রবিবার, ৫ মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

কমলা হ্যারিসের ইতিহাস

বাংলাদেশ ডেস্ক :   |   বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০

কমলা হ্যারিসের ইতিহাস

ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন কমলা হ্যারিস। শুধু তাই নয়, ৫৫ বছর বয়সী এ রাজনীতিকই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত কোনো ব্যক্তি হিসেবে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। নির্বাচনে জয়ী হয়ে আমেরিকার আড়াইশ বছরের ইতিহাসে প্রথম কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক এ সিনেটর। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয় নিশ্চিত করেছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। পদ্ধতিগত কারণে ভোট গণনায় বিলম্ব আর প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানদের মামলায় চার দিন ঝুলে থাকার পর গত ৭ নভেম্বর পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ২০টি ইলেকটোরাল ভোট জিতে চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত হয় তার। এরপর নেভাডার ৬টি ইলেকটোরাল ভোটও যোগ হয়। সিএনএন ও ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল তাদের প্রজেকশনে এই তথ্য জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যম দুটির হিসাবে বাইডেন ইতিমধ্যে ২৯০টি ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত করেছেন। আর বাইডেনের জয় নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে কমলাই হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

নির্বাচিত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়ার পর এক টুইট বার্তায় কমলা হ্যারিস তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এতে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন আমার বা জো বাইডেনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি যুক্তরাষ্ট্রের আত্মা ও আমাদের লড়াইয়ের আকাক্সক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের সামনে অনেক কাজ পড়ে আছে। চলুন আমরা শুরু করি।’ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ পর্যন্ত মাত্র দুজন নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে লড়েছেন। এরমধ্যে রয়েছেন ২০০৮ সালে রিপাবলিকান পার্টির হয়ে সারা পলিন এবং ১৯৮৪ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জেরালডিন ফেরারো। তবে তাদের কেউই নির্বাচিত হতে পারেননি। এদিকে কোনো কারণে বাইডেন তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতা ছেড়ে দিলে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পাবে যুক্তরাষ্ট্র। সেটা হবে আরও বড় রেকর্ড। এছাড়া ৭৭ বছর বয়সী বাইডেন হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া সবচেয়ে বয়সী রাজনীতিক। যে কারণে এক মেয়াদের বেশি তার হোয়াইট হাউজে থাকার সম্ভাবনা কম বলে ধারণা করছেন অনেকেই। সে ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসের সম্ভাবনাই সবচেয়ে উজ্জ্বল বলেও মত পর্যবেক্ষকদের।


প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে রানিংমেট : গত বছরই বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কমলা হ্যারিস। দুজনেই লড়েছিলেন দলীয় মনোনয়ন পেতে। ওই দৌড়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল কমলা হ্যারিসের। অবশ্য এরপর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি ভারতীয়-জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত এই নারীকে। এ বছরের আগস্টেই তিনি পেয়ে যান প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বড় দলের হয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার টিকিট। আর নিজ দলের মনোনয়নের লড়াইয়ে যার দিকে সবচেয়ে বেশি বার ছুড়েছিলেন তীক্ষè বাক্যবাণ, সেই বাইডেনকে সঙ্গে নিয়েই কমলাকে নামতে হয় বিপক্ষ শিবিরের ডোনাল্ড ট্রাম্প-মাইক পেন্স জুটিকে হারানোর যুদ্ধে।

প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন লড়াইয়ের শুরুর দিকে কমলাকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এবং ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হয়েছিল। এক বিতর্কে বাইডেনকে অতীতের নেওয়া বেশকিছু সিদ্ধান্ত এবং সম্প্রদায়গত বিভিন্ন ইস্যুতে নাজেহাল করে ছেড়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই নারী। সে সময় জনমত জরিপগুলোতে কমলার অবস্থান একটু একটু করে শক্তিশালী হতে দেখা গেলেও ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে তার জনপ্রিয়তায় ভাটা দেখা দেয়। কমলার প্রচারণা শিবিরেও দেখা দেয় নানান জটিলতা। পরে ডিসেম্বরে মনোনয়ন দৌড় থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন কমলা।


সমালোচকদের মতে, আইন ও বিচার বিভাগের মতো জায়গায় কাজ করা ক্যালিফোর্নিয়ার এ সিনেটর ডেমোক্র্যাটদের প্রগতিশীল ও উদারপন্থি অংশের মূল বিরোধের জায়গাগুলো এড়িয়ে সাবধানে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। সেটা তো হয়ইনি, উল্টো দুইপক্ষের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা হারাতে হয়েছিল তাকে। সে কারণে ডিসেম্বরে আইওয়ায় ডেমোক্র্যাট দলের প্রথম ককাসের আগেই লড়াই থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন কমলা। মনোনয়ন লড়াই থেকে ছিটকে পড়ার পর চলতি বছরের মার্চে কমলা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে সমর্থন দিয়ে বলেন, ‘তাকে (বাইডেন) যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট করতে সাধ্যের সবটাই করব।’ চলতি বছরের মে মাসে মিনিয়াপোলিসে পুলিশি হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর থেকে ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলার নাম সামনের দিকে চলে আসে। ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের যে কয়জন রাজনীতিবিদ সমাজ ও বিচারব্যবস্থায় সংস্কারের দাবিতে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন, কমলা ছিলেন তাদের একজন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ আগস্ট কমলা হ্যারিসকে নির্বাচনী জুটি হিসেবে বেছে নেন বাইডেন।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা : কমলার বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস জ্যামাইকান। অর্থনীতির এই অধ্যাপক একসময় পড়িয়েছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। কমলার মা ক্যানসার গবেষক শ্যামলা গোপালান ভারতীয় এক কূটনীতিকের মেয়ে। জ্যামাইকার এক জোতদার পরিবারে বাবার দিককার এক দাদির কাছে বেড়ে ওঠা ডোনাল্ড হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রে বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন ১৯৬১ সালে। এখানেই তার পরিচয় হয় শ্যামলার সঙ্গে। এরপর প্রেম, সংসার। কমলা এই দম্পতির প্রথম সন্তান। ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর তার জন্ম ওকল্যান্ডে। কমলার নামের শেষাংশ বাবার কাছ থেকে নেওয়া, প্রথমটুকু মায়ের দেওয়া। কমলার ৭ বছর বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। এরপর দুই মেয়েকে নিয়ে শ্যামলার সংগ্রামী জীবন শুরু হয় বার্কলের একটি হলুদ ডুপ্লেক্স ভবনের উপরের তলায়। মেয়েরা যেন নিজেদের শেকড় ভুলে না যায় সেদিকে ছিল ভারতীয় এ নারীর তীক্ষè দৃষ্টি। মায়ের কারণেই শৈশবে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য বানানো ব্যাপটিস্ট চার্চ এবং হিন্দু মন্দির দুই জায়গাতেই কমলা ও মায়ার যাতায়াত ছিল নিয়মিত। শ্যামলা গোপালান কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি নিলে কমলা-মায়াকে মায়ের সঙ্গে বেশকিছু কাল মন্ট্রিয়লেও থাকতে হয়েছিল।


যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি পড়ার পর কমলা হেস্টিং কলেজ থেকে আইনে ডিগ্রি নেন। ১৯৯০ সালে তিনি ওকল্যান্ডে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ২০০৪ সালে সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হন। ২০১০ সালে সামান্য ব্যবধানে জয়ী হয়ে হন ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনিই প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ-আমেরিকান। দ্বিতীয় মেয়াদে বারাক ওবামাকে প্রার্থী করা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ২০১২ সালের ন্যাশনাল কনভেনশনে অসাধারণ বক্তৃতা দিয়ে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের নজর কাড়েন কমলা। অবশ্য ওবামার সঙ্গে কমলার সখ্য বেশ পুরনো। ২০০৪ সালে ওবামা সিনেটর হওয়ার আগে থেকেই একে অপরের পরিচিত তারা। ২০০৮ সালে ওবামা প্রেসিডেন্ট পদের মনোনয়ন দৌড়ে নামলে তাকে সমর্থন দেওয়া সরকারি পদধারী ব্যক্তিদের তালিকায়ও কমলা ছিলেন প্রথম।

২০১৪ সালে আইনজীবী ডগলাস এমহফের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন কমলা। এর দুই বছর পর সিনেট নির্বাচনে সহজে জয়লাভ করে তিনি পা রাখেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উচ্চকক্ষে। প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, আফ্রিকান-আমেরিকানদের মধ্যে দ্বিতীয় মার্কিন সিনেটর হওয়ার আগে নির্বাচনী প্রচারণায় কমলা অভিবাসন ও বিচার প্রক্রিয়ার সংস্কার, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, নারীর প্রজনন অধিকার নিয়ে ছিলেন ব্যাপক সোচ্চার। সিনেটের সিলেক্ট কমিটি অন ইন্টেলিজেন্ট ও জুডিসিয়ারি কমিটির সদস্য কমলা কংগ্রেসের বিভিন্ন শুনানিতে ধারাল, বুদ্ধিদীপ্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও দ্রুত খ্যাতি অর্জন করেন।

advertisement

Posted ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.