| বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে বিশ্ববাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে আবারো। এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন এ পর্যন্ত ছড়িয়েছে ২২ দেশে। ওমিক্রন-এর বিস্তার ঠেকাতে আফ্রিকার সাত দেশের ওপর ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নেওয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ। এরই মধ্যে নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হকুল ওমিক্রন ঠেকাতে রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। রেস্টুরেন্ট, গণপরিবহন, দোকানপাটসহ যেসব স্থানে জনসমাগম ঘটে সেসব স্থানে মাস্ক পরিধান করার উপর আরোপ করা হয়েছে বাধ্যবাধকতা। এরই আলোকে নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর ও সিটি মেয়র ইতপূর্বে শিথিল করা বিধিনিষেধগুলো মেনে চলা এবং বিশেষভাবে জনসমাগমের স্থানে মাস্ক পরিধান করার আহবান জানিয়েছেন।
যারা এখনো ভ্যাকসিন নেননি তাদের ভ্যাকসিন গ্রহণ এবং সন্দেহ হলে কোভিড টেস্ট করানো, নিয়মিত হাত ধৌত করা এবং প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি ছেড়ে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বলেছেন, যদিও এখন পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটিতে নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার কোন রিপোর্ট পাওয়া যায়নি, কিন্তু আমরা আশঙ্কামুক্ত হতে পারি না। সেজন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণ করা জরুরী।
বিজ্ঞানীরাও করোনা ভাইরাসের এই ধরন নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে রূপান্তরিত হয়ে নতুন এই রূপটি পেয়েছে। করোনার নতুন এই ভেরিয়েন্টকে ‘ভয়ংকর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তারা। এতটা ভয়ংকর ভেরিয়েন্ট তাঁরা দেখেননি। প্রথমে এই ভেরিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছিল বতসোয়ানায়। এরপর সেটি দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়।
এর পরপরই সেটি শনাক্ত হয়েছে হংকংয়ে। এসব তথ্য পাওয়ার পর থেকে ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট নিয়ে কিছু প্রশ্ন সামনে এসেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, এই ভেরিয়েন্ট কত দ্রুত ছড়ায় এবং টিকা নেওয়ার ফলে শরীরে যে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তা কি এই ভেরিয়েন্টকে ঠেকাতে সক্ষম? এই ভেরিয়েন্ট সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কী করতে হবে? এই ভেরিয়েন্ট অস্বাভাবিকভাবে এটি রূপান্তরিত হয়েছে এবং অন্য যেকোনো ভেরিয়েন্ট থেকে এটি আলাদা।
সব মিলে ৫০ বারের মতো জিন বিন্যাস পরিবর্তিত হয়ে নতুন ওমিক্রন ধরন রূপ পেয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, নতুন ভেরিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিনের যে রূপান্তর, সেটা উদ্বেগের। কারণ, এর বিরুদ্ধে শরীরে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা বা ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণে যে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, তা কাজ করবে কি না।
এইধরনের রূপান্তর একজন রোগীর শরীরেই সম্ভব, যিনি কি না এই ভাইরাস থেকে মুক্ত হতে পারেননি। নতুন এই ভেরিয়েন্ট চীনের উহানে শনাক্ত স্ট্রেইনের চেয়ে আলাদা। এই ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি। এ ছাড়া এই ভেরিয়েন্ট রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিতে পারে। ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। গবেষণাগার থেকে এর একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাবে।
কিন্তু যেসব প্রশ্ন উঠছে, তার সত্যিকারের উত্তর পাওয়া যাবে আসলে সংক্রমিত রোগীর পর্যবেক্ষণ করে। নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, এই ভেরিয়েন্ট নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউসি। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ভেরিয়েন্ট ছড়াবে না, এমনটা করা হয়তো সম্ভব। তবে প্রশ্ন হলো, আমরা কি এই ভেরিয়েন্টে সংক্রমণ কমাতে পারব?’ এই ভেরিয়েন্টটি ভিন্ন আচরণ করছে। মনে হচ্ছে, এটি ডেলটা ভেরিয়েন্টের চেয়ে বেশি সংক্রামক।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন দ্রুত শনাক্ত এবং বিশ্বের সঙ্গে নতুন এ ধরনটির গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য ভাগাভাগি করায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে ইউরোপের আরও চার দেশে ছড়িয়েছে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন। এর আগে ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়ামেও ধরনটি শনাক্ত হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জন্য পিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে যুক্তরাজ তারা বিশ্বের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে। এদিকে ইউরোপের নতুন চার দেশ- জার্মানি, ইতালি, চেক প্রজাতন্ত্র ও নেদারল্যান্ডসে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার নতুন এ ধরনটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যায়িত করার পর থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধের মতো পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে বিশ্বের অনেক দেশ। করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটেছে ৮ লক্ষাধিক মানুষের।
স্বজন হারাগণ শোক কাটিয়ে না উঠতেই ওমিক্রনের সংক্রমন নূতন করে ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। মারাত্নক এ মহামারীর হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে সমাজে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। মেনে চলতে হবে সবধরণের স্বাস্থ্যবিধি।
Posted ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh