বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৩
ম্যানহাটানের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে জিহানের আঁকা ম্যূরাল।
নিউইয়র্ক সিটির হেলথ এন্ড হসপিটালস বিভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন হাসপাতালগুলোতে ম্যুরাল আঁকার জন্যে ১০ জন শিল্পীকে নির্বাচন করেছে। নির্বাচিতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত শিল্পী জিহান ওয়াজেদ।
সিটির কুইন্সের হাসপাতালে মুর্যাল আঁকবেন জিহান। নিউইয়র্ক সিটি কেন্দ্রিক শিল্পী জিহান চিত্রাঙ্কন ছাড়াও ভাস্কর্য, কোরিওগ্রাফি এবং সৃজনশীল নতুন মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত। তিনি সিটির জ্যামাইকায় বেড়ে উঠেন। তার শিল্পকর্ম দেয়াল চিত্র ও নৃত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং তিনিই প্রথম অগ্রবর্তী বাস্তববাদী শিল্পী, যাকে হেলথ এন্ড হসপিটালস কমিউনিটি ম্যুরাল প্রকল্পের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। এ বিভাগের আর্টস ইন মেডিসিন প্রোগ্রাম গতকাল বুধবার তাদের কমিউনিটি ম্যুরাল প্রজেক্টের জন্য শিল্পী নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেছে। ১৩০ জন আবেদনকারীর মধ্য থেকে এই ১০ শিল্পীকে নির্বাচন করা হয়েছে।
কমিউনিটি ম্যুরাল প্রকল্প হাসপাতালের সিটির নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশেও অবদান রাখে বলে প্রকল্পটি ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। উল্লেখ্য, সিটির হেলথ এন্ড হসপিটালস নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে বৃহৎ শিল্প সংগ্রাহক হিসেবেও সমাদৃত, যাদের সংগ্রহে ৭,০০০ এর অধিক শিল্পকর্ম রয়েছে এবং কোনো কোনো ঐতিহাসিক ম্যুরালের জন্য খ্যাতনামা শিল্পীদের কমিশন করা হয়েছে।
এ প্রকল্প শুরু হয়েছিল ১৯৩০ এর দশকে ওয়ার্কস প্রগ্রেস প্রশাসনের আওতায় এবং এ প্রকল্পের অধীনে হাসপাতালগুলোতে স্থাপিত হয়েছে শিল্পকর্ম, মোজাইক, আলোকচিত্র, স্থাপত্য, ম্যুরাল। এসব কর্মে অবদান রেখেছেন আমেরিকার বহু নেতৃস্থানীয় শিল্পী, যাদের অন্যতম জ্যাকব লরেন্স, বোমারে বিয়ারডন, হেলেন ফ্রাঙ্কেনথালের, ম্যারি ফ্র্যাঙ্ক, বেটি ব্লেটন, ক্যানিডা আলভারেজ প্রমুখ। শিল্পকর্ম সংগ্রহের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো এই কাজগুলো এক নিরাময় পরিবেশ সৃষ্টি করে, দৃষ্টিসুখের সৃষ্টি করে। সিটি হেলথ এন্ড হসপিটালস এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চিফ কোয়ালিটি অফিসার এরিক ওয়ে, এমডি বলেছেন, আমাদের রোগী, তাদের পরিবার এবং আমাদের কর্মীদের নিরাময় সংস্কৃতিতে উৎসাহিত করার কৌশল হিসেবে আমরা শিল্পকর্মগুলোকে করিডোর, ক্লিনিক ও স্টাফদের বিচরণের জায়গায় স্থাপন করি, যা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
উল্লেখ্য জিহান ওয়াজেদের স্টুডিও ম্যানহাটানের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে। তার অন্যতম শিল্প কর্মের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবন, নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স বিলি জিন কিং ন্যাশনাল টেনিস সেন্টার, এস্টোরিয়ায় ১৭৭ ফিট দীর্ঘ ম্যুরাল ‘ওয়েলকাম এস্টোরিয়া’ মুর্যালটি অন্যতম। এছাড়া নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন বরোতে বড় বড় মুরাল্য অঙ্কণ করেছেন জিহান ওয়াজেদ। মুর্যাল ছাড়াও নিউইয়র্কে ম্যানহাটানস্থ গ্যালারীতে তার বেশ কয়েকটি একক চিত্র প্রদর্শনী ব্যাপক সাড়া জাগায় মুলধারার দর্শকের মাঝে। মিকৌলে অনারি জিহান ওয়াজেদ বারুখ কলেজ থেকে পারসেপচুয়াল সাইকোলজিতে গ্রাজুয়েশন করলেও তার মনোযোগ একমাত্র ছবি আঁকায়।
স্টুডিওতে ছবি আঁকার পাশাপাশি তার নিজস্ব স্টাইলে ম্যুরাল আঁকছেন দেয়ালে। কারণ তার প্রাথমিক আগ্রহ ছিল গ্রাফিটি আঁকায়। কিন্তু গ্রাফিটি আঁকা আইনসিদ্ধ নয়। তার গ্রাফিটি থেকেই তিনি খুঁজে নিয়েছেন ম্যুরালের নিজস্ব ও নূতন ধারা। তার এই ধারাকে পছন্দ করছে শিল্পের শহর নিউইয়র্কেও শিল্পবোদ্ধারা। বিশেষ করে তার উজ্জ্বল অথচ শুদিং রঙের ব্যবহার, কার্ভ ও স্ট্রোক যে নতুন মাত্রা তৈরি কওে তার চূড়ান্ত প্রকাশ দৃষ্টি আকর্ষণীীয়। এই সব ম্যুরালের দীর্ঘস্থায়ী মূল্য নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকলেও অন্তত কিছুকাল তা চোখ ও হৃদয়কে প্রশান্তি দেবে বা চেতনায় দোলা দেবে।
সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খানের ছেলে জিহান ওয়াজেদ তার কাজে সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবেই লাল এবং সবুজ পাশাপাশি ব্যবহার করেন। কেন করেন? সকলের কাছেই তা বোধগম্য। তাহলো এই লাল ও সবুজ বাংলাদেশের পতাকার রঙ। বাংলাদেশ তাই তার ম্যুরালে প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে। নিউইয়র্ক সিটিতে এইভাবেই জিহান বাংলাদেশীদের গর্বিত করে চলেছেন।
Posted ১:০৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh