বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
নিউইয়র্ক সিটিতে কিছুতেই কমছে না সহিংসতার ঘটনা। বন্দুকের গুলিতে প্রতিদিনই ঝরছে প্রাণ। প্রচন্ড গরমে যখন হাসফাঁস করছে নগরবাসী। সকাল সন্ধ্যা বাড়ির আঙ্গিনায় বা পার্কে কোথাও বসে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে চাচ্ছে। সে সুযোগটুকুও কেড়ে নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। গত ২৬ জুলাই, রোববার ছুটি ও খ্রীস্টানদের প্রার্থনার দিন গুলিতে নিহত হয়েছে ৮ জন। নিউইয়র্ক সিটির পাঁচটি বরোতে এদিন পৃথক ১৫টি গুলি বর্ষনের ঘটনা ঘটে। এতে ১৮ বছর বয়সের দুই তরুণও রেহাই পায়নি বন্দুকধারীদের হাত থেকে। অবাধ বন্দুক সন্ত্রানের ঘটনা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও আতঙ্কে ভুগছে নগরবাসী। এর আগে গত ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবসের দিন ৬৪টি বন্দুক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয় ১১ জন, আহত হয় ৪৪ জন। গত জুলাই পর্যন্ত সিটিতে ৭মাসে গুলির ঘটনা ঘটেছে ৭৪৫টি। গত বছর একই সময় ঘটে ৪৩১টি ঘটনা। এবছর গুলির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৩ শতাংশ।
বেড়েছে খুনের ঘটনাও। গত বছর এ সময় খুন হয় ১৭৬ জন। আর এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৭ জনে। খুন বৃদ্ধির হার ২৯ শতাংশ। গত ১২ জুলাই রাতে ব্রুকলীনে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বাবা-মা’র সামনে বন্দুকের গুলিতে নিহত হয় এক বছরের শিশু ডেভেল গার্ডনার জুনিয়র। মিনিয়াপলিসে গত মে মাসে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নিহত হওয়ার পর আন্দোলনের মুখে বিপাকে পড়ে পুলিশ। নিউইয়র্ক সিটির রাস্তা থেকে ৬০০ সাদা পোষাকধারী পুলিশ তুলে নেয়া হয়। যারা ভ্রাম্যমান অবস্থায় অপরাধী সনাক্ত করতো। এরপর পুলিশের বাজেট হ্রাস ও পুলিশের এখতিয়ার কমানো হয়। এছাড়া করোনাকালে জেলখানা থেকে মুক্তি দেয়া হয় আড়াই হাজার অপরাধীকে। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কমিশনার ডারমিট সিরা মনে করেন এসব কারণেই সিটিতে বাড়ছে সহিংসতা। ভবিষ্যতে সহিংসতা আরো বাড়বে বলে এমন আশংকা করছেন তিনি। গ্রীষ্মে অপরাধ প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বাড়লেও এবার তা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। মেয়র বিল ডি ব্লাজিও সহিংসতা বৃদ্ধির জন্য দোষারোপ করছেন করোনার কারণে আদালতের শ্লথ গতিকে। একারণে ফৌজদারী মামলার জটের সৃষ্টি হয়েছে। সহসাই এ সমস্যা কেটে যাবে বলে সংবাদ সম্মেলনে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেয়র। এসব নিয়ে মেয়র অফিস ও নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের মধ্যে চলছে ব্লেম গেইম।
গত রোববার বিকেলে ব্রুকলীনের সাইপ্রাস হিলস এলাকায় বাস্কেট বল গ্রাউন্ডে গুলিবিদ্ধ হয় তিন তরুণ। তাদের মধ্যে ১৮ বছরের দু’জন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। অপরজনের পায়ে গুলি লাগে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একইদিন মধ্যরাতের পর স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে ৩২ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যু হয় তার। এ ঘটনার আধাঘন্টা পর ব্রঙ্কসে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ একটি এপার্টমেন্টের তৃতীয় তলা থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। ব্রঙ্কসের এলারটন এলাকায় একই রাতে ৩টার দিকে ৩৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। ভোর ৬টা’র দিকে ব্রঙ্কসের বেলমন্ট এলাকায় ২০ ও ২৪ বছর বয়সী দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়। এতে একজন নিহত ও অপরজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ গ্রেফতার করেছে একজনকে।
এদিকে রোববার অপরাহ্ন ২টার দিকে কুইন্সের উডহ্যাভেন এলাকায় সাখা আইফিল নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন এবং পরে মারা যান হাসপাতালে। ব্রুকলেিনর ফ্ল্যাটবুশ এলাকা থেকে একই দিন সন্ধ্যায় অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মুখমন্ডল ও বুক ছিলো গুলিতে ঝাঝরা করা। চলমান বন্দুক সহিংসতার কারণে নিজেদের অনিরাপদ মনে করছেন নগরবাসী। এজন্য জীবন রক্ষার্থে ব্যক্তিগত অস্ত্র বহন করছেন অনেকে।
Posted ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh