বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

কারোনা ভ্যাকসিন নিশ্চিত হোক বিশ্বের সব মানুষের জন্য

ডাঃ ওয়াজেদ খান :   |   বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

কারোনা ভ্যাকসিন নিশ্চিত হোক বিশ্বের সব মানুষের জন্য

শতাব্দীকালের ভয়াবহ মহামারি করোনায় বিধ্বস্ত গোটা বিশ্ব। সংক্রমিত হয়েছে প্রায় ৯ কোটি মানুষ । প্রাণহানি ঘটেছে ১৭ লাখেরও বেশী। ভেঙ্গে পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। বিপন্ন প্রায় গ্লোবাল ভিলেজ। করোনা ভাইরাস সংক্রমনের দ্বিতীয় ঢেউ এখন বইছে বিশ্বজুড়ে। এরই মাঝে ব্রিটেন সহ বিভিন্ন দেশে নূতন এবং ভয়ঙ্কর রূপে আবির্ভূত হয়েছে কোভিড-১৯। দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। তারপরও জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছে মহামারির ভ্যাকসিন আবিষ্কারে। টানেলের অপর প্রান্তে দেখতে পাচ্ছে আলোর ঝলকানি। করোনা ভ্যাকসিনের ব্যবহার ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে উন্নত দেশগুলোতে। ফাইজার ও মর্ডানার পর অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনও পেয়েছে অনুমোদন। বহুল প্রত্যাশিত এই ভ্যাকসিনের উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থা নিয়ে শুরুতেই বিশ্বব্যাপী চলছে বৈষম্য। দেখা দিয়েছে স্বার্থপরতা।

সম্পদশালী দেশগুলো তাদের নাগরিকদের জন্য কব্জা করে ফেলেছে প্রয়োজনেরও অধিক ভ্যাকসিন। সম্পন্ন করেছে নির্ধারিত মূল্যের জন্য বায়না ও চুক্তি পত্র। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ১.৫ বিলিয়ন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ক্রয় করেছে ভ্যাকসিনের ২ বিলিয়ন ডোজ। এ দেশ দু’টি ছাড়াও বিত্তশালী কয়েকটি দেশ নিশ্চিত করেছে ভ্যাকসিন ক্রয়ের বিষয়টি। চুক্তি করেছে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার, মর্ডারনা ও এস্ট্রাজেনেকা সহ পাঁচটি কোম্পানীর সাথে। মোট কথা ধনী দেশগুলো তাদের নাগরিকদের মৃত্যুঝুকি কমাতে গ্রহণ করেছে সর্বাত্মক ব্যবস্থা। অপরদিকে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিষয়টি রয়ে গেছে অনিশ্চিত। গণহারে না হলেও ধনী দেশগুলোতে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ। আগামী বসন্তকালের মধ্যেই উন্নত দেশগুলোর নাগরিক যাদের জন্য ভ্যাকসিন প্রয়োজন তারা তা পেয়ে যাবে সময়মতো ।


নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে ভ্যাকসিনের বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ এখন গুটিকয় দেশ, সংস্থা ও ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানীর হাতে। এর সাথে জড়িত আছে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া শ্রেনী। তবে এদের সবারই মূল উদ্দেশ্য মুনাফা লুটা। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার তাদের নিকট মুখ্য কোন বিষয় নয়। করোনা ভ্যাকসিন বন্টনের ক্ষেত্রে বিশ্বের দেশগুলোকে বিভক্ত করা হয়েছে তিন ভাগে। সেই সুযোগে ভ্যাকসিনের সুবিধা পেতে শুরু করেছে উন্নত আয়ের দেশগুলো। পক্ষান্তরে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মানুষের কাছে ভ্যাকসিন পুরোপুরি পৌছতে সময় লাগবে আরো চার বছর। অর্থাৎ ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ তারা পাবে পুর্ণ সুবিধা। যদি ভ্যাকসিনের উৎপাদন ও বন্টন প্রক্রিয়ায় দ্রুততা এবং সমতা না আনা হয়। অপেক্ষামান এ সময়ে তাদের ভাগ্যে যা ঘটার তাই ঘটবে। অনেক উন্নত দেশ, সংস্থা ও আন্তর্জাতিক অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান বরাবরই দরিদ্র দেশগুলোকে ঋণ দিতে আগ্রহী। কিন্তু দরিদ্র দেশের মানুষকে জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন যোগান দিতে অর্থায়ন করতে তাদের কোন উদ্যোগ আয়োজন নেই ভয়াবহ এ দুর্দিনে। অথচ বৈশ্বিক ব্যবসায় বাণিজ্য ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রয়োজন করোনা সংক্রমন প্রবণ বিশ্বের প্রতিটি দুর্বল মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য ও বিশ্ব মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে এর বিকল্প নেই। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে ভ্যাকসিন পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার।

জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিচ্ছে সম্পদশালী দেশের নাগরিকগণ। এসব দেশেও ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কারা পাবে তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। অপরদিকে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিষয়টি সম্পূর্নভাবে রয়ে গেছে অনিশ্চিত। বিশ্বের সব মানুষের জন্য যত সংখ্যক ভ্যাকসিন প্রয়োজন ২০২১ সালের শেষ নাগাদ তার অর্ধেক উৎপাদনে সক্ষম হবে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী কোম্পানীগুলো। ফলে এসময়ে দরিদ্র দেশগুলোতে মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ পাবে ভ্যাকসিন সুবিধা। সীমিতভাবে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের বড় একটি অংশ ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ধনিক শ্রেনী মওজুত করে ফেলায় বঞ্চিত হবে দরিদ্র দেশের মানুষ। ভ্যাকসিনের এই ভারসাম্যহীন বিতরণ ব্যবস্থায় বৈষম্য বৈশ্বিক অর্থনীতিকে আরো বিপর্যস্ত করবে। মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ে স্বার্থপরতার এ খেলা ভাবিয়ে তুলেছে মানবতাবাদীদেরকে।


এমনিতেই করোনা মহামারিতে ভেঙ্গে পড়েছে দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতি। সীমিত সম্পদ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে এসব দেশ। নানা কারণে সম্পদ, শিক্ষা ও মৌলিক অধিকার সমূহ থেকে বঞ্চিত দরিদ্র এসব জনগোষ্ঠি। করোনাকালে এসব দেশের মানুষকে ভ্যাকসিন বঞ্চিত করলে জাতিগত বৈষম্য হবে আরো প্রকট। মুখ থুবড়ে পড়বে বিশ্ব বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি নিজেদের জাতীয় পর্যায়ে সীমিত না রেখে এর বৈশ্বিক প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে বিত্তশালী দেশগুলোকে। আর এ মহৎ কর্মে এগিয়ে আসতে হবে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা, দানশীল ব্যক্তিবর্গ ও সম্পদশালী দেশ ও জাতিকে। সম্মিলিতভাবে অঙ্গীকার করতে হবে বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মহামারির কবল থেকে রক্ষা করার । নিশ্চিত করতে হবে করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের বিষয়টি। বিশেষ করে কোভিড টেস্টের সুবিধা, চিকিৎসা সামগ্রী ও প্রতিষেধক ভ্যাকসিন। কিন্তু বিত্তবানরা ব্যর্থ হয়েছে পর্যাপ্ত অর্থ সহ এসব সাহায্য সামগ্রীর নিশ্চয়তা বিধানে। নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও শক্তিমত্তা প্রদর্শণে ধনী দেশগুলো যুদ্ধবিগ্রহে জড়ায়। ব্যয় করে বিপুল পরিমান অর্থ। অথচ মানুষের জীবন মরণ প্রশ্নে এখন নীরব ভূমিকা পালন করছে তারা। তারপরও থেমে নেই। হৃদয়বান মানুষরা এগিয়ে আসছে করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে। বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের সহযোগিতার হাত। “এ্যাক্ট এ্যাকসেলারেটর পার্টনারশীপ” নামে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন অনুদান দিয়েছে প্রায় ৫বিলিয়ন ডলার। তারা কাজ করছে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গড়ে তোলার লক্ষ্যে। সংস্থাটি বিশ্বের অনুন্নত দেশের মানুষের নিকট ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা সামগ্রী পৌছে দিতে চায়। উদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিন বাজারজাত করে মোটা অংকের মুনাফার কথা ভাবছে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সত্যি কি এখন মুনাফা করার সময়? ধনী দেশগুলোর মানুষ ভ্যাকসিন নিয়ে বেঁচে থাকবে। আর ভ্যাকসিনের অভাবে দরিদ্ররা মারা যাবে এটা অমানবিক। অচিরেই হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতি।

রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, সুপার মার্কেট, খেলার মাঠ, সবকিছু জমজমাট হয়ে উঠবে। ব্রিটেন, জার্মানী, ফ্রান্স কানাডা সহ ধনী দেশগুলো ফিরবে নূতন স্বাভাবিকতায়। কিন্তু কি হবে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের। ঋণের ভারে জর্জরিত দরিদ্র দেশগুলোর ক্ষমতা নেই উচ্চমূল্যে ভ্যাকসিন ক্রয়ের। প্রাইভেট ক্রেডিটররাও নিয়েছে মুখ ফিরিয়ে। অপরাগতা প্রকাশ করেছে দরিদ্র দেশগুলোকে ভ্যাকসিন ক্রয়ে ঋণ দিতে। এ ব্যাপারে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আই এম এফ হতাশ করেছে বিশ্ববাসীকে। মহামারি প্রতিরোধে দরিদ্র মানুষের মাঝে গণহারে ভ্যাকসিন প্রদানের সুযোগ সৃষ্টিতে মিলছে না আন্তর্জাতিক সাড়া। এমন মানবিক মূল্য বোধহীনতায় জাতিসংঘও অবাক। প্রখ্যাত প্রতিষ্ঠান কোভাক্স দরিদ্র দেশগুলোতে সহনীয় মূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহের ইচ্ছে প্রকাশ করলেও তা সম্ভব হচ্ছে না মুনাফা লোভী বড় কোম্পানীগুলোর সীমিত উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রিত বিধি নিষেধের কারণে।
কোভিড ভ্যাকসিন নেয়ার পর কদাচিৎ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে। কিন্তু এই ভ্যাকসিনের সবচেয়ে বড় পাশ্বপ্রতিক্রিয়া হবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। আর তা হবে অত্যন্ত সুদূর প্রসারী। মহামারিতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলো ভ্যাকসিন বঞ্চিত হলে সেসব দেশে সৃষ্ট সমস্যা ক্ষতিগ্রস্থ করবে বৈশ্বিক অর্থনীতির ভবিষ্যত।


যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে যাবে অসম্পূর্ন। এতে বছরে ১৫৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হবে বিশ্ব বাণিজ্য। ‘র‌্যান্ড করপোরেশন’র সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য বেড়িয়ে এসেছে। বিশ্ব বাজার পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরাতে হলে প্রয়োজন ভ্যাকসিন প্রাপ্ত ও মহামারি মুক্ত শ্রমিক শ্রেনী। বিশ্বের প্রতিটি দেশ যখন বলবে তার দেশের মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছে; শুধুমাত্র তখনই বিশ্ব বাণিজ্য ফিরতে পারবে স্বাভাবিকতায়। এজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন বিতরণে ভারসাম্য আনা ও সুষম বন্টন নিশ্চিত করা। তা না হলে দেশে দেশে মহামারিতে মানুষ মরতেই থাকবে। তখন ভ্যাকসিনের একমাত্র এবং সবচেয়ে বড় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়ে দেখা দিবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অসমতা। গোটা বিশ্বকে সচল ও শক্তিশালী দেখতে হলে ধনবান রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দানশীল ব্যক্তিবর্গকে এগিয়ে আসতে হবে মানবসেবায়। করোনা সংক্রমন প্রবণ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য নিশ্চিত করতে হবে ভ্যাকসিন।

advertisement

Posted ৭:২২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1400 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.