বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২২
নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। জ্বালানির মূল্যও যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য হার বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। সাধারণ মানুষ মূল্যবৃদ্ধিও চাপে দিশেহারা হয়ে এবংব বাইডেন প্রশাসন আশঙ্কা করছেন যে পন্যমূল্যে দ্রুত স্ফীতির কারণে সরকারের প্রতি আমেরিকানদের আস্থায় বড় ধরনের ভাঙন সৃষ্টি হবে। গত মাসের (ডিসেম্বর ২০২১) চেয়ে চলতি জানুয়ারি মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের মূল্যসূচক বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ। নিউইয়র্ক টাইমস অর্থনীতিবিদদের বরাত দিয়ে বলেছে যে ১৯৮২ সালের পর এই প্রথম এতো দ্রুততার সঙ্গে মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থাগুলো পূর্ববর্তী মাসগুলোর তুলনায় ডিসেম্বরে অধিক মূল্যে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পন্য সরবরাহ করছে, অতএব খুচরা বিক্রেতাদের উচ্চ মূল্যে পন্য বিক্রয় করা ছাড়া উপায় থাকে না। শুধু পন্যমূল্যই নয়, বাড়ির মূল্যও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে বাড়িভাড়াও বাড়ির ক্রয়মূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার অর্থনৈতিক নীতিবিদদের জন্য মাথা ব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্চ মূদ্রাস্ফীতি। বর্ধিত পন্যমূল্য শুধু সরকারের প্রতি অনাস্থার বিষয় নয়, আমেরিকান অর্থনীতির ভবিষ্যতেও অনিশ্চয়তার ছায়া বিস্তার করবে। ভোগ্যপন্য মূল্য সূচক অনুযায়ী গতবছর ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল্য সূচক বৃদ্ধি পেয়ে ৭ শতাংশে উঠেছে। এর আগে শেষ বার মূল্যসূচকে ৭ বৃদ্ধি পেয়েছিল ৪০ বছর আগে ১৯৮২ সালে।
নীতিনির্ধারকরা গত কয়েক মাস অপেক্ষা করেছেন মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসের। তারা আশা করেছিলেন যে সববরাহ ব্যবস্থায় যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা দূর হয়ে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে এবং ভোক্তাদের বর্ধিত চাহিদা অনুযায়ী পন্য সরবরাহ করে পন্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু বাসবে তা হয়নি। বরং করোনা ভাইরাসের নতুন বিস্তারে অনেক কলকারখানা লকডাউন করতে হয়েছে এবং সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট কারখানা, বন্দর, ট্রাকিং কোম্পানি এবং ওয়ারহাউজে কর্মীদের মধ্যে এতো বেশি ছড়িয়েছে যে উৎপান ও সরবরাহ ঘাটতি দূর করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিবহন ব্যয়ও আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশ থেকে পন্য আমদানির ক্ষেত্রে একই জটিলতার কারণে সরবরাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসেনি।
ফ্রেইটোস গ্রুপের ডাটা অনুসার চীন অথবা এশিয়ার অন্য কোন স্থান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে একটি ৪০ ফুটের কন্টেইনার ভাড়া গত সেপ্টেম্বরে ২০ হাজার ডলার, যা গত ডিসেম্বরে ১৪,৫৭২ ডলারে নেমে এসেছে। তা সত্ত্বেও কন্টেইনারের বর্তমান ভাড়া দুই বছর আগের ভাড়ার চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশি। শুধু ভাড়া বৃদ্ধি নয়, মালামাল পৌছতেও বিলম্ব ঘটছে। চীন থেকে পন্য নিয়ে একটি জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে পৌছতে এখন গড়ে ৮০ দিন সময় ব্যয় হচ্ছে, যা ২০১৯ এর চেয়ে ৮৫ শতাংশ বেশি সময়। এ অবস্থা চলতে থাকলে ক’মাস পর কী ঘটবে সেটিই হচ্ছে ২০২২ সালের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক নীতিগত প্রশ্ন।
অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইনফ্লেশন ইনসাইট’ এর প্রতিষ্ঠাতা ওমর শরীফ বলেছেন, “পন্য মূল্যে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি সাধারণ ক্রেতাদের জন্য বড় ধরনের আঘাত। কারণ তাদের আয় এই হারে বৃদ্ধি পায় না। তিনি ধারণা করছেন যে সার্বিক মুদ্রস্ফীতিও ৭ শতাংশের আশপাশে থাকবে এবং মুদ্রস্ফীতি একবার বেড়ে গেলে তা স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আনতে সরকারকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় এবং তিনি আশঙ্কা করছেন যে মুদ্রাস্ফীতির হার ২ শতাংশের পর্যায়ে নামিয়ে আনতে ২০২২ সাল শেষ হয়ে যাবে। গত ৬ জানুয়ারি বুধবার প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বেড়েছে ৬.৩ শতাংশ, কাপড়চোপড়ের মূল্য বেড়েছে ৫.৮ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভুত জিনিসের মধ্যে ব্যবহৃত কার ও ট্রাকের মূল্য বেড়েছে ৩৭.৩ শতাংশ।
Posted ৭:০২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh