মোহাম্মদ আজাদ | বৃহস্পতিবার, ০২ জুলাই ২০২০
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আসছে নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে সম্ভবত ধরাশায়ী হতে যাচ্ছেন। নির্বাচনের আর মাত্র ৪ মাস বাকি। এখন পর্যন্ত সবগুলো সংস্থার জনমত জরিপে যে চিত্র ফুটে উঠেছে সেটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। এবিসি নিউজ, ওয়াশিংটন পোস্ট, কুইনিপ্যাক, সিএনএন, দ্যা হিল ও ফক্স নিউজের জরিপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বি জো বাইডেনের চেয়ে ১০ পার্সেন্ট পয়েন্টে পিছিয়ে রয়েছেন। রিপাবলিকান রক্ষণশীলদের গোড়া সমর্থক ফক্স নিউজ চ্যানেলের জরিপে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ৯পার্সেন্ট পয়েন্টে। রয়টার্সের সর্বশেষ জরিপে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সেটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য অতিমাত্রায় বেদনাদায়ক। রয়টার্সের সবশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে ৩ নভেম্বরের নির্বাচন যদি এখন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পরাস্থ করবেন ১৩ পার্সেন্ট ভোটের ব্যবধানে। জরিপে ৪৮ পার্সেন্ট উত্তরদাতা বলেছেন তারা আসছে নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে ভোট দেবেন। ৩৫পার্সেন্ট উত্তরদাতা বলেছেন তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভোট দিতে ইচ্ছুক।
সিএনএন’র রাজনৈতিক বিশ্লেষক খ্রীস চিলিজার বিশ্লেষন থেকে জানা যায়-খ্রীস লিখেছেন মাত্র একদিন আগে কিছু সুয়িং স্টেটের জরিপ প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে নভেম্বরের নির্বাচন যদি এ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয় তাহলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট প্রাথী জো বাইডেনের কাছে শুধুমাত্র পরাজয় বরণ করবেন একথা বললে ভুল হবে। নির্বাচনে ট্রাম্প এতটা শোচনীয়ভাবে হারবেন যেখানে হার-জিত এর পার্থক্য হবে পর্বত সমতুল্য। জরিপটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনাকলে-জরিপে দেখা যাচ্ছে ২০১৬ সালের নির্বাচনে কিছু সুয়িং স্টেটে ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন। যেসব সুয়িং স্টেটে ট্রাম্প এখন তার ডেমোক্র্যাট চ্যালেঞ্জার জো বাইডেনের নিকট পরাস্ত হতে যাচ্ছেন। বলা হয়েছে মিশিগানে জো বাইডেন জয়ী হতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে ১১ পার্সেন্ট বেশী ভোট পেয়ে। মিশিগানে বিপুল সংখ্যক আরব আমেরিকান বসবাস করেন। ২০১৬ সালে সেখানকার মসজিদ ও মুসলিম কমিউনিটিতে প্রচারণা করার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন আমি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে পরে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল নিয়ে যেকোন দর কষাকষিতে আমেরিকা নিরপেক্ষ থাকবে। কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর নিলর্জ্জভাবে ইসরাইলকে সমর্থন করেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে আরব কমিউনিটি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলো। কিন্তু এবার ট্রাম্প সেখানকার মুসলিম ভোটগুলো পাচ্ছেন না। মিশিগানের দ্বিতীয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠী হচ্ছেন মুসলিম। জরিপে বলা হচ্ছে উইসকনসীনে বাইডেন ১১ পার্সেন্ট, পেনসিলভেনিয়ায় ১০ পার্সেন্ট, নর্থ ক্যারোলিনায় ৯ পার্সেন্ট, আরিজোনায় ৭ পার্সেন্ট এবং ফ্লোরিডায় ৬ পার্সেন্ট বেশী ভোট পাবেন। সিএনএনের এ বিশ্লেষনে বলা হয়েছে, মিশিগান, উইসকনসীন, পেনসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, আরিজোনা এবং ফ্লোরিডাতে যদি ট্রাম্প জয়ীও হন তাহলেও ইলেকটোরাল ভোট হিসেবে বাইডেন পাবেন ৩৩৩ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট এবং ট্রাম্প পাবেন ২০৫ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। কোন প্রার্থী জয়ী হতে প্রয়োজন ২৭০ ইলেকটোরাল ভোটের। গত বুধবারের কুইনিপ্যাক ইউভার্সিটির সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে ১১পার্সেন্টের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। ফক্স নিউজ চ্যানেলের জরিপে বলা হয়েছে বাইডেন ৯ পার্সেন্টে এগিয়ে রয়েছেন। জরিপে দেখা যাচ্ছে সুয়িং ভোট ওহয়াইও যদি কোন রকমে বাইডেনের অনুকুলে চবলে যায় তাহলে বাইডেনের ইলেকটোরাল ভোটের পরিমাণ হবে ৩৫১।
‘দেস মনিস’ রেজিস্টার পোল থেকে জানা যায়। আইওয়াতে ট্রাম্পের অবস্থা এবার ডুবুডুবু। আইওয়া যদি বাইডেনের দখলে চলে যায় তাহলে বাইডেনের ইলেকটোরাল ভোটের পরিমাণ হবে ৩৫৭। শুধু কি তাই? কুইনিপ্যাক ইউনিভার্সিটির এক জরিপে দেখা যাচ্ছে টেক্সাসে আর কোন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। সর্বশেষ টেক্সাসে ১৯৭৬ সালের নির্বাচনে সাবেক ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু একাধিক জরিপে দেখা যাচ্ছে এবার টেক্সাসের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বলা হচ্ছে টেক্সাসে এবার নিশ্চিত রিপাবলিকান প্রার্থী জয়ী হতে যাচ্ছেন সেকথা বলা যাবে না। জরিপে বলা হয়েছে এবার টেক্সাসে যদি ট্রাম্প হেরে যান তাহলে আশ্চর্য্য হবার থাকবে না। জয়ী হবার জন্যে বাইডেনের টেক্সাস ফ্লোরিডা, ওহাইও, নর্থ ক্যারোলিনা বা আরিজোনা দখল না করলেও চলবে। যদি না জো বাইডেন মিশিগান উইসকনসীন এবং পেনসিলভেনিয়াতে জয়ী হন তাহলে তিনি পাবেন ২৭৪ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট।
দ্যা ব্রুক পলিটিক্যাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, মিশিগান ছিল ‘টস আপ’ বা ভাগ্য নির্ধারনী স্টেট। কিন্তু মিশিগান এবার ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে যাচ্ছে। দ্যা কুকের এক বিশ্লেনে বলা হয়েছে, নিশ্চিতভাবে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জয়ী হবে ও জয়ী হতে পারে এসব স্টেটগুলো হিসেব করলে এ মুহূর্তে জো বাইডেন পাবেন ২৪৮ ইলেকটোরাল ভোট। অন্যদিকে নিশ্চিতভাবে রিপাবলিকান প্রার্থী হবেন ও হতে পারেন সেইসব স্টেটগুলো হিসেব করলে এ মুহূর্তে ট্রাম্প পাবেন ২০৪ ইলেকটোরাল ভোট। দ্যা কুক বলেছে এরপর বাকী থাকে ৮৬ ইলেকটোরাল ভোট। এই ৮৬ ইলেকটোরাল ভোট হচ্ছে ‘টস-আপ’ বা ভাগ্য নির্ধারণী। এই ৮৬ ইলেকটোরাল ভোটের ২৬ পার্সেন্ট যদি জো বাইডেন জয়ী হন তাহলে তিনি হচ্ছেন পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জয়ী হতে হলে ৮৬ টস আপ ভোটের মোট ৭৫ পার্সেন্ট জয়ী হতে হবে। তবে ট্রাম্পের পক্ষে সেটা এক প্রকার অসম্ভব।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন নির্বাচনের বাকি মাত্র ৪ মাস। এই স্বল্প সময়ের মাঝে বিশাল ব্যবধান কমিয়ে আনা ট্রাম্পের পক্ষে সম্ভব নয়। জ্বালাময়ী বক্তৃতার স্থলে ট্রাম্পের রয়েছে গোড়ামী উগ্র আচরণ, বর্ণবাদী আচরণ ও লাগাম ছাড়া কথন। ট্রাম্পের এমন সময় অজনপ্রিয়তায় ট্রাম্প শিবির এখন যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। তবে রিপাবলিকানদের ভোট ব্যাংক রক্ষণশীলদের মাঝে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। কিন্তু শুধুমাত্র রক্ষণশীলদের ভোট দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া ট্রাম্পের পক্ষে সম্ভব নয়। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে আসছে নভেম্বরে ট্রাম্পের ভরাডুবি সময়ের ব্যাপার মাত্র।
Posted ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh