বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ‘লিটল বাংলাদেশ এভেন্যু’র নামফলক উন্মোচন করা হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন রাস্তার পুন:নামকরণ ‘লিটল বাংলাদেশ এভেন্যু’র রুপকার কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারো। দিনটি ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং সে কারণে অনুষ্ঠানে ভিন্ন আমেজও বিরাজ করছিল। নামফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শতশত প্রবাসী বাংলাদেশি জড়ো হয়ে রাস্তার পুন:নামকরণের উদ্যোগ নেওয়ায় কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারোসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। সিটির কুইন্সে জ্যামাইকা এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে জ্যামাইকা এলাকার হিলসাইড এভেন্যু থেকে হোমলন এভেন্যু পর্যন্ত রাস্তার পুন:নামকরণ করা হয় ‘লিটল বাংলাদেশ এভেন্যু’। নিউ ইয়র্ক সিটির পাঁচটি বরো বা পৌরসভার মধ্যে কুইন্সের জ্যামাইকা অন্যতম। যদিও অপর দুই বরো ব্রুকলিন ও ব্রঙ্কসেও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি বাস করেন।
ব্রঙ্কসে ইতিমধ্যেই একটি সড়কের নামকরণ ‘বাংলা বাজার’ করা হয়েছে। অনুরূপ প্রক্রিয়া চলছে ব্রুকলিনেও। তবে কুইন্সের জ্যামাইকার হিলসাইড এভেন্যু’র সাটফিন থেকে শুরু করে কুইন্স ভিলেজসহ আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি বসবাস করছেন।
বাংলাদেশি বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ স্থায়ীভাবে বাস করছেন জ্যামাইকা এলাকায়। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারকে কেন্দ্র করে সেখানে বিস্তৃতি ঘটেছে বাংলাদেশি অভিবাসীদের। গড়ে উঠেছে একটি চমৎকার প্রতিবেশ ও পরিবেশ। স্থানীয় হিলসাইড এভেন্যুতে সাটফিনের ১৪৪ স্ট্রিট থেকে ১৭৫ স্ট্রিট পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশিদের ব্যবসায় বাণিজ্য। এলাকাটি এখন এক টুকরো বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। আর এই এক টুকরো বাংলাদেশকেই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ। জ্যামাইকার হিলসাইড এভিন্যুও ১৪৪ স্ট্রীট থেকে বাংলাদেশি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্র বিন্দুকে ‘লিটল বাংলাদেশ এভেন্যু’ নামকরণ করা হয়েছে। বিশেষ করে ১৬৯ স্ট্রিট, হোমলন স্ট্রিট ও হিলসাইড এভিন্যুর সংযোগস্থলটি প্রাধান্য পেয়েছে এই নামকরণের কেন্দ্র হিসেবে। এর আগে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সামনে ১৬৮ স্ট্রিটটির নামকরণ করা হয় ‘জেএমসি ওয়ে।’
কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারো’র সঞ্চালনায় রাস্তার পুন:নামকরণের নামফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কাউন্সিলওমেন নাতাশা উইলিয়ামস, এসেম্বলীওমেন জেনিফার রাজকুমারি, এসেম্বলীম্যান ডেভিড ওয়েপ্রিন, কুইন্স ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নি মেলিন্ডা কার্টজ, কমিউনিটি বোর্ড ৮ এর চেয়ারপার্সন মার্থা টেইলর, নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম, সাউথ এশিয়ান আমেরিকান ভয়েস এর ভাইস চেয়ার পার্সন রোন্ডা বিন্দা, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, সাধারণ সম্পাদক আল আমীন রাসেল কমিউনিটি নেতা মোহাম্মদ আমানুল্লাহ, কমিউনিটি নেতা নাসির আলী খান পল, মোর্শেদ আলম, ফর্মাসিস্ট নূর উদ্দিন, মোহাম্মদ তুহিন, ফখরুল আলম, বাহলুল সৈয়দ উজ্জল, নার্গিস আহমেদ, সাইফুল ভুঁইয়া, রাব্বি সাঈদ, দিলীপ নাথ, মোহাম্মদ আলী, রেজাউল করিম চৌধুরী প্রমুখ।
জেমস জিনারো তাঁর বক্তব্যে বলেন, নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভুতদের ৬৫ শতাংশই কুইন্সে বাস করেন। আজ আমরা কুইন্স বরোতে বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেক অবদানের স্বীকৃতি জানানোর একটি অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আনন্দিত, যা চমৎকার ও সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ ছিল।
ডিষ্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মেলিন্দা কাটজ বলেন, আমি জিম জিনারো এবং সকল আইন প্রনেতার সফল উদ্যোগের প্রশংসা করি, এবং আমি কৃতজ্ঞ যে তিনি এই বরোর প্রতিনিধিত্ব করছেন। আমি বাঙালি কমিউনিটির কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যারা আমাকে উদারভাবে তাদের হৃদয়ে স্থান দিয়েছেন। ‘লিটল বাংলাদেশ’ এখানে চিরদিনের মত থাকবে এবং পরবর্তী প্রজন্মও এটি দেখতে পাবে।
অ্যাসেম্বলি মেম্বার ডেভিড ওয়েপ্রিন বলেন, আমি নিউইয়র্কের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশী কমিউনিটিকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে কৃতজ্ঞ। আমার বন্ধু ও সহকর্মী বাংলাদেশীদের অবদানের সম্মানে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নামকরণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে উদ্যোগটিকে সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করায় আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। এখন থেকে যেকোনো শিশু এখানে ‘লিটল বাংলাদেশ’ সাইন দেখে উপলব্ধি করবে যে এই এলাকায় বাংলাদেশী কমিউনিটির বৃহত্তম অংশ বাস করে।
কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বার্ষিকীতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র যখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছে, তখন নিউইয়র্কের বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকায় একটি সড়কের ‘লিটল বাংলাদেশ’ নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য তিনি এ উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত সকলকে ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল নিউ ইয়র্ক সিটিতে অভিবাসী বাংলাদেশিদের একটি বৃহৎ সমাজ গড়ে উঠেছে। শুধু নিউ ইয়র্ক শহরেই দু’লক্ষাধিক বাংলাদেশি বসবাস করছেন। বহুজাতিক এ নগরীর কুইন্স কাউন্টি গোটা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৃহত্তম কাউন্টি। কুইন্সের ৪৭ শতাংশ বাসিন্দাই অভিবাসী। বাংলাদেশি অভিবাসীদের একটি বড় অংশের বসবাস কুইন্সের জ্যামাইকায়।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে ‘লিটল বাংলাদেশ এভেন্যু’ সংক্রান্ত বিলটি পাস হয়। এই বিল পাশে স্থানীয় কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারোর এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রথমেই বাংলাদেশ বা দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নামে জ্যামাইকায় একটি রাস্তার নামকরণ করার দাবি ওঠে। সেই দাবির লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কাউন্সিলম্যান জিম এফ জিনারোর মাধ্যমে কুইন্স বরো হল ও সিটি প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং চলছিলো। প্রবাসীদের পক্ষ থেকে পৃথক দু’টি গ্রুপ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরোত্তম-এর নামে একটি রাস্তার নামকরনের দাবি তোলেন। অপর একটি মহল ‘বাংলাদেশ’ নামে রাস্তার নামকরণের দাবি করেন যাতে কোন রাজনৈতিক বিভেদ সৃষ্টি না হয়। পরিশেষে ‘লিটন বাংলদেশ এভেন্যু’ নামকরণ চুড়ান্তকরণ করা হয়। বিলের নম্বর আইএনটি ২৪৭৭-২০২১। সিটি কাউন্সিলে বিলটি উত্থাপন করেন স্থানীয় কাউন্সিল ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ এর কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারো।
সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে সিটির ১৯৯টি রাস্তার নাম বিশিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দেশের নামে পুন:নামকরণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে ‘লিটল বাংলাদেশ এভেন্যু’ও নামও ছিল।
অপরদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই বেলা ২টার দিকে জ্যামাইকার বাংলাদেশী কমিউনিটির একটি পক্ষ মাইক্রোফোন হাতে অনানুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য শুরু করে দেন। এতে অনুষ্ঠানের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এডভোকেট কামরুজ্জামান বাবুর উপস্থাপনায় অনির্ধারিত এই পর্বে কমিউনিটি নেতা নাসির আলী খান পল, মোর্শেদ আলম, ফর্মাসিস্ট নূর উদ্দিন, ফখরুল আলম, বাহলুল সৈয়দ উজ্জল প্রমুখ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। পরবর্তীতে কাউন্সিলম্যান জিম জিনারো অনুষ্ঠান স্থলে আসার পর অনুষ্ঠানিকভাবে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর মুহূর্তে নেতৃবৃন্দসহ প্রবাসীদের ঠেলাঠেলি আর মঞ্চ দখলের মতো অবস্থানে এক পর্যায়ে কাউন্সিলম্যান জিম জেনারোকে সিটি পুলিশের সাহায্য নিতে হয়। তার আগে একবার এখানে আরেকবার ওখানে মঞ্চ স্থানের ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে এক হ-য-ব-র-ল আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। পুলিশ বেষ্টুনীতে আনুষ্ঠানিক পর্ব শেষে জিম জিনারো সড়কটির নাম ফলক উন্মোচন করেন।
Posted ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh