বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

ক্ষমতায় ভারসাম্যহীনতার পথে যুক্তরাষ্ট্র সরকার

ডা. ওয়াজেদ খান :   |   বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

ক্ষমতায় ভারসাম্যহীনতার পথে যুক্তরাষ্ট্র সরকার

আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র। গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জুড়ি নেই। সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান ও শক্তিমত্তায় অপ্রতিদ্বন্দ্বি এ দেশটি এখন ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০কে কেন্দ্র করে চলমান সংকট হচ্ছে আরো ঘনিভূত। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একগুয়েমী ও অদূরদর্শীতায় আভ্যন্তরীন রাজনীতি অনেকটাই বিপর্যস্ত। গোটা জাতি বিভক্তির দ্বারপ্রান্তে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসে নিহত দু’লাখ মানুষের লাশের উপর দাঁড়িয়ে বাহাস করছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফলাফল তার বিপক্ষে গেলে তিনি তা মানবেন না। তার মাঝে এধরণের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠায় জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। সাধারণ মানুষ ক্রমেই অনাগ্রাহী হয়ে উঠছেন নির্বাচনের প্রতি।


আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল আদালত পর্যন্ত গড়াবে এমন ধারণা ক্রমেই বদ্ধমূল হয়ে উঠছে। প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউজে আসীন হওয়ার পর থেকেই নানাবিধ বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশ বিদেশে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন তিনি। তার জারিকৃত অনেক নির্বাহী আদেশ খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। সবকিছু মিলিয়ে তারপরও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মাঝে অটুট ছিলো ক্ষমতার ভারসাম্য। যা ‘চেকস এন্ড ব্যালান্সেস’ নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং সংবিধানের অনিন্দ্য সৌন্দর্য্য এই ভারসাম্য এখন বিনষ্ট হওয়ার পথে। এমন সংশয় জনমনে দানা বাঁধছে নির্বাচন সামনে রেখে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রুথ ব্যাডার গিন্সবার্গের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আরো প্রকট হয়ে উঠছে এই শংকা। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চেকস এন্ড ব্যালান্সসেস বা ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম ভরকেন্দ্র সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি রুথ গিন্সবার্গের মৃত্যুতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মাঝে রক্ষণশীল অর্থাৎ রিপাবলিকান এবং উদারনৈতিক বা ডেমোক্র্যাট দলীয় যে সমর্থন ছিলো তা ক্ষুন্ন হওয়ার পথে। সুপ্রিম কোর্টের ৯জন বিচারপতির মধ্যে প্রধান বিচারপতি সহ ৫জনই রক্ষণশীল ঘরানার। বাকি উদারপন্থী ৪ জনের মধ্যে রুথ গিন্সবার্গ ছিলেন অন্যতম। এখন তার মৃত্যুতে উদারনৈতিক বিচারপতির সংখ্যা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে ঠেকল ৩ জনে। উল্লেখ্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগদাতা হলেন, প্রেসিডেন্ট। তবে এজন্য তাকে সিনেটের সংখ্যাধিক্যের অনুমোদন নিতে হয়। ফলে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতিদের পদ কখনো শূণ্য হলে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট তখন নিয়োগ দেন সেই পদে।


আর স্বভাবতই তিনি হয় নিয়োগদাতা প্রেসিডেন্টের নিজ দলীয় মনোভাবাপন্ন। এটা দেশটির সংবিধান স্বীকৃতি নীতি। সে অনুযায়ী রুথ গিন্সবার্গের শূণ্য পদে বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার অধিকার বর্তেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপর। বলাবাহুল্য এ সুযোগ ট্রাম্প কখনোই হাতছাড়া করবেন না। তিনি ইতোমধ্যে সে ধরণের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছেন। তাছাড়া সিনেটে রয়েছে রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এসব নিয়ে বড় ধরণের রাজনৈতিক ধাক্কায় পড়েছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও তাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। নির্বাচনে হেরে গেলে ট্রাম্প নিঃসন্দেহে আদালতমুখী হবেন। সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের আনুকূল্য পাওয়ার বিষয়টি কঠিন হবে জো বাইডেনের জন্য। ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলটির প্রার্থী আলগোর পড়েন এ ধরণের সংকটে। পপুলার এবং ইলেকটোরাল ভোটে জয়লাভ করলেও সুপ্রিম কোর্টের মারপ্যাচে জিতে যান জর্জ ডব্লিউ বুশ। ইতিহাসের এমন পুনারাবৃত্তি ঘটলে তা গোটা দেশ ও জাতির জন্য ডেকে আনবে ভয়াবহ পরিণতি। এসব কারণেই যুক্তরাষ্ট্র সরকারে ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়টি চলে আসছে আলোচনার শীর্ষে। দেখা যাক কি আছে এ ভারসাম্য বা চেকস এন্ড ব্যালেন্স এ।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রধান তিনটি শাখা-আইন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ। আইন বিভাগ হলো ইউএস কংগ্রেস। এর উচ্চকক্ষ সিনেট এবং নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস। এই বিভাগের কাজ হলো রাষ্ট্রের জন্য আইন প্রণয়ন করা। দ্বিতীয় হলো নির্বাহী বিভাগ। প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্টের মন্ত্রী পরিষদ নিয়ে গঠিত এ বিভাগ। কংগ্রেসে প্রণীত আইন কার্যকর করাই নির্বাহী বিভাগের মুখ্য কাজ। তৃতীয় হলো বিচার বিভাগ। যা সুপ্রিম কোর্ট এবং দেশ ব্যাপী বিস্তৃত অন্যান্য ফেডারেল কোর্ট নিয়ে গঠিত। বিচার বিভাগ, সংবিধান ও আইন পর্যালোচনা করে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে কোর্ট।


যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সরকারের প্রধান এই তিন স্তম্ভের মধ্যে চমৎকার ও কার্যকর এই ভারসাম্য বজায় রাখার নীতি সংযুক্ত করা হয়েছে। সংবিধানের ১নং ধারায় ২৩৩ বছর আগে ১৭৮৭সালে ‘চেকস এন্ড ব্যালান্সেস’ সন্নিবেশিত করা হয়। প্রাচীন রোম এবং গ্রীক সরকার ব্যবস্থা থেকে এমন ধারণা নেন তৎকালীন সময়ে সংবিধান প্রণেতাগণ। আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেন যুক্তরাষ্ট্রের ফাউন্ডিং ফাদারগণ। সরকারের ক্ষমতার ভারসাম্য প্রসঙ্গে অন্যতম ফাউন্ডিং ফাদার জেমস ম্যাডিসন এক মন্তব্যে বলেন, “মানুষ ফেরেশতা হলে রাষ্ট্রে কোন সরকারের প্রয়োজন হতো না।” এ কারণেই সরকারে অপরিহার্য হয়ে উঠে ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়টি। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ব্যবস্থায় আইন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ নিজ নিজ এখতিয়ারভুক্ত ক্ষমতার বাইরে যেতে পারে না। কোন একটি শাখা ক্ষমতার অপব্যবহার করার চেষ্টা করলেই আটকে দেয় অপর দুই শাখা।

সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতার ভারসাম্য বিন্যস্ত করা হয়েছে খুবই সুনিপুনভাবে। যেমন প্রেসিডেন্টের একটি নির্বাহী আদেশ আটকে দিতে পারে আইন বিভাগ সিনেটের। আবার আইন বিভাগের প্রণীত একটি বিলে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন প্রেসিডেন্ট। কংগ্রেসে গৃহীত আইন চূড়ান্ত পাশের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষর যেখানে প্রয়োজন। ভেটো শক্তি বলে প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর না করলে সেই বিল কংগ্রেসে সংখ্যাধিক্যের ভোটে গৃহীত হয়ে যাবে।

কংগ্রেসের পাশকৃত আইন জুডিশিয়াল রিভিউ ক্ষমতা বলে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে আটকে দিতে পারেন সুপ্রিম কোর্ট। আবার কংগ্রেস সংবিধানে সংশোধনী এনে অকার্যকর করতে পারে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ। সুপ্রিম কোর্ট অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে বাতিল করতে পারে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ। অথচ এই প্রেসিডেন্টই নিয়োগ দেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের। আর এভাবেই সরকারে বজায় রাখা হয় ভারসাম্যতা। চেক্্স এন্ড ব্যালেন্সের প্রক্রিয়াকে প্রতীকি তুলনা করা হয় কাগজ, কাঁচি এবং পাথরের সাথে। এক্ষেত্রে আইন বিভাগকে কাগজ, নির্বাহী বিভাগকে কাঁচি এবং বিচার বিভাগকে তুলনা করা হয় পাথরের সাথে। যেমন আইন বিভাগের একটি বিলের কাগজে কাঁচি চালাতে পারেন প্রেসিডেন্ট। আবার সেই কাঁচিকে পাথর মেরে গুড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে কোর্ট।

পক্ষান্তরে আইন বিভাগের কাগজ ক্ষমতা বলে ঢেকে দিতে পারে গোটা পাথরকে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারে ক্ষমতার এ ভারসাম্য নিয়ে বড় ধরণের কোন সংঘাত বা সংকটের তেমন নজির নেই। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ভারসাম্যহীনতার কারণে দেশে দেশে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানগণ হয়ে উঠেন স্বেচ্ছাচারী। ফলে রাষ্ট্রে কায়েম হয় এক নায়কতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ। এক ব্যক্তিই নিয়ন্ত্রণ করেন সবকিছু। আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয় দেশের মানুষ। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রুথ গিন্সবার্গের মৃত্যুতে সৃষ্ট শূণ্যতা সরকারের চেকস এন্ড ব্যালান্সের প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক কারণে সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরে ভারসাম্যহীনতা কাজ করলে তা গোটা জাতির জীবনে দীর্ঘমেয়াদী বিভক্তি রেখা টানতে পারে। আর ট্রাম্প প্রশাসন হাঁটছে সেই ভারসাম্যহীনতার পথেই।

advertisement

Posted ২:০৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1399 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.