| বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০২২
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান যত দ্রুত শেষ করার প্রত্যাশা প্রেসিডেন্ট পুতিন যেভাবে করেছিলেন সেভাবে সম্ভবত হচ্ছে না। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যেখানে দেশটির ওপর রুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা করা হয়েছিল সেখানে যুদ্ধের চৌদ্দ দিনেও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ক্রেমলিন আদৌ ইউক্রেনের ওপর সামরিক বিজয় পাবে কিনা। আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থোনি ব্লিংকেন তো বলেছেন, এই যুদ্ধে ইউক্রেন বিজয়ীও হতে পারে। দু’সপ্তাহে আগে ব্লিংকেনের এ কথা একেবারে হাস্যকর বলে মনে হলেও এখন অনেকে এর মধ্যে বাস্তবতার কিছু উপকরণ খুঁজে পেতে পারেন। এ পর্যন্ত রাশিয়া খুব স্বল্পসংখ্যক শহরই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। আবার একাধিক শহর ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ দখলমুক্ত করার ঘটনাও ঘটেছে। ইউক্রেনের সশস্ত্রবাহিনী ও জনগণ যেভাবে রাশিয়ান হামলাকে তাদের স্বাধীনতার ওপর আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করে জীবন বাজি রেখে প্রতিরোধ শুরু করেছে সে রকম মস্কো ও তার মিত্ররা আশা করতে পারেনি বলে মনে হচ্ছে।
একই সাথে রাশিয়ার এই ইউক্রেন অভিযান পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যে বিভাজন ও সংশয় ছিল তা দূর করে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেয়ার অবস্থায় নিয়ে গেছে তাও রাশিয়ান নেতাদের হিসাবের মধ্যে ছিল না। ফলে এক নজিরবিহীন অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার মুখে পড়েছে রাশিয়া। এমনকি রাশিয়ার কৌশলগত ও কাছের মিত্র দেশগুলোও এক ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছে। যার ফলে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের নিন্দা জানানোর জন্য জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে আনা প্রস্তাবে কেবলমাত্র রাশিয়া ছাড়া অন্য চারটি দেশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। চীন-ইরানের মতো কৌশলগত মিত্র দেশও এ ভোটাভুটিতে রাশিয়াকে সমর্থন না করে ভোটদানে বিরত থেকেছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, পশ্চিমা দেশগুলোর রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পর চীন রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক ও নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক রাশিয়া ও বেলারুশের সাথে সব ধরনের লেনদেন স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে। সুইফট এবং ডলার ইউরোর মতো বৈশ্বিক মুদ্রা লেনদেন ও রিজার্ভ সংরক্ষণে বিধিনিষেধের পর নিজেদের প্রতিষ্ঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান যখন লেনদেন বন্ধের ঘোষণা দেয় তখন পরিস্থিতি যে রাশিয়ার জন্য কতটা গুরুতর সেটি অনুমান করা যায়।
প্রশ্ন হলো, রাশিয়া কেন ইউক্রেন দখলের জন্য এই আক্রমণ করল আর সেই লক্ষ্য পুতিন কতটা অর্জন করতে পেরেছেন। ইউক্রেন আক্রমণের পূর্ববর্তী পুতিনের ঘণ্টাব্যাপী তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণটি অনুধাবনের চেষ্টা করলে কয়েকটি বিষয় সহজ হবে। প্রথমত, পুতিন রাশিয়াকে বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতাধর হিসেবে বিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের অবস্থানে নিয়ে যেতে চান। এ জন্য সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৪টি প্রজাতন্ত্রকে রাশিয়ার একীভূত করা হয়তো সম্ভব হবে না, তবে এসব প্রজাতন্ত্রকে রুশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার লক্ষ্য রয়েছে পুতিনের সামনে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্যই তিনি জর্জিয়া ও বেলারুশে হস্তক্ষেপ করেছেন। মধ্য এশিয়ার আজারবাইজান ও সর্বশেষ কাজাখস্তানে হস্তক্ষেপ করেছেন। এসব হস্তক্ষেপে তিনি যা অর্জন করতে চেয়েছিলেন তাতে তিনি সফল বলেই মনে হয়। রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতন্ত্র ছিল ইউক্রেন। ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ উপদ্বীপ ক্রাইমিয়া দখল করে সেটিকে রাশিয়ার সাথে অঙ্গীভূত করেছেন পুতিন।
সেই সাথে ডনবাসের রুশভাষী অধ্যুষিত অঞ্চলকে প্রক্সি দিয়ে দখলে নিয়েছেন। এসব উদ্যোগে এখনই ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটবে অথবা সঙ্কট উত্তরণ হবে কিনা তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে দুই সপ্তাহের যুদ্ধে বিশ্বব্যবস্থায় যে ঝাঁকুনি সৃষ্টি হয়েছে তাতে আমরা আগামীতে নতুন এক পৃথিবী বা বিশ্বব্যবস্থা দেখতে পাবো বলে মনে হয়। চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বে বিকল্প আন্তর্জাতিক লেনদেন ও আর্থিক ব্যবস্থা তৈরির জন্য যে কাজ শুরু হয়েছিল সেটি পরিপক্ব হওয়ার আগেই পশ্চিমা বলয় থেকে ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে পাল্টা আঘাত এসেছে রুশ অক্ষের ওপর। এই আঘাতের ফলে হয়তোবা বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরির উদ্যোগ দ্রুততা পেতে পারে। অথবা এই উদ্যোগ বেশ কিছু সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পড়তে পারে। যুদ্ধে জয়ের চেয়েও চলমান লড়াইটিকে ‘গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদের লড়াই’ হিসেবে চিহ্নিত করে যে প্রচার বাইডেন শুরু করেছিলেন তাতে পশ্চিমারা মোটা দাগে একই বিন্দুতে চলে এসেছে। এ সময়ে এটিকে বাইডেনের সাফল্য আর পুতিনের দাপটে চলার পথে ব্যত্যয় হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
Posted ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh