| বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলে মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য হালাল খাবার পরিবেশন এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন স্কুলে ছুটি ঘোষণার পর নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসন সিটির মসজিদগুলোতে আজানের অনুমতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে সিটিতে বসবাসকারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দীর্ঘদিনের আরেকটি দাবির অনুমোদন দিয়েছে। যদিও প্রাথমিকভাবে সিটির মসজিদগুলোতে পুলিশের পূর্বানুমতি ছাড়াই প্রতি শুক্রবার জু’মা নামাজের আগে এবং পবিত্র রমজান মাসে সন্ধ্যায় অর্থ্যাৎ ইফতার বা মাগরিব নামাজের আগে লাউডস্পিকারে যৌক্তিক আওয়াজে আজান দেওয়ার অধিকার স্বীকার করা হয়েছে, কিন্তু এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল নিউইয়র্ক সিটিতে মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ও প্রভাব বিস্তৃত হওয়ারও স্বীকৃতি মিলেছে।
শুধু নিউইয়র্ক সিটি নয় গোটা আমেরিকা জুড়ে দিন দিন ইসলামের প্রভাব বাড়ছে। প্রশাসনে মুসলমানের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবকিছু পর্যালোচনা করলে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলিম অধ্যূষিত এবং অন্যান্য দেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘু, সেসব দেশ থেকেও যেসব মুসলিম যুক্তরাষ্ট্রে আসছে, তারা যে শুধু অর্থ উপার্জন, অথবা ‘আমেরিকান ড্রিম’ বা উন্নত জীবনের আাশায় আসেনি বা অর্থাগমের জন্যই ব্যতিব্যস্ত থাকে না। তারাও মানবাধিকারে এই মহান ভূখণ্ডে নিজেদের জাতীয় ও ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় স্থান করে নিতে চায়।
এখন যেসব মুসলিম বৈধ ইমিগ্রেশন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে, স্থায়ী বাসিন্দা ও ন্যাচারালাইজড আমেরিকা এবং জন্মসূত্রে প্রথম প্রজন্মের মুসলিম আমেরিকান তারা এ দেশের সকল কর্মক্ষেত্র এবং অনেক ক্ষেত্রে নীতি নিধারণী পর্যায়ে স্থান করে নিয়েছে। ফলে আমেরিকায় ইসলাম আর এক শতাব্দী আগের স্বল্প পরিচিত ধর্মীয় বিশ্বাস নয়। আমেরিকানরাও ইসলামের বিধিবিধানকে এখন শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে। কারণ তারা আমেরিকার সকল ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটিতে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ অর্থ্যাৎ ৯ শতাংশ মুসলিম। কিন্তু এ পরিসংখ্যানের বাইরেও বহু মুসলিম রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
এই বিপুল জনগোষ্ঠী জনমত গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের তারা রীতিমতো ফ্যাক্টর। অতএব মুসলমানদের সামাজিক ও ধর্মীয় দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে সিটি প্রশাসন তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে এবং মুসলিম সত্তাকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। নিউইয়র্ক সিটির প্রায় ২৫০ টি মসজিদে লাউডস্পিকারে আজানের অনুমতি দান শুধু নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসকারী মুসলমানদের দাবির প্রতি স্বীকৃত দান নয়, বরং বিশ্ব মুসলিম ও সামগ্রিকভাবে ইসলামের রীতিনীতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
সিটি কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষভাবে সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস এজন্য প্রশংসার দাবিদার। মেয়রের ঘোষণার প্রেক্ষিতে সাধারণভাবে মুসলিম কমিউনিটি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। মুসলমানদের কাছে আজানের তাৎপর্য অপরিসীম রয়েছে, যা শুনে এক মুসলমানদের হৃদয়ে আধ্যাত্মিক আবহের সৃষ্টি হয়। আজানের ধ্বনি এক আবেশের সৃষ্টি করে যে, তাতে যে কারও তার আত্মায় আধ্যাত্মিক আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং নামাজি ও তাদের স্রষ্টার মধ্যে বন্ধন জোরদার হয়। উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালে ুক্তরাষ্ট্রে প্রায় শতাধিক মসজিদ ছিল। ২০০০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদ ছিল ১,২০৯টি এবং ২০১০ সালে মসজিদ সংখ্যা বেড়ে ২,১০২এ দাঁড়িয়েছে।
Posted ১:৫২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh