| বৃহস্পতিবার, ০৩ মার্চ ২০২২
কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই রাশিয়া তার সামরিক শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সামরিক শক্তিতে দুর্বল ইউক্রেনের ওপর। ইউক্রেনের একমাত্র অপরাধ: কেন সে ন্যাটোতে যোগ দিতে চেয়েছিল? কেন সে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে মাখামাখি করতে চেয়েছিল? এই অজুহাত তুলে রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর এমন হামলা চালিয়েছে যে হামলা ইউরোপের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, অর্থাৎ বিগত ৭৫ বছরেও দেখা যায়নি। ইউক্রেনের পরাজয় রাশিয়ার বিজয় বলে চিহ্নিত হবে না। এই সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্যকে পুতিন ইউক্রেনকে অসামরিকীকরণ ও নাৎসি প্রবণতা মুক্তকরণ বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু প্রকৃত বিষয়টি তার সম্পূর্ণ উল্টা। সোভিয়েট ইউনিয়নের কমিউনিস্ট ডিক্টেটর জোসেফ স্ট্যালিন যে নিষ্ঠুর স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিলেন, সেটি ফ্যাসিবাদের চেয়েও নিকৃষ্ট ছিল। অনেকেরই প্রশ্ন: পুতিন কি জোসেফ স্ট্যালিনের পথেই হাঁটছেন? প্রেসিডেন্ট পুতিন কি তাঁর অন্তরের অন্তঃস্থলে ১৯৯১ পূর্ব বৃহত্তর সোভিয়েট ইউনিয়ন কায়েমের স্বপ্ন লালন করছেন? ইউক্রেন আক্রমণ কি তারই ড্রেস রিহার্সেল? কারণ, কিছুদিন আগে তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন: সোভিয়েট ইউনিয়নের প্রজাতন্ত্রগুলো উপযুক্ত সময়ের আগেই স্বাধীন হয়েছে। এই পটভূমিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলা বিবেচনা করতে হবে। এটি সাম্রাজ্য বিস্তারের মানসিকতা প্রকাশ।
সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙ্গে যে ১৫টি রাষ্ট্র স্বাধীন হয়, তারমধ্যে ইউক্রেনও ছিল। সোভিয়েট ইউনিয়ন একটি ট্রান্সকন্টিনেন্টাল, অর্থাৎ আন্তঃমহাদেশীয় দেশ। এত বিশাল একটি দেশ, যে ছিল আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরাশক্তির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত, সেই দেশ সোভিয়েট ইউনিয়নের ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হওয়াকে মেনে নিতে পারছিলেন না পুতিন। তখন তিনি ছিলেন সোভিয়েট গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির একজন অফিসার। সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে ক্ষমতা সংহত করার পর তিনি ভাঙ্গা সোভিয়েট ইউনিয়নকে জোড়া দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকতে পারেন। ইউক্রেন স্বাধীনভাবে থাকতে চেয়েছিল এবং স্বাধীন ইচ্ছাই হয়েছে ইউক্রেনের কাল। একবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং ন্যাটোর সদস্য হতে পারলে তাকে আর কেউ স্পর্শ করতে পারতো না। সেই সুযোগটাই নিলেন পুতিন। ইইউ এবং ন্যাটোতে জয়েন করার আগেই তিনি হিট করেছেন ইউক্রেনকে।
ইউক্রেনের লড়াই আত্মরক্ষার লড়াই। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই। কিন্তু যে ইউরোপ ও আমেরিকা ইউক্রেনকে উৎসাহিত করেছিল রুশ প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীন সত্তা নিয়ে টিকে থাকতে সেই ইইউ আজ তাদের ঘরের বাসিন্দা ইউক্রেনের সাহায্যে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসছে না। কারণ, সেখানে রাশিয়া আছে বলে? যত নীতি কথাই ওরা আওড়াক না কেন, ওরা শক্তের ভক্ত, নরমের যম। যেখানে রাশিয়া আছে, সেখানে আমেরিকা যায় না। আর যেখানে আমেরিকা আছে সেখানে রাশিয়া যায় না। ঐ যে কথায় বলে, কারা কারা যেন মাসতুতো ভাই? রাশিয়ার এই নির্লজ্জ বিভৎস হামলার মুখে আমেরিকা ও পশ্চিমাদের ভূমিকা হলো, পানিতে নামবো, কিন্তু চুল ভেজাবো না। এই যুদ্ধ কোথায় গিয়ে থামবে সেটা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। পুতিন কোথায় গিয়ে থামবেন সেটা একমাত্র তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না। পুতিন আকারে ইঙ্গিতে তাঁর পারমাণবিক বোমা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ইউরোপ ও আমেরিকার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া ইউক্রেন রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করতে পারবে না তা এর মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। অবশেষে ইউক্রেন কি গেরিলা যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাবে? সেটি নির্ভর করছে আমেরিকা এবং ইইউ এর দৃষ্টিভঙ্গিও ওপর।
Posted ৭:১১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ মার্চ ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh