বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৫ নভেম্বর ২০২০
করোনা মহামারীর কারণে গত মার্চ মাস থেকে অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের মতো নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলগুলোও পড়েছিল শাটডাউনের কবলে। এরপর থেকে অনলাইনে ক্লাস চললেও সীমিত সংখ্যায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতির সুযোগ সৃষ্টি করেছে ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন বোর্ড। কিন্তু পুরোদমে ক্লাস শুরুর আগেই দ্বিতীয় দফা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতির ফের অবনতি ঘটেছে। এখন পর্যন্ত স্কুলে প্রতি চারজনের মধ্যে মাত্র একজন ফিরেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলগুলোর ১১ লঅখ শিক্ষার্থীর মধ্যে স্কুলে উপস্থিত হচ্ছে ২ লাখ ৮৩ হাজার শিক্ষার্থী। অবশিষ্ট শিক্ষার্থী কবে স্কুলে ফিরতে পারবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এর ফলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের অবিভাবকরাও চরম উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন। রিপোর্টে একথাও বলা হয়েছে যে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নিউইয়র্ক সিটির স্কুল অভিভাবকদের নানা দ্বিধা ও শঙ্কার মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন কিনা অথবা আগামী বছরের সামারের শেষ সময় পর্যন্ত তারা বাড়ি থেকেই অনলাইনে পড়াশোনা করবে কিনা।
সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও ঘোষণা করেছেন যে অভিভাবকদের আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা আগামী স্কুল বর্ষ পর্যন্ত তাদের সন্তানদের ‘হাইব্রিড’ শিক্ষা গ্রহণের জন্য তালিকাভূক্ত করবেন কিনা, অর্থ্যাৎ কিছু সময়ের জন্য স্কুলে উপস্থিত থাকা এবং অনলাইনের নির্দেশনা গ্রহণের মিশ্র পদ্ধতিতে। প্রথমে সিটি এডুকেশন বোর্ড প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে প্রতি কয়েক মাস অন্তর ‘হাইব্রিড’ কর্মসূচিতে শিক্ষা প্রদান করা হবে। কিন্তু সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র এক চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে উপস্থিত হওয়ায় এই নীতির পরিবর্তন করা হয়েছে। তারা উপস্থিতির হে হার আশা করেছিলেন তার চেয়ে অনেক কম। ফলে সিটির জন্য শিক্ষক বরাদ্দে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অনলাইনে অধিক সংখ্যক শিক্ষককে সংশ্লিষ্ট থাকতে হচ্ছে। যারা নিরাপত্তার জন্য বা সুবিধার জন্য সন্তানদের বাড়িতে রেখে অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, তাদেরকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর বলে তারা মনে করছেন। একই সমস্যার মধ্যে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য স্থান এবং বিশ্বের বহু দেশের অভিভাবকরা। কিন্তু নিউইয়র্ক সিটিতে এ সমস্যা বিশেষভাবে প্রকট। কারণ গত এপ্রিল-মে মাসে নিউইয়র্ক সিটি সমগ্র বিশ্বে করোনা মহামারীর মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। বর্তমানে পৃথিবীতে যে অনলাইনে ক্লাস চলছে, তা সবচেয়ে বিশাল।
ম্যানহাটানের একজন নির্বাচিত অবিভাবক নেতা একি গোল্ডবার্গ বলেছেন, অভিভাবকরা জানেন ও বোঝেন যে স্কুলই তাদের সন্তানদের জন্য সর্বোত্তম স্থান। কিন্তু তিনিও মহামারীজনিত পরিস্থিতিতে তার সন্তানদের জন্য অনলাইনে শিক্ষাদানই প্রাধান্য দিচ্ছেন। কিন্তু তিনিও মনে করেন যে, অনলাইনে যে শিক্ষা তাতে প্রাণ নেই এবং অত্যন্ত নিম্নমানের শিক্ষা পাচ্ছে শিশুরা। তিনি নিজেকেই প্রশ্ন করেন যে, আমি এটা করছি কেন? কিন্তু পরিস্থিতি বাধ্য করলে তার একার কিছু করার নেই। গোল্ডবার্গের মতে অভিভাবকরা চরমভাবে এক হতাশাজনক সময় পার করছেন। সিটির স্কুলগুলোতে ভাইরাস সংক্রমণ হার অতি নিম্ন হলেও অনলাইন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষকরা বিরক্তি ও ক্লান্তি বোধ করছেন। যদি আগামী সামারের শেষ পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে তারা অনলাইন শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা বিশেষ করে সিটি হল এবং শিক্ষকদের সংগঠন ইউনাইটেড ফেডারেশন অফ টিচার্স কর্তৃক একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করার কারণে অনলাইন নির্দেশনা কাংখিত মানে পৌছতে পারেনি বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনলাইন শিক্ষা অব্যাহত রাখতে হলে শিক্ষকের ঘাটতি পূরণ করতে হবে বলে তারা জানান। এজন্য অন্তত এক হাজার অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে বলে স্কুল বোর্ডের ধারণা। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে বোর্ড সন্দিহান। সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্ক এর শিক্ষা বিভাগের প্রফেসর ডেভিড ব্লুমবার্গ বলেছেন, শিক্ষক ঘাটতি পূরণ করা সিটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ এবং এর মোকাবেল করা সম্ভব নয় বলেই সিটির পাবলিক স্কুলগুলোর শিক্ষার্থী উপস্থিতি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে ঢিলেমি করছে।
ইউনাইটেড ফেডারেশন অফ টিচার্স এর প্রেসিডেন্ট মাইকেল মালগ্রু অনলাইন ও স্কুলে উপস্থিতির মিশ্র শিক্ষাপদ্ধতির কারণে উদ্ভুত সমস্যার কথা বলেছেন যে সিটি এডুকেশন বোর্ড শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না এবং ভালো কোন শিক্ষা নির্দেশনা পরিকল্পনাও তৈরি করছে না। ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশনের মুখপাত্র ড্যানিয়েল ফিলসন এত অল্প সময়ের মধ্যে এতো অধিক সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করা কঠিন ব্যাপার। স্কুলে উপস্থিত হওয়ার পরিবর্তে যে ধরনের শিক্ষাই দেয়া হোক না কেন তা বিকল্প হতে পারে না। সেজন্য আমরা সীমিতভাবে স্কুল চালু করার জন্য অনেক দেনদরবার করেছি, হাজার হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং সাড়ে তিন লাখ ইন্টারনেট সংযোগ সম্পন্ন আইপ্যাডের ব্যবস্থা করা হয়েছে শিক্ষা নির্দেশনা অব্যাহত রাখার জন্য। তিনি জানান, ৫,৬০০ নতুন ফুলটাইম ও সাবসটিটিউট শিক্ষকের জন্য সিটি ৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে এবং টিচিং লাইসেন্স রয়েছে এমন দুই হাজার স্টাফকে স্কুলগুলোতে আনা হয়েছে। মহামারীর কারণে সিটি বর্তমানে যে আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে, সেখানে শিক্ষক নিয়োগে সিটির অর্থ বরাদ্দ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অর্থই হচ্ছে নতুন বিনিয়োগ। এদিকে সিটি জানিয়ে দিয়ে শিক্ষকদের এ বছরের বকেয়া হিসেবে ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে তা আপাতত পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।
কিছু কিছু স্কুলে অনলাইন ক্লাসের আকার বেশ বড় এবং এসব স্কুলে শিক্ষক ঘাটতি প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে। অনেক স্কুল পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্যাব ও ল্যাপটপ পায়নি। অনেক শিক্ষার্থী, যারা হোমলেস শেল্টারে বাস করে তারা অনলাইন ক্লাসে করতে পারে না ইন্টারইেঁ সংযোগ সমস্যার কারণে। এসব সীমাবদ্ধতা সত্বেও কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো পরিবারগুলো অনলাইন স্কুলিংয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে, তবে এশিয়ান আমেরিকান পরিবারগুলোর ৬০ শতাংশ অনলাইন শিক্ষাদানের পক্ষে। শেতাঙ্গ পরিবারগুলোতে অনলাইন শিক্ষার পক্ষে মতামত আরো কম। আগামী সপ্তাগুলোতে কমসংখ্যক শিক্ষার্থীই স্কুলে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হবে বলে বোর্ড অফ এডুকেশনের ধারণা।
Posted ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh