ড হেলথ প্লাসের’ জন্য।
মেডিকেইড আবেদনপত্রের একটি পৃষ্ঠায় “টার্মস, রাইটস এন্ড রেসপনসিবিলিটিস” এ উল্লেখ করা রয়েছে যে একজন মেডিকেইডপ্রাপ্ত কি কি অধিকার লাভ করবেন, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গোপনীয়তার অধিকার। আবেদনকারী মেডিকেইড লাভের যোগ্য কিনা তা যাচাই করে আবেদন গৃহীত বা বাতিল হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয় আবেদনপত্র জমা দেয়ার ৪৫ দিনে মধ্যে। গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের ক্ষেত্রে আবেদন করার ৩০ দিনের মধ্যে জানানো হয়। প্রতিবন্ধীত্বের ক্ষেত্রে যেহেতু পরীক্ষানিরীক্ষার বিষয় জড়িত থাকে সেজন্য তাদের তাদের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত জানাতে সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত লাগতে পারে। স্থানীয় সোস্যাল সার্ভিস ডিস্ট্রিক্টের সিদ্ধান্তে কোন আবেদনকারী সন্তুষ্ট না হলে তাহলে তিনি এ বিষয়ে শুনানীর জন্য নিউইয়র্ক স্টেট অফিস অফ টেম্পোরারি এন্ড ডিসএবিলিটি এসিস্ট্যান্সে শুনানির জন্য অনুরোধ জানাতে পারেন।
মেডিকেইডের আওতায় সাধারণভাবে স্বাস্থ্য সেবা ও দাঁতের চিকিৎসা, হাসপাতাল সেবা, ল্যাব ও এক্সরে সার্ভিস, হোম হেলথ এজেন্সী ও পার্সোনাল কেয়ার, ২১ বছর বয়সের নিচে বা ৬৫ বছর বা তদুর্ধ বয়সের লোকদের মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা, হাসপাতালে পরিবহন, শিশু স্বাস্থ্য সেবা এবং আরো কিছু স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হতে পারে। কিন্তু বয়স, আর্থিক অবস্থা, পারিবারিক অবস্থা, সম্পদ স্থানান্তর অথবা বসবাসের অবস্থা বিবেচনা করে মেডিকেইডের আওতা থেকে অনেক সুবিধা বাদ যেতে পারে, আবার কোন কোন সেবায় ক্ষেত্র বিশেষে সামান্য কো-পেমেন্ট দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। কোন বীমা প্ল্যানের মধ্যে থাকলে শুধুমাত্র ফার্মেসি সার্ভিস ছাড়া কো-পেমেন্ট দেয়ার প্রয়োজন নাও পড়তে পারে। কেউ মেডিকেইডের যোগ্য বিবেচিত হওয়ার পর তিনি একটি বেনিফিট আইডেনটিফিকেশন কার্ড পাবেন, যা মেডিক্যাল সার্ভিসের জন্য আবশ্যক। কার্ডটি সযত্নে সংরক্ষঘঘণ করতে হবে। মেডিকেইড সম্পর্কে কারো কোন প্রশ্ন থাকলে তারা গবফরপধরফ@যবধষঃয.ংঃধঃব.হু.ঁং এ মেইল করতে পারেন। তাদেরকে অবশ্যই ফোন নম্বর দিতে হবে, যাতে ডিপার্টমেন্ট অফ সোস্যাল সার্ভিসেস এর পক্ষ থেকে অবিলম্বে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।
Posted ৮:১১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh