| বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১
নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক প্রাইমারী ২২ ছিল জুন। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মাঝে বিরাজ করে এক ধরনের উত্তেজনা। বিশ্বের রাজধানীখ্যাত নিউইয়র্ক সিটির মেয়র সহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে আগামী ২ নভেম্বও সাধারণ নির্বাচনে। এ নির্বাচনে মেয়র ছাড়াও কুইন্স, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কস, ম্যানহাটান ও স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের বরো প্রেসিডেন্ট, সিটির ৫১ জন কাউন্সিল মেম্বার, একজন কম্পট্রোলার, পাবলিক এডভোকেট, ম্যানহাটান ও ব্রুকলীনের জন্য ডিস্ট্রিক্ট এটর্নী এবং নির্বাচিত করা হবে শতাধিক বিচারক। নানা কারণেই এবারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। বিশেষ করে করোনা মহামারির পর নূতন স্বাভাবিকতায় বড় ধরণের পরিবর্তন এসেছে নিউইয়র্ক সিটিতে। সিটির নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মাঝে আছে আর্থিক টানা পোড়েন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হতাশা কাটেনি এখনো। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নজিরবিহিন অবনতিতে উদ্বিগ্ন সিটির বাসিন্দারা। এমতাবস্থায় একজন শক্তিশালী মেয়র সহ সিটি কাউন্সিলের প্রতিটি পদে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এবারের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারী অনুষ্ঠিত হয় সম্পূর্ন নূতন র্যাঙ্কড চয়েজ ভোটিং পদ্ধতিতে। তারপরও বরাবরের তুলনায় এবার ভোট প্রদানের হার ছিল আশাব্যঞ্জক। নূতন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের কারণে চূড়ান্ত ফলাফল পেতে আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। প্রায় সাড়ে ৮ মিলিয়ন মানুষের বসবাস নিউইয়র্ক সিটিতে।
বহুজাতিক এ সমাজে বাংলাদেশী অভিবাসীর সংখ্যা তিন লক্ষাধিক বলে ধারণা করা হয়। সময়ের ব্যবধানে নিউইয়র্ক সিটির প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশী আমেরিকানদের বেড়েছে পদচারণা। অনেক ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুনামও কুড়িয়ে চলেছেন বাংলাদেশীরা। বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে নূতন প্রজন্মের সন্তানদের সাফল্য অন্যান্য জাতিগোষ্ঠির অভিবাসীদের নিকট রীতিমত হয়ে উঠেছে ইর্ষনীয়। নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেক বাংলাদেশী অভিবাসী। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি নির্বাচনে বেশ ক’জন প্রার্থী হয়েছেন।
কিন্তু তেমন কোন সাফল্য দেখাতে পারেননি। গত ২২ জুনের ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারীতে এক ডজন বাংলাদেশী সিটি কাউন্সিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এদের মধ্যে অধিকাংশ বাংলাদেশী প্রার্থী ছিলেন বিভিন্ন আসনে অপর বাংলাদেশী প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বি। যা ছিলো বাংলাদেশী কমিউনিটির মানুষের জন্য বিব্রতকর। তারপরও সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে একজন এবং সিটির সিভিল কোর্টের বিচারক হিসেবে একজন বাংলাদেশী প্রার্থী প্রাইমারীতে প্রাপ্ত ভোটে তাদের নিকটতম প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে আছেন।
শাহানা হানিফ নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ব্রুকলীনের ৩৯ ডিস্ট্রিক্ট থেকে বিজয়ী হওয়ার পথে। শাহানা হানিফ তার নিকটতম প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে আছেন ১০ শতাংশ ভোটে। ফলে তার বিজয় সুনিশ্চিত এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে শাহানা হানিফের অভাবনীয় এ বিজয় গোটা বাংলাদেশী আমেরিকান এবং কমিউনিটির বিজয়। বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে শাহানা হানিফ হবেন প্রথম বাংলাদেশী আমেরিকান এবং প্রথম মুসলিম সাউথ এশিয়ান যিনি এই মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন। শুধু তাই নয় ডিষ্ট্রিক্ট-৩৯ এ তিনিই হচ্ছেন প্রথম নারী কাউন্সিল মেম্বার । আগামী ২ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সিটির সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত বিজয় শাহানা হানিফই ছিনিয়ে আনবেন।
এটা প্রত্যাশা।অপর দিকে নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স সিভিল কোর্টের বিচারক পদে প্রাইমারিতে নিকটতম প্রার্থীর চেয়ে স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন এটর্নি সোমা সাঈদ। সিভিল কোর্টের বিচারক নির্বাচনে র্যাঙ্ক চয়েজ ভোট পদ্ধতির বালাই ছিলো না। তবে এক্ষেত্রেও চূড়ান্ত ফলাফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে। প্রাইমারি ফলাফলে এটর্নি সোমা সাঈদ যে সংখ্যক ভোট পেয়েছেন তাতে তার বিজয়ের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। তবে অ্যাবসেন্টি ভোট গণনায় তার ভোট প্রাপ্তির হার এবং ধারা একই রকম থাকলে এটর্নি সোমাই হবেন কুইন্স সিভিল কোর্টের নির্বাচিত বিচারক। চূড়ান্ত ফলাফলে এটর্নি সোমা বিজয়ী হলে তিনি হবেন নিউইয়র্ক সিটির বিচার বিভাগে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রথম বিচারক। শুধু তাই নয় প্রথম মুসলিম নারী সাউথ এশিয়ান বিচারক হিসেবে তিনি পরিচিত হবেন। আর এটা হবে বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটির জন্য অনেক বড় পাওয়া। ভবিষ্যতে প্রতিটি আসনে একক এবং যোগ্য বাংলাদেশী প্রার্থী মনোনীত করতে পারলে নি:সন্দেহে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। বিশেষ করে সিটি ডিস্ট্রিক্ট ২৪ বাংলাদেশী প্রার্থীদের জন্য অত্যন্ত উর্বর একটি এলাকা।
Posted ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh