বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২২
গত ২১ জানুয়ারি শুক্রবার হারলেমে দুবৃর্ত্তের গুলিতে আহত পুলিশ অফিসার উইলবার্ট মোরা (২৭) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার চারদিন পর গত মঙ্গলবার মারা গেছেন। এক মহিলার ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের অভিযোগের ফোনকল পেয়ে দু’জন পুলিশ অফিসার হারলেম এ যাওয়ার পর অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের করিডোরে এক দুর্বৃত্ত গুলি করলে একজন পুলিশ ঘটনাস্থলেই নিহত হন তার সহকর্মী পুলিশ অফিসার জ্যাসন রিভেরা এবং উইলবার্ট গুরুতর আহত হন। চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে তিনিও মারা গেলেন।
এনওয়াইপিডি’র কমিশনার কীচেন্ট সিওয়েল এ ঘটনাকে গভীর দু:খজনক বলে টুইট করেছেন। তিনি উইলবারকে তিন বারের বীর বলে অভিহিত করে বলেন, তার প্রতি আমাদের মাথা অবনত এবং হৃদয় ভারী। তৃতীয় একজন অফিসার গুলি নিক্ষেপকারী ব্যক্তি নাম লাশোন জে ম্যাকনীলকে (৪৭) গুলি করলে তিনি আহত হন এবং গত সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। ম্যাকনীলের মা বলেন যে তার পুত্র মানসিক ব্যাধিগ্রস্থ ছিল এবং তিনি তার ছেলেকে তার চিকিৎসার ব্যাপারে সহায়তার জন্য পুলিশে ফোন করেন। তিনি যদি ধারণা করতে পারতেন যে তার ছেলে পুলিশকে গুলি করতে পারে তাহলে তিনি ৯১১ এ ফোন করতেন না।
সত্তরের দশকে নিউইয়র্ক সিটি ছিল আইনশৃংখলার অবনতির শঙ্কামুক্ত নিরাপদ এক নগরী। একের পর এক দু:খজনক ঘটনার পর নিউইয়র্কাররা আশাবাদী হয়ে ওঠেছিল এ সিটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে ওঠবে। কিন্তু তা দুরাশায় পরিণত হয়েছে অপরাধী গ্যাংগুলো আগের চেয়ে বেশি নৃশংসতায় রাস্তায় নেমে আসায়। এসবের সঙ্গে অন্যান্য অপরাধ এবং দুর্ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মাসেই ব্রঙ্কসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা গেছে ১৭ জন, টাইমস স্কোয়ার সাবওয়ে স্টেশনে এক ব্যক্তি ধাক্কা দিয়ে চলন্ত ট্রেনের সামনে ফেলে হত্যা করেছে এক নারীকে। ম্যানহাটানে বার্গার কিং এর কিশোর ক্যাশিয়ারকে গুলি করে হত্যা করেছে ডাকাতরা। ব্রঙ্কসে অগ্নিকাণ্ডের তিন দিন পর পুলিশের সঙ্গে দুবৃত্তদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের সময় এক পুলিশ অফিসারের পায়ে গুলি লাগে। পরদিন ব্রঙ্কসেই অন্য এক স্থানে গুলিবিনিময়ের সময় পার্ক করা গাড়িতে বসা এক শিশু আহত হয়। এর পরের দিন বৃহস্পতিবার স্ট্যাটেন আইল্যাণ্ডে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সময় এক ডিটেকটিভ অফিসার গুলিবিদ্ধ হন।
পর পর অনেকগুলো অপরাধের ঘটনা এবং সাবওয়েতে যাত্রীদের উত্যক্ত করার নিয়মিত ঘটনা সিটিবাসীকে ভীতির অন্ধকারে ছুড়ে দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। গত দুই বছর যাবত করোনা মহামারীর ব্যাপকতা ও বিধিনিষেধের কারণে এমনিতেই নিউইয়র্ক সিটিসহ সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে অচলাবস্থার মধ্যে সিটিতে অপরাধের বিস্তার জনমনে এক অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে যে তাদের পক্ষে আবারও নিরাপদ নিউইয়র্ক দেখা সম্ভব হবে কিনা। নিউইয়র্ক টাইমস গত সপ্তাহে সিটির বিভিন্ন এলাকায় সকল বয়সের কয়েক ডজন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং সিটির পুরোনো বাসিন্দা থেকে শুরু করে নবাগত সকলেই আইনশৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপারে অস্বস্থি প্রকাশ করেছে। তারা মনে করেন সামাজিক নিয়মরীতির অবক্ষয় অবৈধ ও অপরাধ কর্মকান্ডের বিস্তার ঘটানোর মূখ্য কারণ। এমনকি সিটি মহামারী পূর্ব অবস্থায় যেমন ছিল, আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে তার চেয়ে অনেক বেশি এবং কেউ আর নিরাপদ অনুভব করতে পারছে না।
হারলেমে যেখানে ক’দিন আগেই এক পুলিশ অফিসারকে গুলি করা হয়েছিল, সেখান থেকে মাত্র এক ব্লক দূরে এক নাপিত মাইকেল মার্কাস বলেন, মনে হচ্ছে যে পরিস্থিতি আরো বাজে দিকে মোড় নিতে যাচ্ছে। আমি জানি না কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। তাদের অবশ্যই নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ৫৪ বছর বয়স্ক মার্কাস মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ থেকে শুরু করে বহু অপরাধের ঘটনায় অনেক হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছেন, তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টারের কাছে। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটিতে ইতোমধ্যে গুলিবিনিময় ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ২০১৮ সালের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৪৮৮টি। মার্কাসের মতে নব্বইয়ের দশকে যেভাবে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা এখনকার ঘটনার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। এখন বিভিন্নভাবে লোকজন নিহত হচ্ছে। এখন গুলিবিনিময়, ছুরিকাঘাত, সাবওয়ে স্টেশনে ধাক্কা দিয়ে ট্রেনের সামনে ফেলে দেওয়ার ঘটনা বেড়েছে। আমি মনে করি না এ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটতে যাচ্ছে।
একাশি বছর বয়স্ক অবসর গ্রহণকারী আইনজীবী জ্যানেট মিলার, যিনি আজীবন নিউইয়র্কে কাটিয়েছেন, তার মতে সাম্প্রতিকালে সংঘটিত অপরাধমূলক ঘটনাগুলো দেখে ও জেনে মনে হয় আমরা পুরোনো দিনে ফিরে যাচ্ছি, সত্তুরের দশকের মত অপরাধ ঘটে চলেছে। সর্বত্র আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার চলছে। ষাট বছর বয়সী জন কুবান সাম্প্রতিক সময়ে আর নিরাপত্তার বোধ অনুভব করেন না। তিনি বলেন আমি যখন তরুণ ছিলাম তখন আমি দিন ও রাতের যে কোনো সময়ে ঘুরে বেড়াতাম, আমার মধ্যে কোনো ভয় ছিল না, সাবওয়ে ব্যবহারে কখনও ভীতি অনুভব করতাম না। কিন্তু এখন আমি উদ্বেগের মধ্যে থাকি, সাবওয়ে ট্রেনে ওঠার কথা ভাবতেই আমি ভীতি অনুভব করি।
সত্তরের দশকে নিউইয়র্ক সিটির অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় বেকারত্ব যেখানে ৮.৫ শতাংশ ছিল, তখন নিউইয়র্ক সিটিতে বেকারত্ব ছিল ১২ শতাংশ। এর পেছনে ছিল নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ও বড় করদাতারা সিটির বাজেট ঘাটতি ঘটার কারণে পরিণত হয়ে সিটিকে দেউলিয়াত্বের প্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। আর্থিক ঘাটতি পূরণ করার বিকল্প ছিল না। ১৯৭৫ সালে জেনারেল ইলেকট্রিক এবং পেপসিকো’র মত বড় কর্পোরেশনগুলো নিউইয়র্ক সিটি থেকে তাদের সদর দফতর সরিয়ে নেয়ার ফলে বেকারত্ব ও আর্থিক সংকট বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা কাটিয়ে ওঠতে সিটির অনেক বছর সময় লেগেছে।
Posted ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh