| বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১
নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে চলছে যোগ্য নেতৃত্বের সংকট। সঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয়। তিন লক্ষাধিক বাংলাদেশীর বসবাস নিউইয়র্ক সিটিতে। অঞ্চল ভেদে প্রবাসীদের সংখ্যা কমবেশী হলেও বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষও আছেন এখানে। রাজনীতি ও সংগঠন প্রিয় বাংলাদেশীরা তাই এখানে গড়ে তুলেছেন দুই শতাধিক সংগঠন। তন্মধ্যে আঞ্চলিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন অন্যতম। স্বদেশী কায়দায় গড়ে উঠা রাজনৈতিক দলের এদেশে কার্যক্রম চালানোর আইনগত কোন বৈধতা না থাকলেও ছোট বড় অনেক গুলো রাজনৈতিক দলের শাখা কমিটি রয়েছে নিউইয়র্ক সহ আমেরিকার বাংলাদেশী অধ্যুষিত শহর গুলোতে। এসব সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে দলীয় নীতি আদর্শের চেয়ে বরাবরই প্রাধান্য পাচ্ছে নেতৃত্বের বিষয়টি। ফলে নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে প্রতিটি দলেই দেখা দিচ্ছে দ্বিধা-ত্রিধা বিভক্তি। নেতা-কর্মীদের মাঝে হাতা-হাতি, মারামারি এবং পুলিশ ডাকাডাকি পরিনত হচ্ছে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায়। অনেক আঞ্চলিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনেও চলছে একই রীতি-নীতি। সেখানেও নেতৃত্বের লড়াই এবং আর্থিক লেনদেন ও অনিয়মের কারণে সংগঠন ভেঙ্গে পাল্টা সংগঠন গড়ে উঠছে।
নিউইয়র্কের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি নিউইয়র্ক এর অবস্থাও তথৈবচ। যোগ্য নেতৃত্ব, সততা এবং পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধের অভাবে বাংলাদেশ সোসাইটির উপর থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ভরসা হারিয়ে ফেলছেন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংগঠকদের মাঝে সৃষ্ট অনৈক্য বিভেদ ও প্রতিহিংসা পরায়নতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ছে গোটা কমিউনিটিতে। বিভিন্ন সংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় অনেক নেতা প্রতারণা ও শঠতার আশ্রয় নিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন অপরাধ কর্মকান্ডে। এতে বাংলাদেশী কমিউনিটির ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে। তারপরও সংগঠনগুলোর কর্মতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। অনেক সংগঠনেই রয়েছে সৎ-যোগ্য ব্যক্তিত্ব এবং নেতৃত্ব। কিন্তু গোটা কমিউনিটিতে যে ধরণের ঐক্য, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ থাকা প্রয়োজন তা না থাকায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা এদেশের নানাবিধ সুযোগ সুবিধা থেকে শুধু বঞ্চিতই হচ্ছেনা মূলধারায় তাদের অবস্থান সংহত হওয়ার পরিবর্তে হয়ে পড়ছে নড়বড়ে। নিজেদের আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বও বিভেদের কারণে মূলধারার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা হচ্ছেন বিভ্রান্ত। এজন্যই হয়তো আমরা স্থানীয় কোন নির্বাচিত কংগ্রেসম্যান বা সিনেটরের নিকট থেকে অদ্যবধি তেমন কোন আনুকূল্য পায়নি। ঐক্য না থাকায় বাংলাদেশী কমিউনিটি ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে। আমাদের জাতীয় মর্যাদা ও ভাবমূর্তিও বহুলাংশে নির্ভর করছে আমাদের ঐক্যের উপর। যতদিন না কমিউনিটিতে নূন্যতম ঐক্যের ভিত গড়ে না উঠবে ততদিন আমরা বঞ্চিত হতেই থাকবো। কমন ইউনিটির মধ্য দিয়েই কমিউনিটি গড়ে উঠে। আর একটি শক্তিশালী কমিউনিটি গড়তে প্রয়োজন সঠিক এবং যোগ্য নেতৃত্ব। যাদেরকে কেন্দ্র করে কমিউনিটির সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে, এগিয়ে আসবে একে অপরের সুখে-দুঃখে।
আঞ্চলিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্রয়াসে একটি একক জাতীয় সংগঠন গড়ে তুলে তার মাধ্যমেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও আঞ্চলিকতার উর্ধ্বে উঠে মুক্তমন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ সোসাইটি নিউইয়র্ক এই সংগঠন হিসেবে তাদের অবদান রাখতে পারতো। কিন্তু নানাবিধ স্বার্থের সংঘাতে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। প্রতিবছর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সোসাইটি সহ অন্যান্য সংগঠন যে পরিমাণ অথ্য ব্যয় করে তা দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশী এবং নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্য কল্যাণ কর অনেক কিছুই করা সম্ভব হতো। আমরা মনে করি সময় এবং সুযোগ এখনো ফুরিয়ে যায়নি। নিঃস্বার্থভাবে সহৃদয় ব্যক্তিবর্গ যদি এগিয়ে আসেন তাহলে অবশ্যই প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদেরকে স্বাগত জানাবে। তবে এজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ।
Posted ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh