বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২২
ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তার সত্বেও স্কুল খোলা রাখায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা চরম উদ্বেগের মধ্যে কাটাচ্ছেন। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে সরাসরি অংশগ্রহণের পক্ষে থাকলেও বেশির ভাগ অভিভাবক চাইছেন ভাইরাসের বিস্তার রোধ না হওয়া পর্যন্ত তাদের সন্তানরা রিমোট পদ্ধতিতেই শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুক। নিউইয়র্ক টাইমসের ৪ জানুয়ারির এক খবর অনুযায়ী উইজকনসিনের এক গ্রামে বসবাসকারী মা নিজের সিদ্ধান্তেই তার ১৩ বছর বয়সী পুত্রকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ রেখেছেন, কারণ তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে চরম অসহায়ত্ব বোধ করছেন। নিউ জার্সির এক শহরের উপকণ্ঠে এক শিক্ষার্থীর মা একইভাবে হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন যে তার এলাকার বাসিন্দারা ব্যতিক্রম ছাড়া সকলেই ভ্যাকসিন নেয়া সত্বেও রিমোট লার্নিংয়ে ফিরে গেছে। শিকাগোর এক মা আশা করছেন যে সিটির স্কুলগুলোর শিক্ষকদের উচিত উদ্ভুত নতুন পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ রাখার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করা। কারণ তিনি চান না যে তার ১২ বছর বয়সী কন্যা স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভিড়াক্রান্ত ক্লাসে ফিরে যাক।
গত দুই বছর যাবতই স্কুল ছাত্রছাত্রীদের অবিভাবকদের মধ্যে এই শঙ্কা বিরাজ করছে। তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না যে তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন কিনা, স্কুল খোলা রাখা অথবা বন্ধ রাখার পক্ষে জোরের সঙ্গে দাবী তুলবেন। নিউইয়র্ক টাইমস এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্কুলে তাদের সন্তানদের ভাইরাস মুক্ত রাখার জন্য গৃহীত পদ্ধতির উপর তাদের আস্থা ও অনাস্থা সম্পর্কে জানতে চ্য়া। হাজার হাজার অভিভাবক এতে সাড়া দেন, যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থীদের মা এবং অভিমতে ভিন্নতা থাকলেও প্রায় সকলেই ব্যক্ত করেছেন যে, স্কুলে গৃহীত ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। শিকাগোর এক মা ক্যাথি নিয়েং বলেছেন, ‘আমার ভেতরে কান্্না চলছে।’ বোস্টনের দুই সন্তানের মা জুলিয়ানা গ্যাম্বল বলেছেন, ‘আমি অনেক কেঁদেছি। আমি আমার জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছি।’
মিনিয়াপলিসের কেট হ্যারি তার ৭ বছর বয়সী মেয়েকে গত সোমবার কেএন৯৫ মাস্ক পরিয়ে স্কুলে পাঠান এবং ৪ বছর বয়সী ছেলে বাড়িতেই রয়েছে, কারণ সে এখনো ভ্যাকসিন নেয়ার বয়স সীমার মধ্যে আসেনি। তিনি বলেন, ‘মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে প্যারেন্টিং এবং রিমোট শিক্ষা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। আমরা ক্লান্ত এবং গত দুই বছরে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করা অসাধ্য হয়ে গেছে।’ কেটের মত অনেক অবিভাবক তাদের সন্তানদের রিমোট শিক্ষায় বিচলিত বোধ করছেন। তারা চান তাদের সন্তানরা সশরীরে স্কুলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুক। অনেকে পরিস্থিতির কার্যকর সমাধান চান, কিন্তু তা কেউ নিশ্চিত করতে পারছে বলে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। নিউইয়র্ক সিটির হেদার মালিনের ৫ বছর বয়স্ক ছেলে সশরীরে কিন্ডারগার্টেনে যাচ্ছে, কিন্তু তার উদ্বেগ কমেনি। তিনি বলেছেন, ‘আমি চাই না যে স্কুল থেকে সে অনুপস্থিত থাকুক। আমি মনে করি না যে ওমিক্রন আমাদের সঙ্গে তেমন দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিদ্ধান্ত উদ্বেগজনক হলেও স্কুলে ভাইরাস টেস্ট করার সকল ব্যবস্থা বিদ্যমান এবং সকলেই পর্যাপ্তভাবে মাস্ক পরিধান করছে।’
উইজকনসিনের সিলভার লেকের এরিকা বেহলিং এর ১৩ বছর বয়সী মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে ভ্যাকসিন নিয়েছে এবং ভালোভাবে মাস্ক পরছে, কিন্তু আমরা পল্লী এলাকায় বাস করি, যেখানে করোনা মহামারীকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে আমরা অনুভব করছি যে আমাদের চারপাশের প্রাচীর আমাদেরকে সংকুচিত করে ফেলছে। আমার মেয়ে শঙ্কিত এবং আমার চরম অসহায়ত্ব বোধ করছি।
Posted ১১:১০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh