বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ ২০২২
নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ে এখন এক আতঙ্কের নাম। নিতান্ত বাধ্য না হলে কেউ সাবওয়ে ব্যবহার করতে চান না। করোনা ভাইরাস মহামারী থেকে এই মহানগরী যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ঠিক তখনই সাবওয়েতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণভাবে বেড়ে চলেছে। দুই সপ্তাহ আগে নতুন মেয়র সাবওয়ে নিরাপদ করার কঠোর প্রতিজ্ঞা উচ্চারণ করে সাবওয়ে থেকে হোমলেসদের উচ্ছেদ করতে অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োগের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে সাবওয়ে অপরাধ দু’শ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, “নিউইয়র্ক সাবওয়ে গণপরিবহনের পরিবর্তে বরং এক আতঙ্কের নাম, সাম্প্রতিককালে সিটিতে যত সংখ্যক সহিংসতা সংঘটিত হচ্ছে, তার অধিকাংশই ঘটছে সাবওয়েতে।
এছাড়া আরও লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, যতগুলো অপরাধ সাবওয়েতে ঘটছে, তা ট্রেনের ভেতর ঘটে থাকুক অথবা প্ল্যাটফর্মসহ সাবওয়ে স্টেশনে ঘটে থাকুক না কেন, প্রায় প্রতিটি ঘটনায় হামলার শিকার বাংলাদেশী, চাইনিজসহ এশীয় কমিউনিটির সদস্য। প্ল্যাটফর্ম থেকে ধাক্কা দিয়ে চলন্ত ট্রেনের সামনে ফেলে দেওয়া, হাতুড়ি দিয়ে আঘাত, ছুরিকাঘাত এবং ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে এশীয় চেহারার যাত্রীর ওপর ঘুষি মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলার মত ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের উইকএন্ডে সাবওয়েতে কমপক্ষে ছয়টি ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে।
নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাত দিনে সাবওয়েতে ৫৫টি অপরাধের ঘটনা পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে। ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় সাবওয়ে অপরাধ বৃদ্ধির হার ২০৫.৬ শতাংশ। অর্থ্যাৎ ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাবওয়ে অপরাধ ঘটেছিল ১৮টি। পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায় যে, চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫৮ দিনে পুলিশের কাছে নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়েতে সংঘটিত ৩৭৫টি অপরাধের ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট করা হয়েছে, পূর্ববর্তী বছর অর্থ্যাৎ ২০২১ সালের একই সময়ে ২১৭টি অপরাধের ঘটনা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছিল। ধারণা করা হয় যে, পুলিশে রিপোর্ট করা হয় না, এমন অনেক অপরাধ রয়েছে।
এনওয়াইপিডির কাছে এসব ঘটনার অধিকাংশকেই হেটক্রাইমের অংশ বলে অভিযোগ করা হয়, কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে হামলাকারীরা তাদের শিকারের ওপর হামলা করেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করে, কোনোকিছু লুণ্ঠনের চেষ্টা করে না। ভুক্তভোগীরাও অভিযোগ করেছেন যে তাদের যারা হামলা করেছে প্রায় ক্ষেত্রে তারা তাদেরকে নোংরা ভাষায় বর্ণবাদী গালি দিয়েছে এবং আমেরিকা থেকে চলে যেতে বলেছে, যার অন্যথা হলে তাদেরকে আরও কঠোর পরিণতি হবে বলেও হুমকি দিয়েছে এর বাইরে সিটিজুড়ে সংঘটিত অপরাধের মধ্যে গুলিবর্ষণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনা রয়েছে, তবে পুলিশ মনে করছে যে সিটিতে সার্বিকভাবে ভয়াবহ অপরাধের ঘটনা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং জন জে কলেজ অফ ক্রিমিনাল জাস্টিসের খণ্ডকালীন প্রফেসর জোসেফ গিয়াকেলন বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী কোভিড ১৯ এর ভয়াবহতা থেকে নিউইয়র্কাররা যখন নিজ পায়ে দাঁড়াতে যাচ্ছে, তখন তাদেরকে অপরাধের কথা ভাবতে হচ্ছে, যে অপরাধের শিকার তারও হতে পারেন। পুলিশ সাবওয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন সিটি প্রশাসন যদি চায় যে মানুষ কাজে ফিরে যাক তাহলে গণপরিবহনকে অপরাধমুক্ত করতে হবে। কারণ সাবওয়ে নিউইয়র্ক সিটির জীবনসূত্র। যাত্রীরা যদি সাবওয়ে ব্যবহার করতে ভয় পায় এবং এখন সাবওয়ে অপরাধের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে তাদের দ্বিধাগ্রস্থ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
এনওয়াইসি সাবওয়েডটকমে সিটির সাবওয়ে স্টেশনগুলোর মধ্যে ১০টি স্টেশনকে অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিপজ্জনক স্টেশন হিসেবে বর্ণনা করে এই স্টেশনগুলো ব্যবহারকারী যাত্রীদের বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট।
বিপজ্জনক এই স্টেশনগুলো হচ্ছে : (১) ম্যানহাটানের টাইমস স্কোয়ার স্টেশন, সেভেনথ এভিনিউ ৪২ স্ট্রিট; (২) ব্রডওয়ে স্টেশন, ২৩ স্ট্রিট, সেভেনথ এভিনিউ (৩) গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশন, ৪২ স্ট্রিট, পার্ক এভিনিউ; (৪) ব্রডওয়ে জংশন স্টেশন, ফুলটন স্ট্রিট, ব্রুকলিন; (৫) প্রসপেক্ট পার্ক এভিনিউ, লিঙ্কন রোড, ব্রুকলিন; (৬) ১৪৯ স্ট্রিট, গ্র্যান্ড কনকোর্স স্টেশন, ব্রঙ্কস; (৭) বাওরি স্টেশন, ডিলেন্সি স্ট্রিট; (৮) ব্রড চ্যানেল স্টেশন, ওয়েস্ট রোড, কুইন্স; (৯) হারলেম স্টেশন, ১২৫ স্ট্রিট, লেক্সিংটন এভিনিউ; (১০) ৭১ ফরেস্ট হিলস এভিনিউ স্টেশন, কুইন্স। এসব স্টেশনে নিকট অতীতৈ হত্যাসহ ভয়াবহ অপরাধের ঘটনা ঘটেছে এবং এখনও পুরোপুরি অপরাধমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সেজন্য পুলিশ যাত্রীদের প্রতি আহবান জানিয়েছে সদাসতর্ক থাকার।
Posted ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh