নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
প্রথমবারের মতো যথাযথ মর্যাদায় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছে নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স বরো। বরো প্রেসিডেন্ট ডোনোভান রিচার্ডস্ জুনিয়র কুইন্স তথা নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশিদের বহুমুখি অবদানের প্রতি সম্মান জানাতেই উদ্যোগ নেন মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের। এর অংশ হিসেবে তিনি নিউইয়র্কে হোমকেয়ার সেবার পথিকৃৎ, মূলধারার রাজনীতিক, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার আবু জাফর মাহমুদকে বিশেষ সম্মানায় ভুষিত করেন। গত ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার কুইন্স বরো কার্যালয়ের সুপ্রশ্বস্ত আঙিনায় জমকালো ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সম্মাণিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, নিউইয়র্কেও পাঁচবারের নির্বাচিত সিনেটর চাক শুমার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নিউইয়র্কে মানব সেবার অগ্রপথিক আবু জাফর মাহমুদ ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম।
সিনেটর চাক শুমার বলেন, কুইন্স গোটা যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বরো।
বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মানুষের একত্রে একই ছন্দে বসবাসের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত গড়ে উঠেছে এই বরোতে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিরাট সমর্থন ও সহযোগিতা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যে দেশের মানুষই তার ভাগ্য গড়েছে। নিউইয়র্ক সৌভাগ্যবান এই কারণে যে, তারা সর্বাধিক সংখ্যক বাংলাদেশিকে পেয়েছে। এদেশে তাদের অভিবাসনের বয়স ৪০ বছর। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশি আমেরিকানরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখতে শুরু করেছে। সাধারণ আমেরিকানদের তুলনায় শিক্ষায়, আর্থিক উপার্জনে ও ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জনে বাংলাদেশিরা এগিয়ে। চাক শুমার বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের অগ্রগতি নিয়ে বিশেষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, তারা অসাধারণ মেধার সাক্ষর রাখছে সবখানে। তিনি বলেন, বাংলাদেশিরা জাতিগত গর্ব ও শক্তি নিয়ে এদেশের উন্নয়নেও অবদান রাখছেন।
অনুষ্ঠান আয়োজক ডোনোভান রিচার্ডস্ জুনিয়র, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভেতর দিয়ে তারা আপন ভূমিকে স্বাধীন করেছেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদের নানামুখি তথা কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং নিউইয়র্কে বসবাসকারী বাংলাদেশের সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, কুইন্স বোরোতে বসবাসকারী আমেরিকানদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ বাংলাদেশি, এটি আমার জন্য গর্বের। তিনি জ্যাকসন হাইটস, অ্যাসটোরিয়া, জ্যামাইকা হিল সাইটসহ কয়েকটি এলাকার উন্নয়ন অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বলেন, এসব এলাকাগুলোকে বাংলাদেশিরা তাদের সৃজনশীল বাণিজ্যিক উদ্যোগ ও প্রয়াস দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন। আমেরিকান বাংলাদেশিরা এদেশের নিজস্ব অভিযান ও রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিগুলোকে অসাধারণ গতিতে এগিয়ে নিচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডোনোভান রিচার্ডস্ এর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে কুইন্স বরোর এই নেতৃত্ব অসাধারণ এক দৃষ্টান্ত গড়লেন। এটি অশেষ আনন্দ ও গর্বের বিষয়। আমরা খুব খুশি, আমেরিকার স্থানীয় থেকে শুরু করে ফেডারেল সরকার পর্যন্ত সকল পর্যায়ে বাংলাদেশের মহান মুুক্তিযুদ্ধের মর্যাদার প্রতি সম্মান জানাচ্ছে। তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সোভিয়েতের বিপরীতে আমেরিকার যে অবস্থান ছিল তা আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কখনো ভূলবো না। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে গুলি ও বোমা বর্ষণ না করে তারা বঙ্গোপসাগর তথা প্যাসিফিক থেকে সপ্তম নৌবহর নিয়ে ফিরে যায়। এতে স্বাধীনতা অর্জন করতে আমাদের সহজ হয়, আমরা কৃতজ্ঞ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি।
নিউইয়র্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম, বরো প্রেসিডেন্টের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আয়োজন করে তিনি বাংলাদেশিদের প্রতি বিরল সম্মান দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্বসভায় বলার মতো বাংলাদেশের এখন অনেক সাফল্য রয়েছে। বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত দূরকরণ, দারিদ্র দুরীকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পৃথিবীর শাক্তিসুরক্ষায় সহায়তার মতো বিষয়গুলো মূল্যায়ণ করে এখন পৃথিবীবাসীর সামনে বাংলাদেশ রোল মডেল এর সম্মান ও স্বীকৃতি পাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আরো সম্মানিত হয়েছেন জ্যাকসন হাইটস বিজনেস কমিউনিটির সংগঠক ফাহাদ সোলাইমান, জ্যামাইকা ফ্রেণ্ডস সোসাইটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, সাকি ফর সাউথ এশিয়ান উইমেন এর প্রধান নির্বাহী সাইদা রশীদ ও শিল্পকলা একাডেমি নিউইয়র্কের সংগঠক মানিকা চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে দুদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে ছিল দেশগান ও নৃত্যের পরিবেশনা।
Posted ১:২১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh