| বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন আট লাখের বেশি আমেরিকান । যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে শীষে মৃত্যুর হিসাবে । করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা পাঁচ কোটির অধিক। যাঁরা কোভিডের ভ্যাকসিন নেননি বেশি মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। বেশি মানুষ মারা গেছেন ২০২০-এর চেয়ে ২০২১ সালে । এর মধ্যে বয়স্ক আমেরিকানদের প্রতি ১০০ জনে একজন করে মারা গেছে অর্থ্যাৎ মৃতের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ৬৫ বা তদুর্ধ বয়সের। গত বছরের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রায় দুই বছর অতিক্রম হতে চলেছে এবং এ পর্যন্ত সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা যাচাই করে দেখা গেছে বয়স্ক লোকজনই করোনা ভাইরাসের শিকার হয়েছেন বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় যারা মারা গেছে তাদের ৭৫ শতাংশ অথবা আট লাখের মধ্যে প্রায় ছয় লাখের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি ছিল। ৬৫ বছরের নিচের বয়সীদের মৃত্যু হার ছিল অনেক কম, প্রতি ১,৪০০ এর মধ্যে ১ জন। এখন আবার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গত ১১ সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে এক লাখ মানুষের । ওয়াশিংটনের সিয়াটলে করোনায় আক্রান্ত প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। এরপর পেরিয়ে গেছে ৬৫০ দিন । এ সময়ের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন আট লাখের বেশি মানুষ ।
দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৩১ জনের । গত শীতে প্রথমবার ভ্যাকসিনদান কর্মসূচি শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরও প্রায় তিন লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি বা বোস্টন শহরে যত মানুষ বাস করেন, এই আট লাখ মানুষের সংখ্যাটা তার চেয়েও বেশি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যত আমেরিকান প্রাণ হারিয়েছেন, করোনাভাইরাসে তার চেয়ে দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু দেখল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে মূলত করোনার তিনটি ঢেউয়ে মৃত্যু হয়েছে বেশি। প্রথম ঢেউ দেখা দেয় ২০২০ সালের এপ্রিলে। ওই সময় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি দেখেছিল নিউইয়কচলতি বছরের জানুয়ারিতে যখন দ্বিতীয় ঢেউয়ের চূড়া দেখা দেয়। তখন দিনে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা ছিল তিন হাজারের বেশি। এর মধ্যে আবার সম্প্রতি করোনার নতুন আরেক ধরন অমিক্রনের বিস্তার ঘটছে। শীতে অমিক্রন কতটা প্রকোপ ছড়াবে, সেটা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। তবে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে নতুন ধরনের বিস্তার ঠেকাতে বুস্টার, তথা ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এমনকি ভ্যাকসিন নেয়ার পরও বয়স্কদের সংক্রমণ ও মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস পায়নি। বিশেষ করে গত দুই মাসে বয়স্কদের সংক্রমণ হার অনেক বেড়ে গেছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট উল্লেখ করেছে। সেন্টারস অফ ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখনো যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক ১,২০০ এর অধিক লোক করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মারা যাচ্ছে এবং তাদের াধিকাংশই ৬৫ বছর বা তদুর্ধ বয়সের। ‘ ৬৫ বা তদুর্ধদের এখনো ভীতির দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে এবং তারা কাজে ফিরে যেতে পারছেন না। যেসব বয়স্ক ব্যক্তি এখনো ভ্যাকসিন নেননি, তারা অধিক সংখ্যায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, বড়দিনের ছুটিতে সাধারণ মানুষ ভ্রমণে বের হলে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রনের সংক্রমণ বাড়তে পারে। গত ১৯ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন এনবিসির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এই সতর্কবার্তা দেন তিনি। জনসাধারণকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তাঁদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এ ছাড়া যাঁরা এখনো টিকা ও বুস্টার ডোজ নেননি, তাঁদের এসব ডোজ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে ফাউসি বলেছিলেন, যাঁরা টিকা নেননি, তাঁরা সংক্রমিত ও গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। নিউইয়র্কে নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। করোনার ডেলটা ও উচ্চ সংক্রমণশীল অমিক্রন ধরনের কারণে দ্রুত বাড়ছে এ সংক্রমণ।
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৭ ডিসেম্বর সেখানে ২১ হাজার ২৭ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হলেও পরদিন গত ১৮ ডিসেম্বর এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৯০৮। নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, কয়েক সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে অনেকে বড়দিনের ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা বাতিল করেছেন, কেউ কেউ করোনা পরীক্ষা করছেন। বর্তমানে শনাক্তের হারও অনেক বেড়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের কর্মকর্তারা। নিউইয়র্কে গত ২২ সেপ্টেম্বর করোনা শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ, বর্তমানে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশে। গত ১৭ ডিসেম্বর এক দিনে ৩ হাজার ৯০৯ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আগের দিনের চেয়ে এ সংখ্যা ৭০ বেশি।
Posted ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh