| বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা গত বছরের এই সময়ের মত ভীতিকর পর্যায়ে না থাকলেও আক্রান্ত ও মৃত্যু থামছেই না। গত ১২ অক্টোবর মঙ্গলবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ছিল ৭৩৪,৭৯৭ জন এবং আক্রান্ত সংখ্যা ছিল ৪৫,৩২৭,৩৯২ জন।
যুক্তরাষ্ট্রে ৫৬ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ এবং ৬৫ শতাংশ মানুষ এক ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার পরও ফেডারেল কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত হতে পারছেন না যে তাদের পক্ষে পুরোপুরি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া বন্ধ করা অথবা পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা সম্ভবপর হবে কিনা।
কারণ আমেরিকানদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ধর্মীয় অথবা ভ্যাকসিনের চেয়ে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর আস্থার কারণে ভ্যাকসিন নিতে সম্মত নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অনেক স্টেট বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগের সকল কর্মীর জন্য ভ্যাকসিন নেওয়া বাধ্যতামূলক করার পরও দেখা গেছে যারা ভ্যাকসিন নিতে আদৌ আগ্রহী নয় তারা ভ্যাকসিন না নিয়ে বরং চাকুরিচ্যুতিকেও মেনে নিচ্ছে অথবা নিজেরাই পদত্যাগ করছে। নিউইয়র্ক স্টেটের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েল গত সপ্তাহে ভ্যাকসিন না নেয়ার কারণে প্রায় ১,৪০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে চাকুরিচ্যুত করেছে। ফায়ার ডিপার্টমেন্ট অফ নিউইয়র্ক ভ্যাকসিন নেয়াকে বাধ্যবাধকতার মধ্যে নিয়ে আসার ঘোষণা দেয়ার পর সংস্থাটির প্রায় ৭০০ কর্মী পদত্যাগ করার হুমকি দিয়েছে। নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
ভ্যাকসিন নিতে চান না এমন আমেরিকানের সংখ্যা এক কোটির অধিক বলে জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে একটি প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের এলার্জি ও সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা: অ্যান্থনি ফাউচি সম্প্রতি বলেছেন, ৭ লাখের অধিক লোকের প্রাণহানির ঘটনা আমাদের ব্যথিত করেছে ও আমাদের বিবেককে প্রচণ্ড নাড়া দিয়েছে। যে হারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখনো মারা যাচ্ছে তাতে বলা যায় না যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।
গত বছরের মার্চ মাসে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল প্রতিষ্ঠান সেন্টারর্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এক লাখ মানুষের মৃত্যুর আশংকা করেছিল। কিন্তু বাস্তবে মৃতের সংখ্যা সকলের সকল অনুমানকে অতিক্রম করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মত চিকিৎসাবিজ্ঞানে উন্নত দেশে দেড় বছরে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ধারণা করা যায় না। কিন্তু তা ঘটেছে।
স্টেট-ওয়ারিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা গেছে ক্যালিফোর্নিয়ায়, যেখানে মোট মৃত ৭০,১৫০, টেক্সাসে ৬৭,০৫০, ফ্লোরিডায় ৫৬,৬৬৭, নিউইয়র্কে ৫৪,৭৪৯, পেনসিলভেনিয়ায় ৩০,০৫৮, ইলিনয়ে ২৭,৬৫৭, জর্জিয়ায় ২৭,১৪২ জন। কোনো কোনো স্টেটে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কম। সমগ্র বিশ্বে করোনাচিত্র একইভাবে ভীতিকর। বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর এক বছরে মৃত্যু হয়েছিল ২৫ লাখ মানুষের। অথচ পরের ২৫ লাখের মৃত্যু হলো মাত্র আট মাসের মাথায়।
গত সাত দিনে গোটা বিশ্বে মৃত্যুর অর্ধেকই যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও ভারতে। গত এক সপ্তাহ ধরে বিশ্বে প্রতিদিন আট হাজার মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছে। ডেল্টা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণের পাশাপাশি দেশগুলোর ভ্যাকসিন বৈষম্য ও ভ্যাকসিন নেওয়ার অনীহাও মৃত্যু হার বৃদ্ধির একটি কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বের ৪৫.৫ শতাংশ মানুষ কমপক্ষে এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষও এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের আওতায় আসেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, তাদের ১৯৪টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৮৭টিতেই ডেল্টা সংস্করণ পাওয়া গেছে।
করোনার কয়েক দফা ঢেউয়ের মধ্যে এ ধরনটি সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিশ্বে। ডাব্লিউএইচও চলতি সপ্তাহে জানিয়েছে, কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় যেসব দেশ তুলনামূলক কম টিকা পেয়েছে, তাদের বেশি পরিমাণে টিকা সরবরাহ করা হবে। জনসংখ্যা অনুপাতে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১৪০টি দেশে কোভ্যাক্স ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ শিগগিরই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে।
Posted ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh