শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

করোনায় বিধস্ত যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম

ডাঃ ওয়াজেদ খান   |   বৃহস্পতিবার, ০২ জুলাই ২০২০

করোনায় বিধস্ত যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম

গোটা বিশ্ব কাঁপিয়ে দিয়েছে মহামারি করোনা। কেড়ে নিয়েছে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ। ভেঙ্গে দিয়েছে শতাব্দী ধরে গড়ে উঠা অর্থনীতির ভিত। তছনছ করে দিয়েছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। কোথায় প্রভাব ফেলেনি প্রাণঘাতি এ মহামারি। করোনার ছোবলে আজ বিধস্ত যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম তথা প্রকাশনা শিল্প।

মূলধারার বাঘা বাঘা সংবাদপত্র ধরাশায়ী। কম্যুনিটি ভিত্তিক বিভিন্ন ভাষা-ভাষী মানুষের মুখপাত্র, ম্যাগাজিন, সাময়িকী, প্রিন্টিং প্রেস, সংবাদপত্রের এজেন্ট, নিউজ স্ট্যান্ড, বিতরণকারী সহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সবাই। সবচেয়ে বেশি মাশুল গুণতে হচ্ছে সংবাদ কর্মীদের। যারা নিরলসভাবে কাজ করে সংবাদ পৌছে দেয় মানুষের কাছে।


যুক্তরাষ্ট্রে মার্চের মাঝামাঝি করোনকালের শুরুতেই বড় ধরণের আঘাত আসে তাদের উপর। দ্রুত বন্ধ হতে থাকে ব্যবসায় বাণিজ্য। আয়ের উৎসে ভাটা পড়ে আকস্মিক। অর্থনৈতিক মন্দায় সংকুচিত হয়ে আসে প্রকাশনা শিল্পের বিস্তৃতি। যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী বিভিন্ন সংবাদপত্রের ৩৬ হাজার কর্মী চাকুরি হারান। অনেকের বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। পাঠানো হয়েছে সাময়িক ছুটিতে। শুধু তাই নয় বন্ধ হয়ে গেছে বিজ্ঞাপন নির্ভর অনেক সংবাদপত্র। গ্যানেট এর মতো জাতীয় এবং চেইন সংবাদপত্র কোম্পানী পড়েছে আর্থিক অনটনে। প্রতিষ্ঠানটির ২৪ হাজার কর্মীকে জুন মাস পর্যন্ত প্রতিমাসে ৫দিন করে বিনা বেতনে কাজ করতে হচ্ছে। চাকুরী ছাঁটাইয়ের ঢেউ লেগেছে ছোটবড় সব সংবাদপত্রেই। ওয়াশিংটন পোষ্ট বিষয়টিকে ‘কর্মী ছাঁটাই সুনামী’ বলে মন্তব্য করে।

করোনা প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয় মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে। নিউইয়র্ক সহ বিভিন্ন শহরে বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসায় বাণিজ্য। অনাকাংখিত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে সংবাদপত্র। পত্রিকা বিক্রি বা সংগ্রহের কেন্দ্র এবং পাঠক সংখ্যা হ্রাস পায় ব্যাপক ভাবে। ফলে যে সকল সংবাদপত্র দুর্যোগকালীন সময় প্রকাশনা অব্যাহত রাখে তারাও বাধ্য হয় পত্রিকার কলেবর ও সার্কুলেশন কমিয়ে দিতে। আধুনিক তথ্য প্রবাহের যুগে অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। তারপরও আবেদন কমে যায়নি সংবাদপত্র প্রকাশনার। ইউএনসি’র হুজম্যান স্কুল অব জার্নালিজম এন্ড মিডিয়ার তথ্যানুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৪ সাল থেকে এপর্যন্ত ১হাজার ৮০০ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেছে। তন্মধ্যে ৬০টি দৈনিক এবং ১হাজার ৭০০টি সাপ্তাহিক পত্রিকা। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ২৮৩টি দৈনিক এবং ৫ হাজার ৮২৯টি সাপ্তাহিক সহ মোট ৭ হাজার ১১২টি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। এছাড়া এথনিক বা কম্যুনিটি সংবাদ পত্র রয়েছে অসংখ্য। প্রায় প্রতিটি কম্যুনিটির মানুষ তাদের নিজস্ব ভাষায় নিয়মিত ও অনিয়মিত সংবাদপত্র প্রকাশ করে আসছে। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলো ‘এথনিক মিডিয়া’র আওতাভুক্ত। এসব সংবাদপত্র মূলত চলে কম্যুনিটির ব্যবসায় বাণিজ্য ও বিভিন্ন সংগঠনের বিজ্ঞাপনের অর্থে। স্থানীয় বাংলাদেশী পত্রিকাগুলোর সবক’টিই এখন বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। অন্যান্য কম্যুনিটির পত্রিকাও ফ্রি। কমিউনিটির উন্নয়নে এসব পত্রিকা পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।


নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোষ্ট ও ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের মতো পত্রিকার ৬০ থেকে ৮০ ভাগ আয়ের উৎস বিজ্ঞাপন। বাকিটা আসে গ্রাহকদের কাছ থেকে। চলমান আর্থিক মন্দার মাঝেও হয়তোবা এসব পত্রিকা টিকে থাকবে। তারপরও বিষয়টি আমলে নিয়ে সতর্কতা ও সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছে পত্রিকাগুলো। নিউইয়র্ক টাইমস সানডে এডিশনে বিভিন্ন বিভাগীয় প্রিন্টিংয়ে সংকোচন নীতি অবলম্বন করেছে। প্রতিনিয়ত তারা পর্যালোচনা করছে মিডিয়ার গতিবিধি।

কিন্তু ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে অন্যান্য সংবাদপত্র, সাময়িকী ও ডিজিটাল মিডিয়া। লস এঞ্জেলেস টাইমসও পড়েছে দুর্দিনে। দু’বছর আগে পত্রিকাটি কিনে নেন বিলিওনিয়ার চিকিৎসক ও শিল্পপতি প্যাট্রিক সুনশিয়ং। করোনাকালে প্রতিষ্ঠানটির ৪০ জন কর্মীকে ১৬ সপ্তাহের সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। নিউজার্সির স্টার লেজার সহ বিভিন্ন রাজ্যের বিপুল সংখ্যক সংবাদপত্র লসএঞ্জেলেস টাইমসের নীতি অনুসরণ করেছে। যা অব্যাহত থাকবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। দ্যা নিউইয়র্ক পোষ্ট, এম এম নিউইয়র্ক ও মেট্রো নিউইয়র্ক, দ্যা ডেনভার পোষ্ট, ইউক্লিড মিডিয়া গ্রুপ, জিও মিডিয়া গ্রুপ, ট্রিবিউন পাবলিশার্স, ফরচুন, বাজফিড, কনডি নাস্ট, গ্রুপ নাইন মিডিয়া সহ অনেক প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম কর্মী ছাঁটাই করেছে। তারাও পাড় করছে কঠিন সময়। পঞ্চাশ বছর ধরে ভারতীয় কম্যুনিটির প্রধান সংবাদপত্র হিসেবে পরিচিত ইন্ডিয়া এব্রড’র প্রকাশনা বন্ধ হয়েছে মন্দার কারণে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক ফ্যাশন, ভ্রমণ ও চিকিৎসা সাময়িকী।


বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রথম ধাক্কায় বন্ধ হয়ে যাওয়া সাপ্তাহিক পত্রিকার মধ্যে অন্যতম ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার ইন সিয়াটল’ ভক্স মেডিয়া ও গ্যানেট। এসময়টায় যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী চাকুরি হারান ৩ কোটি মানুষ। ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া এসোসিয়েশন বিশ্বের বড় বড় ২০টি সংবাদ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের উপর জরিপ চালিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মতে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রে চলতি বছর বিজ্ঞাপনের আয় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কম থেকেই যাবে। আর্থিক মন্দার কারণে এসোসিয়েটেড প্রেসের রিপোর্টারদের বেতন অর্ধেকে নেমে আসতে পারে এমন আশংকা করছে প্রতিষ্ঠানটি। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ সংবাদমাধ্যম ম্যাকক্ল্যাচি ব্যাংকক্রাপ্সি করেছে।

কম্যুনিটি সংবাদপত্র হিসেবে বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় নিউইয়র্ক থেকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোকে। কম্যুনিটি ব্যবসায় বাণিজ্য একে একে বন্ধ হয়ে যায়। মসজিদ, মন্দির, পার্টি হল সহ সর্বত্র নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় জন সমাগম। সংকুচিত হয়ে আসে পত্রিকা বিতরণের স্থান। পত্রিকা স্পর্শ করলে করোনার সংক্রমন ঘটতে পারে এমন শঙ্কাও ছিলো জনমনে। সবকিছু মিলে পত্রিকা প্রকাশনার বিষয়টি চলে যায় প্রতিকূলে। এমন একটি সময়ে নিউইয়র্কের শীর্ষ স্থানীয় ৯টি পত্রিকার সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস কাউন্সিল সাময়িকভাবে তাদের পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধের ঘোষণা দেয়। যা ছিলো সঠিক ও সময়োচিত একটি সিদ্ধান্ত। করোনার প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকতা ফিরছে জন জীবনে। খুলে যাচ্ছে নিউইয়র্কের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। এমতাবস্থায় পুনরায় পত্রিকা প্রকাশনা শুরু হয়েছে। তৃতীয় ধাপ শুরু হলে একে একে সবগুলো পত্রিকা ফিরে আসবে পাঠকের দ্বারে। তবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও পূর্বাবস্থায় ফিরতে হলে আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী বাংলাদেশী কম্যুনিটি বিনির্মাণে সংবাদপত্রগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। আবার সংবাদপত্রগুলোর প্রকাশনা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আমাদের কম্যুনিটিই পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। ফলে সংবাদপত্র ও কম্যুনিটি একে অপরের সম্পুরক হিসেবে হাঁটছে একই সমান্তরালে। এ ধারা অব্যাহত রাখার কোন বিকল্প নেই। করোনাকালে সৃষ্ট আর্থিক মন্দা বা এ দুর্দিন অবশ্যই কাটবে। নূতন স্বাভাবিকতায় উজ্জীবিত হবে বাংলাদেশী কম্যুনিটি। প্রাণস্পন্দন ফিরে আসবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠনে। মসজিদ, মন্দির, পার্টি হল গুলো ভরে উঠবে নিরুদ্বিগ্ন মানুষের আগমনে। মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্ভোগ কেটে যায় প্রাকৃতিক নিয়মেই। মহামারি করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত সংবাদপত্র আবার মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। আধুনিক তথ্য প্রবাহের যুগে মানুষের কাছে সর্বাগ্রে সর্বশেষ সংবাদটি পৌছে দেয়ার দায়ভার সংবাদপত্রের উপরই বর্তেছে।

advertisement

Posted ১১:০১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ জুলাই ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.