| বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ ২০২২
নতুন সিইসি প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তিনি ও তার সহযোগীরা কাজ করবেন। আমরা তার শুভ কামনা করি এবং তাকে স্বাগত জানাই। তার অঙ্গীকারের পাশাপাশি তিনি যদি বলতেন, বিগত দুই নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতাগুলোকে স্মরণ করে তা থেকে দূরে থাকার সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা থাকবে বলে আমরা আশা করি।
তাদের দুর্বলতাগুলোর কারণে দুই সংসদ নির্বাচন ‘ফান’ বলে দেশে-বিদেশে সর্বত্রই সেটি গভীর হতাশা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তা ছাড়া বিগত দিনে তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য এতটুকু অনুতাপ তারা তো প্রকাশ করেননি, বরং আত্মপ্রসাদের ঢেঁকুর তুলেছেন বারবার।
বিগত দুই কমিশনই সংবিধান সংরক্ষণের শপথ গ্রহণ করেছিল বটে; কিন্তু তাকে উচ্চকিত করেনি। সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে স্বশাসিত এবং তাদের কর্মসম্পাদন তথা নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বাধীন হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু তাদের সামগ্রিক কার্যক্রম তাদেরকে একটি ‘অনুগত প্রতিষ্ঠান’ বানিয়ে দিয়েছে। তাদের আচরণে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ‘অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী’ বলে মনে হয়েছে। আমাদের সংবিধানকে নানা বিবেচনায় ‘অনন্য’ অভিহিত করা হয়। তার একটি কারণ হয়তো এটাই যে, এই সংবিধান দেশকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সেখানে যথেষ্ট বিধিবিধান সন্নিবেশিত রয়েছে। আর গণতন্ত্রের প্রাণবায়ু তো নির্বাচন, তাকে পরপর দু’টি কমিশন ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা দেখেছি বর্তমান সিইসি ও একজন কমিশনার তো পুরোপুরি আইনের মানুষ, তাদের জীবন আইন নাড়াচাড়ার মধ্যে কেটেছে। অপর একজন নির্বাচন কমিশনের সচিবের দায়িত্ব পালনে সুবাদে নির্বাচনী আইন কানুন তার নখদর্পণে। তাই সবাই আশা করেন, এই কমিশন আইনের চেতনার প্রতি তাদের বিনম্র শ্রদ্ধা রাখবেন এবং তার বিধানগুলো প্রতিপালনের ক্ষেত্রে কিছুমাত্র ব্যত্যয় তাদের হবে না যে ব্যত্যয় আমরা অতীতে লক্ষ করেছি।
আমরা বিশ্বাস করি, আইন মানুষ ও সমাজকে শৃঙ্খলার বাঁধনে আবদ্ধ করে। মানুষের অধিকারের সুরক্ষা, যাবতীয় বৈষম্য বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করে। সেই সমাজেই সব সুরক্ষিত, সভ্য, সুন্দর সুশৃঙ্খল যেখানে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত। তবে একটা কথা ব্যক্তি সমাজকে অবশ্যই মনে রাখতে এবং অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বুঝে নিতে হবেÑ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ষোলো আনার ১০ আনা, বাকি ৪ শতাংশ কিন্তু পুরোপুরি সরকারের এবং বাকি ২ শতাংশ ক্ষমতাসীনদের বাইরে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের। সে জন্য সব দায় কমিশনের ঘাড়ে চাপানো যুক্তিসঙ্গত নয়। বরং বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখেছি, সরকারি প্রশাসন, ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের ভূমিকা। সেসব নির্বাচনে দেখা গেছে, নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অবাঞ্ছিত ব্যক্তি এবং ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়ে কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী কেন্দ্রকে ঘিরে এমন অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করে যার ফলে সাধারণ নিরীহ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে আর নিরাপদ বোধ করে না। এর পরও কেউ যদি সাহস করে কেন্দ্রে যান তাদের নাজেহাল হতে হয়। কেউ নির্বাচনী বুথে পৌঁছে দেখেন তার ভোট কে বা কারা দিয়ে দিয়েছে।
নতুন কমিশন গঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা নিয়ে। সেখানে মিশ্র প্রতিক্রিয়াই লক্ষ করা যায়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নবগঠিত কমিশনকে স্বাগত অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি সব কাজে কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এই ইসির অধীনে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
অন্যতম বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে সৃষ্ট সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আন্দোলন-সংগ্রামের বিকল্প নেই। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। ১৯৯১ সালের মতো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে। এভাবেই এই সঙ্কট উত্তরণ সম্ভব হবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাদের কার্যক্রমে বোঝা যাবে তারা কতটা নিরপেক্ষ।
Posted ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh