‘শো টাইমস মিউজিক’-এর পিঠা উৎসব ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনা গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার সন্ধ্যায় কুইন্স প্যালেসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জমজমাট আয়োজনে এ উৎসব চলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। উৎসবে হরেক রকমের পিঠা ছাড়াও ছিল নৃত্য, সংগীতসহ মনোজ্ঞ সব পরিবেশনা। হাসি উচ্ছ্বাস, শুভেচ্ছা, অভিনন্দন এসবের মধ্য দিয়ে বসেছিল প্রবাসী বাঙালিদের মিলন মেলা। চমৎকার এ আয়োজনে প্রতিধ্বনিত হয় ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সংস্কৃতির জয়গান।

পিঠা উৎসবে শোভা পাচ্ছিল পাটিসাপ্টা, ভাপাপিঠা, তেলে পিঠা, চিতই পিঠা, বিবিখানা, ঝাল পিঠা, পাকুন পিঠা, মাংশের পিঠা, নারিকেল পুলি, নিমকি, ডালপুরি, ডালপাকন, বুলশাসহ নাম না জানা নানা রকমের পিঠা। পিঠার মৌ মৌ গন্ধে উৎসব প্রাঙ্গণে সৃষ্টি হয় এক ভিন্ন আমেজের। এ উপলক্ষে শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্টসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলনমেলা ছিল কুইন্স প্যালেসে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক ‘শো টাইম মিউজিক’-এর কর্ণধার আলমগীর খান আলম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গোল্ডেন এজ হোমকেয়ারের সিইও শাহনেওয়াজ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ডা. চৌধুরী সারওয়ার হাসান, নূরুল আজিম, আহসান হাবিব প্রমুখ।

যৌথভাবে অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন প্রবাসের জনপ্রিয় উপস্থাপিকা শারমিন সিরাজ সোনিয়া ও সংগীত শিল্পী সেলিম ইব্রাহিম। হাতে তৈরি বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা আকৃতি, নানা স্বাদ আর রঙের এসব পিঠা অতিথিরা উপভোগ করেন দারুণভাবে। অনেকে বাড়িও নিয়ে যান স্বাদের সেসব পিঠা। আয়োজনকে প্রাণবন্ত করে রাখে আকর্ষণীয় এসব মজাদার বাঙালি পিঠা আর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

চমৎকার এ আয়োজনে নিউইয়র্কের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী চন্দন চৌধুরী, রানো নেওয়াজ, শাহ মাহবুব, তৃনিয়া হাসান, কামরুজ্জামান বকুল, অনিক রাজ, সেলিম ইব্রাহিম, আমানত হোসেন আমান ও মনিকা দাস সংগীত পরিবেশন করেন। নৃত্য পরিবেশন করে প্রবাসের জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অনুপ দাশ ড্যান্স একাডেমি’র শিল্পীরা। মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন করে একাডেমির ক্ষুদে নৃত্য শিল্পীরা। নৃত্য-সংগীত ও ফ্যাশন শো-তে অংশ নেন তারকা শিল্পীরা। এরপর কয়েকটি গান আর মজিদ ডিজায়ারের ফ্যাশন শোও ছিল দারুণ উপভোগ্য। গভীর রাত পর্যন্ত এসব মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন দর্শক-শ্রোতারা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পিঠা উৎসব বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির অংশ। বক্তারা বলেন, প্রবাসে নিজস্ব স্বত্তা, সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে এধরণের উৎসব বড়ই প্রয়োজন। ‘শো টাইম মিউজিক’ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বাংলার এ পিঠা উৎসব আয়োজন করে প্রবাসে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের শেকড়, কৃষ্টি-কালচারের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এধরনের উৎসব আমাদের মন প্রাণ বাঙালিত্বের আমেজে ভরে দেয়। তারা বলেন, প্রবাসে নতুন প্রজন্মের সামনে বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরা না হলে একদিন তা হারিয়ে যাবে। বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার মাধ্যমে পারস্পারিক বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠবে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা প্রবাসে বাংলাদেশ ও বাঙালি সংস্কৃতি তুলে ধরার নিরলস প্রচেষ্টা চালানোর জন্য শো টাইম মিউজিকের প্রধান নির্বাহী আলমগীর খান আলমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রবাসে মান সম্মত অনুষ্ঠান আয়োজনে শো টাইম মিউজিক খুবই ভালো কাজ করে যাচ্ছে। তারা অতীতের মতো শো টাইম মিউজিকের সব আয়োজনে পাশে থাকার প্রশ্রিুতি দেন।

আয়োজক ‘শো টাইম মিউজিক’র কর্ণধার আলমগীর খান আলম সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রবাসে পারস্পারিক বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি, নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচারের সাথে পরিচিত করার লক্ষ্যে পিঠা উৎসবের আয়োজন করেন তিনি। সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে ভবিষ্যতে আরও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

আলমগীর খান আলম বলেন, আপনারা শো টাইম মিউজিকের সঙ্গে সবসময় থাকেন। সেজন্য আমি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, আমি আশা করব আগামীর পথ চলায়ও আপনাদের পাশে পাব। শুধু আর্থিক বিষয় নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেও তিনি কাজ করেন বলে উল্লেখ করেন আলমগীর খান আলম। ভবিষ্যতে শো টাইম মিউজিক আরও বড় ধরণের চমক নিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন শো টাইম মিউজিকের প্রধান নির্বাহী।