শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

জো-বাইডেনের অভিষেক ও নজিরবিহীন নিরাপত্তা

ডা. ওয়াজেদ খান   |   বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

জো-বাইডেনের অভিষেক ও নজিরবিহীন নিরাপত্তা

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনের অবসান ঘটছে। ব্যর্থ হয়েছে ক্যাপিটল হিল দখলে নেয়ার ট্্রাম্পের ভয়ানক অভ্যত্থান প্রচেষ্টা । সূচিত হয়েছে গণতন্ত্রের বিজয়। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জোসেফ বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস অভিষিক্ত হবেন ২০ জানুয়ারি, বুধবার। বিশ্ববাসীর দৃষ্টি এখন যুক্তরাষ্ট্রের ৫৯তম এ অভিষেকের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো-বাইডেন শপথ গ্রহণ করছেন ২০ জানুয়ারী দুপুরে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম চত্বরে অনুষ্ঠেয় অভিষেকে পরবর্তী চার বছর দায়িত্ব পালনের জন্য নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনকে ৩৫ শব্দের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম ধারার ৮উপধারায় শপথ বাক্যের বিষয়বস্তু সন্নিবেশিত আছে। বাইবেলের উপর বাম হাত রেখে ডান হাত উঁচিয়ে শপথ বাক্য পাঠ করার রীতি চলছে ২৩২ বছর ধরে। মাত্র এক মিনিটের এই শপথ অনুষ্ঠানের জন্য এতো বিশাল আয়োজনের রেকর্ড পৃথিবীর কোথাও নেই। গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্বের সর্বাধিক আলোচিত এ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিপুল বিজয়ের ৭৯ দিন পর অনুষ্ঠেয় ঐতিহ্যবাহী এই অভিষেকে থাকবে প্রেসিডেন্টের ভাষণ, অভিষেক বল, প্যারেড সহ উৎসব আয়োজন। মঞ্চে একসাথে এক হাজার ৬শত অতিথির আসনগ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে। তন্মধ্যে সিনেটর, কংগ্রেসম্যান, সকল রাজ্যর গর্ভণর ও অতিথিদের জন্য থাকবে বিশেষ আসন। মহামারি করোনায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট সংকটের মধ্যে এবারের অভিষেক হবে অনেকটাই অনাড়ম্বর। প্রথানুযায়ী অভিষেক অনুষ্ঠানে দেশী বিদেশী ২০ হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সিনেট ও হাউজ প্রতিনিধিদের নির্বাচনী এলাকার জন্য বিতরণ করা হয় ২ লাখ আমন্ত্রণ পত্র। এছাড়া উন্মুক্ত ময়দানে দাঁড়িয়ে লক্ষ, লক্ষ মানুষ উপভোগ করেন অভিষেকের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। এবার থাকছে না তেমন আয়োজন। শুধুমাত্র ১১৭তম কংগ্রেস সদস্য এবং তাদের প্রত্যেকের পছন্দনীয় একজন অতিথি অংশ নিতে পারবেন অনুষ্ঠানে। অতিথিদের জন্য মাস্ক পরিধান, কোভিড টেস্ট থাকছে বাধ্যকতামূলক। এবারের অভিষেককে কেন্দ্র করে ক্যাপিটল হিল এলাকা সহ গোটা ওয়াশিংটন ডিসি ঢেকে ফেলা হচ্ছে নিরাপত্তার চাদরে। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বাহিনী নিশ্চিত করছে নজিরবিহিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অভিষেক সফল করতে গঠিত কমিটি কাজ করছে রাতদিন। মঞ্চ তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে।

জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের দিন ২০ জানুয়ারি কী হতে চলছে, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। ট্রাম্প সমর্থকদের ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেছে আমেরিকা। জো বাইডেনের শপথে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সশস্ত্র সমর্থকরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এমন আশঙ্কা জানিয়ে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা- এফবিআই। কোনো রকম অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য ওয়াশিংটন ডিসিসহ ১২টি জারি হয়েছে রাজ্যে চূড়ান্ত সতর্কতা। রাজধানী ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিলকে মুড়ে ফেলা হয়েছে কড়া নিরাপত্তা বলয়ে। ওয়াশিংটনে মোতায়েন করা হয়েছে ২০ হাজার ন্যাশনাল গার্ড। ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ওয়াশিংটন সৌধে জারি হয়েছে পর্যটন নিষেধাজ্ঞা। জো বাইডেনের শপথকে সামনে রেখে ট্রাম্পের উগ্র সমথর্করা ব্যাপক পরিকল্পনা করছে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ও ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে জড়ো হওয়ার। আগামী ১৭ জানুয়ারি ডাক দেয়া হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে গোপন সমাবেশের। ট্রাম্পের কট্টরপন্থী সমর্থকদের ১৬টি দল, যার মধ্যে কয়েকটি সশস্ত্র, তারা ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য নিবন্ধন নিয়েছে। ক্রমবর্ধমান হামলার আশঙ্কা এবং অনভিপ্রেত ঘটনাগুলো সত্ত্বেও বাইডেনের উদ্বোধনী কমিটি রাজনৈতিক ও জনস্বাস্থ্য সঙ্কটের সময়ে বিভক্ত জাতিকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বাইডেন নিজে অনুষ্ঠানটি খোলা জায়গায় উপস্থিত হয়ে করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমেরিকান প্রেসিডেন্টের এবারের শপথের থিমটি হ’ল ‘আমেরিকা ইউনাইটেড’। বাইডেন আমেরিকার ৩ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডবউ বুশ এবং বারাক ওবামার সাথে আর্লিংটন জাতীয় সমাধি পরিদর্শন করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।যেকোন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঠেকাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৭টি বিভাগের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ওয়াশিংটনে নিয়োজিত করা হচ্ছে নিরাপত্তা রক্ষার্থে। সিনিয়র কর্মকর্তা নিরাপত্তা পরিস্থিতিটিকে ‘নজিরবিহীন’ বলে অভিহিত করেছেন।


নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে অভিষেকে অংশ নিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে আরো তিনজন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বর্জন করেন অভিষেক । প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসন সর্বশেষ ১৮৬৯ সালে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট উইলেসিস অভিষেক বয়কট করেন। শপথ গ্রহণের পর জো বাইডেন হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। এদিন তার বয়স হবে ৭৮ বছর ৬১দিন। অপরদিকে জন এফ কেনেডির পর দ্বিতীয় ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট হবেন জো বাইডেন। অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট অভিবাদন গ্রহণ করবেন বর্ণাঢ্য প্যারেডের। সশস্ত্র বাহিনীর সকল বিভাগের সম্মিলিত প্যারেড তাদেরকে নিয়ে যাবে হোয়াইট হাউজে। মহামারির কারণে এবার থাকছে না অভিষেক বল পর্ব । প্রথানুযায়ী অভিষেকের পূর্বে ১৭ জানুয়ারী পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের ফিলাডেলফিয়া শহর থেকে প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের পরিবার ১৩৫ মাইলের ট্রেন যাত্রা শুরু করবেন।প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬১ সালে ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে পর্দাপণের পূর্বে ১২ দিনে কয়েকটি রাজ্য ভ্রমণ সম্পন্ন করেন।

জো-বাইডেনও অনুসরণ করেছেন তাকে। ১৯৩৯ সালে ফ্লোরিডায় তৈরী জর্জিয়া-৩০০ নামের প্রাইভেট ট্রেনটিতে সবধরণের আধুনিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। সাম্প্রতিককালে প্রেসিডেন্ট জর্জবুশ, বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামা অভিষেকের পূর্বে এই ট্রেনে ভ্রমণ করেন। যাত্রাপথে ডেলওয়ার রাজ্যের উইলমিংটন ও ম্যারিল্যান্ডের বাল্টিমোরে ক্ষণিক বিরতি শেষে ধীর গতির ট্রেনটি ১৮ জানুয়ারী সন্ধ্যা সাতটায় ওয়াশিংটন ষ্টেশনে পৌছবে। ২০ জানুয়ারী সকাল সাড়ে ১১টায় মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম আঙ্গিনায়। শুধুমাত্র আমন্ত্রিত টিকিটধারী অতিথিগণ অভিষেক স্থলে যেতে পারবেন। প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড অনুষ্ঠিত হবে অপরাহ্ন আড়াইটায় পেনসিলভেনিয়া এভিন্যুতে ৩য় এবং ১৭ স্ট্রীটের মাঝে।


অভিষেকে ব্যয় হবে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার। ২০ জানুয়ারী থেকে জো-বাইডেন তার স্ত্রী জিল বাইডেনকে নিয়ে উঠবেন হোয়াইট হাউজে। অভিষেকের পূর্বেই জো-বাইডেন চূড়ান্ত করেছেন তার কেবিনেটের সদস্যদের নিয়োগ। যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্ববাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে জো-বাইডেনের স্বাগত ভাষণ শুনতে। একুশে জানুয়ারীর উষালগ্ন থেকে শুরু হবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনের শাসন কাল। যুক্তরাষ্ট্রের স্মরণকালের ভয়াবহ আভ্যন্তরীন অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা ও অস্থিরতার মধ্যে জো-বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশ্ববাসী। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্বে শপথ গ্রহণ সংবিধানিকভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটিতে ১৯৮৯ এর ৩০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন জর্জ ওয়াশিংটন। এরপর থেকে প্রথানুযায়ী চলে আসছে অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা। প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যানবুরা থেকে জিমি কার্টার পর্যন্ত অভিষেক অনুষ্ঠিত হয় ক্যাপিটাল হিলের পূর্বাঙ্গনে। ১৯৮১ সালে রোনাল্ড রিগ্যান প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম চত্বরে। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের তারিখ ছিলো ৪ মার্চ।

সংবিধানের ২০তম সংশোধনীর মাধ্যমে তা ২০ জানুয়ারী নির্ধারণ করা হয়েছে। কোন কারণে ২০ জানুয়ারী রোববার পড়লে প্রধান বিচারপতি আগের দিন শনিবার প্রাইভেটলী প্রেসিডেন্টকে শপথ বাক্য পাঠ করান এবং পরবর্তী সোমবার অতিথি অভ্যাগতদের মাঝে সম্পন্ন করেন পুরো আনুষ্ঠানিকতা। ১৮১২এর যুদ্ধ এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন ক্যাপিটল হিলের বাইরে ওয়াশিংটন ডিসির অন্যস্থানে অনুষ্ঠিত হয় শপথ গ্রহণ। এছাড়া প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হাওয়ার্ড টিফট ও রোনাল্ড রিগ্যানের ৮৫এর অভিষেক প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে অনুষ্ঠিত হয় ক্যাপিটল হিলের অভ্যন্তরে। প্রতিটি শপথ গ্রহণ অবশ্য প্রধান বিচারপতি দ্বারা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ১৭৮৯ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ১৫ জন প্রধান বিচারপতি, একজন সহযোগি বিচারপতি এবং একজন নোটারী পাবলিকও প্রেসিডেন্টের শপথ বাক্য পাঠ করান।


advertisement

Posted ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1394 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.