| বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে বেকার হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তা দান ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকাকে চলমান রাখতে সরকার কয়েক দফায় যে প্রনোদনা দিয়ে আসছিল গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফেডারেল সরকারের দেয়া সপ্তাহে ৩০০ ডলারের প্রনোদনা সকলের ক্ষেত্রে এবং স্টেট সরকারগুলো দেয়া বেকার ভাতা অধিকংশ সুবিধাভোগীর ক্ষেত্রে বন্ধ হয়েছে। আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট বন্ধ হওয়ায় অসংখ্য মানুষের আর্থিক ঝুঁকিতে পড়ার আশ্কংা সৃষ্টি হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শুরুতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য চালু করা হয় এই সুবিধা। করোনাজনিত কারণে অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় পরবর্তীতে এই সুবিধা আরো দুই দফা নবায়ন করে কংগ্রেস । আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট বন্ধ বেকার হবে প্রায় ৭৫ লাখ আমেরিকান। সাধারণভাবে ফেডারেল সরকারের দেয়া সপ্তাহে ৩০০ ডলার বেনিফিটসহ স্টেটের বেকারভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এখনো সংক্রমণের প্রকোপ শেষ না হওয়ায় বেশ কিছু স্টেটে আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট বহাল থাকবে বলে জানা গেছে। এদিকে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ লেবার সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় ১০ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের সূযোগ রয়েছে এবং কাজের বাইরে থাকা মানুষের সংখ্যা ৮৬ লাখ। তা সত্বেও শূন্য পদগুলো পূরণ হচ্ছে না এবং অনেক নিয়োগদাতা অতিরিক্ত উৎসাহ বা সুবিধার কথা বলেও কাঙ্খিত কর্মী পাচ্ছেন না।
যেসব ষ্টেট রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, ইতোমধ্যে সেই স্টেটগুলো আনএমপ্লয়মেন্ট কর্মসূটি বন্ধ করেছে যাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী নিয়োগ দিতে পারে। যেসব স্টেটে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বেশি সেসব স্টেটে কর্মসংস্থা ৪.৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সার্বিক পরিসংখ্যানে তা প্রতি আটজন বেকারের মধ্যে মাত্র একজনের কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে বেকার সাত জন শুধু যে কর্মহীন থাকছে তা নয়, বরং তাদের কোন আয়ই থাকছে না। করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিস্তারের কারণে আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট সম্প্রসারণের জন্য কংগ্রেসে চেষ্টা সত্বেও তা ইতিবাচক সাড়া পায়নি। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিস্তার হচ্ছে সেক্ষেত্রে রেকর্ড সংখ্যক কর্মীকে আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিটের বাইরে রাখা নীতিগত অবহেলা ছাড়া কিছু নয়। এর ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে বাধার সৃষ্টি হবে। বাইডেন প্রশাসন ও স্টেটগুলোকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আমেরিকানদের সেফটি নেট নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
লেবার ডিপার্টমেন্ট পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিউ মেক্সিকো, কানেকটিকাট, নেভাদা, নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়ায় বেকার মানুষের সংখ্যা জাতীয় গড় বেকার হারের চেয়ে ৫.৪ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতি ইন্স্যুরেন্স ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান ‘গ্যালাঘের’ এর এক সমীক্ষা অনুযায়ী বড় বড় কোম্পানিগুলো লোক নিয়োগের জন্য বোনাস, উচ্চতর বেতন, সুবিধাজনক কাজের সময় নিধারণের সুবিধসহ বিভিন্ন কৌশল কাজে লাগিয়েও লোকজনকে কাজে আকৃষ্ট করতে পারছে না। যার ফলে তারা মনে করছে যে করোনা পরিস্থিতি সম্ভবত স্থায়ীভাবে কর্মসংস্থানের বাজার চিত্রকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির গ্লোবাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর স্কট হ্যামিলটন বলেছেন, নিয়োগকর্তারা যত সুবিধা অফার করুন না কেন, তারা আর পুরনো কর্মীদের ফিরে পাচ্ছেন না। অনেক নিয়োগদাতা ৪১ শতাংশ সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করেছে, তবুও কর্মী পাচ্ছে না। এদিকে গত পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে চলতি সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে বেকার ভাতার আবেদন।শ্রম বিভাগের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে পূর্বের চেয়ে চার হাজার বেকার ভাতার আবেদন বেড়ে ৩ লাখ ৫৩ হাজারে পৌঁছেছে। এক সপ্তাহ পূর্বে আবেদনের মোট সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪৯ হাজার। বেকার ভাতার আবেদনের সংখ্যা প্রাক-মহামারী সময়ের স্তরে পৌঁছলে অর্থনৈতিক উন্নতি আরো শক্তিশালী হবে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অতি সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার ফলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে সাধারণ সময়ের তুলনায় বেকার ভাতার আবেদনও বাড়তে শুরু করেছে। ২০২০ সালের মার্চের আগে অর্থাৎ মার্কিন অর্থনীতি মহামারীর মাধ্যমে প্রভাবিত হওয়ার আগে সাপ্তাহিক বেকার ভাতার আবেদন ছিল গড়ে ২ লাখ ২০ হাজারের মতো। আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানবেতর পরিস্থিতির আশংকা প্রকাশ করেছেন প্রগতিশীল শিবিরের কংগ্রেসম্যানরা। তারা এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বেকার ভাতা পুনরায় চালুর জন্য। সারা আমেরিকায় এক কোটি ৫ লাখ কর্মজীবী মানুষের পরিবারের কথা বিবেচনায় রেখেই বেকার ভাতা অব্যাহত রাখা জরুরী। বেকার ভাতা বন্ধ হওয়ায় বিপুলসংখ্যক প্রবাসীও নাজুক অবস্থায় পড়বেন । করোনার মধ্যেই হারিকেন আইডার তাণ্ডবে ক্ষত-বিক্ষত বিস্তীর্ণ এলাকা। নিউইয়র্ক স্টেটও মারাত্মকভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছে সর্বশেষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে। তাই বিপদগ্রস্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে নাজুক অবস্থায় থাকা মানুষের স্বার্থেই ‘আনএমপ্লয়মেন্ট ইন্স্যুরেন্স’ ও কর্মসূচি অব্যাহত রাখা দরকার। এই ভাতা অবাহত রাখার কোন বিল কংগ্রেসে উঠানো হলেই তারা সমর্থন দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবেন না বলেও অঙ্গিকার করেছেন। বাইডেন প্রশাসন ও স্টেটগুলোকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আমেরিকানদের সেফটি নেট নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
Posted ১১:১০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh