বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৪ আগস্ট ২০২২
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত চরদিনব্যাপী নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা গত ৩১ জুলাই রোববার সমাপ্ত হয়েছে। গত ২৮ জুলাই “বই হোক বিশ্ব বাঙালির মিলন সেতু” প্রতিপাদ্য নিয়ে বইমেলা শুরু হয়েছিল। নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা ছাড়া আশপাশের স্টেটগুলো এবং দূরের স্টেট, কানাডা, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকেও আগ্রহীরা এসে বইমেলায় অংশগ্রহণ করেন। বইপ্রেমীদের ভিড়, বই বিক্রি, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জমজমাট ছিল কুইন্সের জ্যামাইকা এভিনিউয়ের ওপর অবস্থিত জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টার প্রাঙ্গণ। বইমেলার জন্য প্রথমবারের মত উন্মুক্ত অঙ্গনকে সকলেই পছন্দ করেন।
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিৎ সাহা জানান, মেলায় এবার বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সব মিলিয়ে ২০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে মেলায় বেচা-বিক্রিও হয়েছে প্রত্যাশা অনুযায়ী। তিনি বলেন, এবারের মেলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য খোলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হওয়া। ফলে মানুষের অংশগ্রহণে মেলা হয়ে ওঠে আরো প্রাণবন্ত। ঢাকা থেকে অংশ নেওয়া অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক বলেন, কোভিড-পরবর্তী সময়ে কার্যকর মেলা করা যায়নি। এবার সেই আক্ষেপ ঘুঁচলো। মেলায় বিক্রিও বেশ ভালো হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, মূলত বাংলা একাডেমি, কলকাতার মেলার পর নিউইয়র্কের এ মেলাই বাংলা ভাষার অন্যতম বইমেলা। ফলে এর আকর্ষণ অন্য রকম। গত ২৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৩১তম বইমেলার উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের কথাসাহিত্যক অমর মিত্র।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন নবী, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, কবি আসাদ মান্নান, প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, খ্যাতিমান অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান, জার্মান প্রবাসী লেখক নাজমুন নেসা পিয়ারী, ঠিকানার প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান, লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, লেখক-প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার, প্রবীণ সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সউদ চৌধুরী, লেখক-সাংবাদিক জসিম মল্লিক, প্রকাশক মনিরুল হক, নালন্দার রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল, মেজবাহ উদ্দিন, আনিসুজজামান, শাহাব আহমেদ, হুমায়ূন কবীর ঢালীসহ অন্যান্য কবি-লেখক-সাহিত্যিক ও প্রকাশক।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বইমেলার আহ্বায়ক গোলাম ফারুক ভূঁইয়া। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বইমেলার উদ্বোধক ও কথাসাহিত্যক অমর মিত্র, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল এস এম নাজমুল হাসান, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন এবং বইমেলার আয়োজক মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ফেরদৌস সাজেদীন। বইমেলার উদ্বোধনী দিনে মঞ্চে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ড. নিরুপমা রহমান। নৃত্য পরিবেশন করে অনুপ দাস ড্যান্স একাডেমি (আড্ডা) বাংলা ও বিশ্ববাঙালি।
এছাড়া ছিল মুক্তধারা সম্মাননা। এবছর সম্মাননা পেয়েছেন ড. নজরুল ইসলাম ও সৈয়দ জাকি হোসেন। তাঁদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন এবং উত্তরীয় পড়িয়ে দেন ড. নূরুন নবী। আর ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন সাংবাদিক নিনি ওয়াহিদ। ৩১তম বইমেলা উদ্বোধনের পরপরই জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারের উন্মুক্ত স্থানে খোলা আকাশের নিচে বই সাজিয়ে বসেন লেখক ও প্রকাশকেরা। বইমেলায় মুক্তধারা, অনন্যা, অন্বয়, নালন্দা, ইত্যাদি, ঘুংঘুর, কথা প্রকাশ, রাইটার্স ক্লাব, ছড়াটে, অংকুর প্রকাশ, অ্যাডঅনসহ নানা প্রকাশনা সংস্থা স্টল সাজিয়ে বসে। উদ্বোধনের পরপরই শুরু হয় বই বিকিকিনি। এই প্রথমবারের মতো খোলা আকাশের নিচে বইমেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় লেখক-প্রকাশকরা সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বইমেলার দ্বিতীয় দিনে ছিল- কবিতা লেখার অভিজ্ঞতা, নাটকের গান, লেখক-প্রকাশক মুখোমুখি: বাংলা বইয়ের ডিজিটাইজেশনে প্রকাশকেরা কি শঙ্কিত? এবং ‘বিদ্রোহী’র ১০০ বছর এবং শহীদ কাদরী গ্রন্থ পুরস্কার ২০২১। দেশি কবিতা বইয়ের জন্য শহীদ কাদরী গ্রন্থ পুরস্কার পেয়েছেন কবি মুজিব ইরম। তৃতীয় দিনে বইমেলায় মুক্তধারা-জেএফবি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ভাষা গবেষক, লেখক অধ্যাপক গোলাম মুরশীদ। এ পুরস্কারের অর্থমান তিন হাজার ইউএস ডলার। ২০১৬ সালে কবি নির্মলেন্দু গুণকে প্রদানের মাধ্যমে এ পুরস্কারটি মুক্তধারা ফাউন্ডেশন প্রবর্তন করে। এরপর শামসুজ্জামান খান, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, দিলারা হাশেম, সেলিনা হোসেন ও সমরেশ মজুমদার এ পুরস্কারে ভূষিত হন। তৃতীয় দিন শনিবার বইমেলার স্থান পরিবর্তন হয়েছিল অদূরে জ্যামাইকা সেন্টার ফর আর্টস অ্যান্ড লার্নিং-এর ছোট পরিসরে বইমেলার তৃতীয় দিন অতিবাহিত হয়। শেষ দিন ৩১ জুলাই রোববার ছিল উপচেপড়া ভিড়।
এদিন মঞ্চের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল সকল আমন্ত্রিত অতিথি ও গ্রন্থপ্রেমীর অংশগ্রহণে আড্ডা, কবিতালাপ, স্বরচিত কবিতা পাঠ, প্রফেসর আনু মুহাম্মদ ও ড. মোহাম্মদ মাসুদ ও ড. নজরুল ইসলামের অংশগ্রহণে পরিবেশ বনাম অর্থনীতি বিষয়ক বিতর্ক, হারিয়ে যাওয়া চাবির খোঁজে অনুষ্ঠান স্মৃতিকথা, সাহিত্য ও সুরের মৈত্রী: বাণীপ্রধান বাংলা গান ও আমার অভিবাসী শীর্ষক আলোচনা, বিশ্বায়নের অর্থনীতি ও বিশ্ববাঙালির অভিমুখ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এবার বাংলা বইমেলার আহ্বায়ক ছিলেন গোলাম ফারুক ভূঁইয়া। তিনি ড. আব্দুর নূরকে ৩২তম বাংলা বইমেলার আহ্বায়ক ঘোষণা করেন। ৩১ জুলাই রোববার মেলার সমাপনী দিন প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্টল দেখেন। প্রকাশক, লেখক ও পাঠকদের সঙ্গে কথা বলেন। নিজের লেখা বইয়ের খোঁজ নেন স্টলে।
Posted ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ আগস্ট ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh