আগামী বছর থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে ববাসকারী গ্রীনকার্ডধারাী অর্থ্যাৎ যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দারা সিটির নির্বাচনগুলোতে ভোট দিতে পারবে। গত ৯ ডিসেম্বরে (২০২১) নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল এ সংক্রান্ত একটি বিল পাস করার পর গত রোববার নতুন মেয়র এরিক অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেছেন যে সকল বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়ে এ বিলের অনুমোদন দেওয়ার মাধ্যমে আট লাখের অধিক ননসিটিজেন নিউইয়র্কারকে মিউনিসিপাল নির্বাচনগুলোতে ভোট দেওয়ার অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।

আমি বিশ্বাস করি যে নিউইয়র্কারদের তাদের সরকার কেমন হবে তা বলা উচিত এবং যে কারণে আজ আমি এখানে এবং আমি এই গুরুত্বপূর্ণ আইনসহ জনহিতকর সব আইনের প্রতি সমর্থন প্রদান করবো। আমি লক্ষ লক্ষ মানুষকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আনার জন্য্য অব্যাহত চেষ্টা চালাবো। উল্লেখ্য সিটি কাউন্সিল বিলটি গতমাসে পাস পরও বিলের উপর মেয়রের কোন আপত্তি থাকলে তিনি ৩০ দিনের মধ্যে তা উত্থাপন করতে পারেন। তা না হলে ৩০ দিবস অতিক্রন্ত হওয়ার পর বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আইনে পরিণত হবে, এমন বিধান রয়েছে। মেয়রের কোন আপত্তি না থাকায় এটি এখন সিটিতে আইন হিসেবে পরবর্তী নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

ননসিটিজেনদের এই আইনের আওতায় আনার ফলে যারা এর সুযোগ লাভ করবে তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা বা গ্রীনকার্ডধারী ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও ড্রিমার্স (ডেফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভ্যাল) নামে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী তরুণদের যারা নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাস করে। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার ফলে এখন আনুমানিক ৮ লাখ ৮ হাজার নিউইয়র্কবাসী এই আইনের আওতায় আগামী ২০২৩ সালে ৯ জানুয়ারি থেকে সিটির নির্বাচনগুলোতে ভোটাধিকারের সুযোগ লাভ করবে বলে সিটি কাউন্সিল সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। তারা সিটিজুড়ে মেয়র, পাবলিক এডভোকেট, সিটি কাউন্সিল মেম্বার ও বরো প্রেসিডেন্টের মতো পদগুলোর প্রাইমারি ও সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তবে স্টেট বা ফেডারেল পর্যায়ের নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার থাকবে না।

ননসিটিজেনদের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিউইয়র্ক একমাত্র সিটি নয়। এ ধরনের সুযোগ ভারমন্ট, মেরিল্যান্ড, ইলিয়ন, মেইন ও ম্যাসাচ্যুসেটসসহ আরো কয়েকটি স্টেটের কমপক্ষে এক ডজনের অধিক সংখ্যক সিটিতে এভাবে ননসিটিজেনদের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে তাদেরকে সিটির উন্নয়নসহ বিভিন্ন নীতি নির্ধারণীতে তাদের স্বাগত জানানো হচ্ছে। ক্ষেত্রে তাদের এর বিভিন্ন বড় সিটিতে বিদ্যমান। কিন্তু সেই সিটিগুলোর তুলনায় নিউইয়র্কে গ্রীনকার্ডধারী স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা অনেক বেশি। সেজন্য তাদের সিটির সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা নিয়ে আপত্তি দীর্ঘদিনের এবং অধিকার সংগঠনসমূহ তাদেরকে অন্তত সিটির নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার দেওয়ার জন্য আন্দোলন ও লবিং করে যাচ্ছিল। নিউইয়র্কে ননসিটিজেনদের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে এর বৈপরীত্যও চোখে পড়ার মতো। গত আগস্ট মাসে টেক্সাস আইন পাস করেছে যে সেখানে অ্যাবসেন্টি ভোটাধিকার সীমিত করা হবে, ড্রপ বক্সের ব্যবস্থাও সীমিত হবে এবং দলীয় সমর্থকদের নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন প্রত্যক্ষ করার ক্ষমতা সীমিত করা হবে। জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এই পদক্ষেপটিকে চ্যালেঞ্জ করেছে, কারণ তারা মনে করে এর ফলে বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী এবং ইংরেজি না জানা ভোটাররা ভোট দানের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে।

নতুন মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রথমে ৩০ দিনের মধ্যে তার ভেটো প্রয়োগের সময়সীমাকে সংক্ষিপ্ত বললেও সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার পর তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। তিনি ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির প্রতি তার প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করেন। তবে ননসিটিজেনদের ভোটাধিকারের যারা বিরোধিতা করেন, তাদের বক্তব্য হচ্ছে এর ফলে ইমিগ্রান্টদের বড় একটি অংশ সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করা থেকে নিরুৎসাহিত হবে, যা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া হতে পারে না। ভারমন্টে ননসিটিেিজনদের ভোটাধিকারের আপত্তি জানিয়ে গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্টেটের সংবিধান লংঘন করা হয়েছে।