জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি) এর জামিয়া কোরআনিয়া একাডেমীর ১৭তম হিফজ গ্রাজুয়েশন গত ৯ আগষ্ট, রোববার জেএমসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে জামিয়া কোরআনিয়া একাডেমী থেকে হিফজে সাফল্য অর্জনকারীদের সনদ ও পাগড়ি উপহার দেওয়া ছাড়াও হিফজের বিভিন্ন পর্যায়ে সাফল্য অর্জনকারীদের করা হয় পুরস্কৃত। অনুষ্ঠানে এবার ৬ জন শিক্ষার্থী কোরআনে হাফিজ হিসেবে গ্র্যাজুয়েশন প্রাপ্ত হন। এরা হলেন হাফিজ রেহান আহমেদ, হাফিজ শফিউল খন্দকার, হাফিজ সামির মাহমুদ, হাফিজ তালহা রহমান, হাফিজ সামিন ভূইয়া ও হাফিজ মোহাম্মদ হাসান। এ পর্যন্ত জেএমসি’র জামিয়া কোরআনিয়া একাডেমী থেকে মোট ৮৯ জন ছাত্র হিফজ সম্পন্ন করলেন।

সকাল ১০টায় চার পর্বে বিভক্ত গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রথম পর্ব পরিচালনা করেন জেএমসি’র সেক্রেটারী মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সদ্য গ্র্যাজুয়েশন প্রাপ্ত হাফিজ মোহাম্মদ হাসান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেএমসির প্রেসিডেন্ট ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোজাফফর। আল মামু’র স্কুলের চেয়ারম্যান খাজা মিজান হাসান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপদেশমূলক বক্তব্য রাখেন। পবিত্র কোরআনের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন হাফিজ সামিন ভূঁইয়া।
জামিয়া কোরআনিয়া একাডেমীর শিক্ষক শেখ জুনায়েদ আহমেদ পরিচালনা করেন দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্যায়ে হাফিজ এবং আলীম কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম বর্ষ আলীম কোর্সের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন যথাক্রমে আব্দুর রহমান, উমায়ের আহমেদ ও ফাহিম। দ্বিতীয় বর্ষ আলীম কোর্সের পুরস্কার পেয়েছে মুরশেদ খান, সাজ্জাদ আবদীন ও রাহিদ চৌধুরী। হিফজ ক্লাশ-‘এ’ তে পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন শফিউল খন্দকার, সামির মাহমুদ ও মোহাম্মদ হাসান। হিফজ ক্লাশ ‘বি’ তে পুরস্কার পেয়েছে আহমেদ নভো, সাইয়িদ এহসান ও নোহান রাকিন। হিফজ ক্লাশ ‘ডি’তে পুরস্কার পেয়েছে ডায়ান ইসলাম, ইলিয়াস খান ও জাবির আল রিদওয়ান। নাজারাহ কøাশে পুরস্কার প্রাপ্তরা হলো-মুনজির মোনায়ার, এহতিশাম আফনান ও মাজারুল হায়দার।

তৃতীয় পর্ব পরিচালনা করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক শেখ শহীদুল হক। এ পর্বে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন জেএমসি’র পরিচালক ইমাম শামসি আলী। এছাড়া প্রথম থেকে নবম গ্রেড পর্যন্ত ফাইনাল পরীক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হয়। শিক্ষক শেখ আকিব চৌধুরীর পরিচালনায় ৪র্থ পর্বে সদ্য হিফজ গ্র্যাজুয়েশন প্রাপ্ত ৬ জনকে পাগড়ি প্রদান করা হয়। বক্তব্য রাখেন জেএমসি’র ইমাম মাওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ। উপস্থিত অতিথি, শিক্ষক ও কর্মকর্তাগণ শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। আর এরা হলেন, ইমাম মাওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ, ইমাম শামসী আলী, হাফিজ মামুনুর রশীদ, হাফিজ আবু সুফিয়ান, হাফিজ জাহিদুল ইসলাম, হাফিজ শহিদুল হক, শেখ জুনায়েদ আহমেদ, শেখ আকিব চৌধুরী, সৈয়দ আবু মোজাফফর, ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান, খাজা মিজান হাসান, মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, বাবুল মজুমদার, হুমায়ুন খান, বজলুল হক, ফকরুল ইসলাম দেলোয়ার ও শাহাদাত হোসেন।

পবিত্র কোরআন ও ধর্মীয় শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করে নূতন প্রজন্মকে এ শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে অভিভাবকদের আরো যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান তারা। বক্তাগণ বলেন, আমাদের কর্মসূচীর লক্ষ্য হচ্ছে চার বছরের মধ্যে কোরআন হিফজ সম্পন্ন করা। এসময়ে নিউইয়র্ক বোর্ড অব এডুকেশন এর একাডেমিক কারিকুলামে অন্তর্ভূক্ত অন্যান্য বিষয়ের পাঠও দেয়া হয়। হিফজ স্কুলের ছাত্ররা সিটিওয়াইড টেস্ট ও টেরানোভা টেস্টের জন্য জেএমসি’র অন্য প্রতিষ্ঠান আল মামুর স্কুলের সাথে তালিকাভূক্ত হয়। যাতে তারা বোর্ড অব এডুকেশনের শিক্ষার দিক থেকে কোনভাবেই পিছিয়ে না থাকে। হিফজ স্কুল থেকে বের হয়ে তারা সিটির স্পেশালাইজ্্ড স্কুলগুলোতে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতা করছে। সেখানেও ভর্তির ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে আছে বলে উল্লেখ করেন বক্তাগণ। উল্লেখ্য জেএমসি’র হিফজ স্কুল থেকে যারা হাফিজ হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা ইতোমধ্যে ুুুনিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং অনেক ইসলামি সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দিচ্ছেন। মাদ্রাসায় লেখাপড়া করলে শুধু মসজিদে ইমামতিই নয় এখন ছাত্ররা প্রচলিত ধারার অনেক ক্ষেত্রে ভালো চাকুরি করছেন। জামিয়া কোরানিয়া একাডেমীর প্রিন্সিপাল হাফিজ মুজাহিদুল ইসলাম দোয়া পরিচালনা করেন। গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ অংশ নেন।