বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২২
নিউইয়র্ক টাইমসে সম্প্রতি প্রকাশিত এক নিবন্ধের শিরোনামা ছিল: “আপনার যদি কোভিড হয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে ভ্যাকসিন নিতে হবে?” এতে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, কোভিড সংক্রমিত হয়ে আরোগ্য লাভের পরও ভ্যাকসিন গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণই সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার এই মতামতকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করার পর একজন সাইকিয়াট্রিষ্টের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে ভ্যাকসিনের পক্ষে যুক্তির বিপরীতে যুক্তি থাকলেও বৈজ্ঞানিক কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না যে ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভ্যাকসিন নিতেই হবে। অথবা ভাইরাস থেকে জবরদস্তিমূলক বিধিনিষেধ আরোপ করেও যে কাংখিত ফললাভ সম্ভব বা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, এমন ধারণারও যথার্থ ভিত্তি নেই, বিশেষ করে তাদের জন্য ভ্যাকসিন প্রয়োগের তেমন জরুরী কোন প্রয়োজন নেই যাদের ইম্যুইনিটি অর্থ্যাৎ যাদের শরীর ভাইরাস প্রতিরোধের সক্ষমতা সম্পন্ন, তাদের ভ্যাকসিন নেয়ার আবশ্যকতা নেই। তাছাড়া কোভিড ভ্যাকসিন নিতে কেউ যদি অস্বীকৃতি জানায় তাহলে তাকে আইনত ভ্যাকনি নিতে বাধ্য করার সুযোগ নেই।
আমেরিকান চিকিৎসক-বিজ্ঞানি এবং খ্যাতনামা ইমিউনোলজিষ্ট বা রোগ প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ, যিনি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি এণ্ড ইনফেকশাস ডিজিস এর ডাইরেক্টর এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রধান মেডিকেল এডভাইজার ডা: অ্যান্থনি ফাউচি ‘ন্যাচারাল ইমিউনিটি’ নিয়ে যে বিতর্ক ওঠেছে, সে সম্পর্কে সম্প্রতি বলেছেন, এ সম্পর্কে তার সুনির্দিষ্ট কোন উত্তর না থাকার অর্থ এমন নয় যে জনগণকে প্রাকৃতিকভাবে ইমিউনিটি লাভ করা সম্পর্কিত নয় অথবা তারা ইমিউনিটির যুক্তিতে ভ্যাকসিন না নিয়ে কোভিড সংক্রমিত হচ্ছে কিনা সেটিও গুরুত্বপূর্ণ নয়। যারা ইতোমধ্যে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে নিরাময় লাভ করেছে আমরা তাদের ইমিউনিটির পর্যায় নিয়ে কথা বলছি যে তাদের সঙ্গে ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তিদের ইমিউনিটির তুলনা করছি।
প্রায় দেড় বছর কোভিড ১৯ কারণে আমেরিকায় সৃষ্ট অচলাবস্থা, লকডাউন, কর্মী ছাঁটাই ইত্যাদি পর্যায় পার হওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসছিল এবং ইতিপূর্বে আরোপিত বিধিনিষেধগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছিল, তখন বিস্তার লাভ করতে থাকে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট, ডেল্টার সংক্রমণ যখন তুঙ্গে তখন আতঙ্ক হিসেবে দ্রুত সংক্রমণ ঘটতে থাকে নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রণের। শেষোক্ত ভেরিয়েন্ট এত দ্রুত সংক্রমণশীল যে নিউইয়র্ক সিটির মত জনবহুল ও ব্যস্ত সিটিতে বসবাসবাসকারী খুব কম পরিবার আছে যে পরিবারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া বা আরোগ্য লাভ করা সদস্য নেই।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ফেডারেল এজেন্সি সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন-সিডিসি নতুন গাইডলাইন অনুসরণ করে সিটির বাসিন্দা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ অবস্থায় অনেক প্রতিষ্ঠান আবারও তাদের কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে, প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সময় হ্রাস করেছে। বড় প্রতিষ্ঠানে অধিকাংশ নির্বাহী ‘ওয়ার্ক ফর হোম’ পদ্ধতিতে কাজ করছিল এবং জানুয়ারিতে সশরীরে অফিসে উপস্থিত হয়ে কাজ করতে পারবে বলে ধারণা করলেও নতুন করে দেশজুড়ে আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে মনে হচ্ছে না যে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেে প্রতিষ্ঠানগুলোতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে তাদের কর্মীরা কাজ করতে পারবে। দেশে অধিকাংশ পাবলিক স্কুল চালু হলেও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো বন্ধ রয়েছে, তাতে পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে আঁচ করা যায়।
এফডিএ’র কাছে পেশ করা ডাটা অনুসারে দেখা যায়, এক ব্যক্তি জনসন এন্ড জনসনের ভ্যাকসিন নেয়ার পর ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে ৬৭ শতাংশ নিরাপত্তা দেয়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক ইমিউনিটি পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার বিরুদ্ধে ৯৯ শতাংশ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু সংক্রমিত লোককে বুষ্টার ডোজ নেয়া কর্মীকে কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলেও প্রাকৃতিক ইউমিউনিটি বা সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্নকে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হচ্ছে না, ভ্রমণ করতে দেওয়া হচ্ছে না ইত্যাদি। সিডিসি’র নীতিতে প্রাকৃতিক ইমিউনিটিকে অস্বীকার করে এটিকে বিজ্ঞানসুলভ নয় বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। কোভিড এর ক্ষেত্রে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পরিসংখ্যানে ৫০ বছরের কমবয়সীদের ক্ষেত্রে সেরে ওঠার হার ৯৯.৯৯৮%।
Posted ৭:১১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh