| বৃহস্পতিবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২২
মানবাধিকার লঙ্ঘন করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাব-পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা ও সাবেক সেনা প্রধানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে । যুক্তরাষ্ট্র বলছে, র্যাব গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কোনো সম্পদ থেকে থাকলে তা অবরুদ্ধ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তাদের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন না। বাংলাদেশ সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে র্যাবের মাধ্যমে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ’ রয়েছে, যা আইনের শাসন, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে খাটো করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বেসরকারি সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ থেকে ছয় শতাধিক গুম এবং ২০১৮ সাল থেকে প্রায় ৬০০ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। এ ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তোলপাড় । অপরদিকে সম্প্রতি কানাডা সরকার সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসানকে টরেন্টো বিমান বন্দর থেকে বের করে দিয়েছে গলা ধাক্কা দিয়ে। এতে ঘুম হারাম হয়ে গেছে বাংলাদেশ থেকে অর্থ লুন্ঠন করে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাসকারী লুটেরাদের। তাদের এখন দিন কাটছে আতঙ্কে। অবাধে লুন্ঠন করা দেশের অর্থ দিয়ে উত্তর আমেরিকায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে এতোদিন নিরাপদেই ছিলেন তারা।
প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনের এ নির্বাহী আদেশের তালিকায় নাম রয়েছে আরো অনেকের। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ব্যাংক, বীমা ও অর্থ লগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে এনে নিউইয়র্ক সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বাড়ি-গাড়ি ও ব্যবসায় বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন একটি শ্রেনী। এসব দেশে তাদের পরিবার এসব দেশে চলছে রাজার হালে। কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংকের মালিক এখন পালিয়ে আছেন নিউইয়র্কে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদার এবং আইন শৃংখলা রক্ষাবাহিনী ও আমলার নামে বেনামে বিদেশে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ। দুর্বৃত্তায়িত এবং অস্থিতিশীল রাজনীতির কারণে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচারে চলছে মহোৎসব। অপরদিকে ক্রমাগত বাড়ছে দারিদ্র। রাষ্ট্রীয় মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আর এই সুযোগে বাংলাদেশের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী অবাধে লুণ্ঠন করছে দেশের অর্থ। চিহ্নিত এই সিন্ডিকেট গত এক দশকে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে বিভিন্ন সংস্থার খবরে জানা গেছে। দেশের দরিদ্র মানুষের অর্থে তারা বিদেশে যাপন করছে বিলাসী জীবন। অর্থ পাচারকারী এসব প্রতারকের অনেকে দেশে ব্যবসা বাণিজ্য ও রাজনীতি করলেও তাদের পরিবার পাঠিয়ে দিয়েছে বিদেশে। আর সেখানে তারা আলিশান বাড়িতে বাস করছে। হাকাচ্ছে নামী দামী মডেলের গাড়ি।
বিদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে তাদের সন্তানরা। বাংলাদেশের এসব অর্থপাচারকারীরা কানাডায় বেগমপাড়া এবং সাহেব নগর গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রতিষ্ঠা করেছে বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য। শুধু এ দুটি দেশ নয়-যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, হংকং, সৌদি আরব, ভারত, অষ্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এরা একই কায়দায় অবৈধ অর্থ লগ্নি করেছে। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্র ড. আবদুল মোমেন দেশের অর্থ পাচারের জন্য আমলাদেরকে দায়ী করেন। দেশ থেকে প্রকাশ্যে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে। অথচ পাচারকারীদের প্রকৃতপক্ষে কোন শাস্তি হচ্ছে না। ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না পাচারকৃত অর্থ। পাচারকারীদের অনেকে একবারে দেশ ছেড়েছে। যখন তারা দেশে থাকে তখন তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার নজীর খুব কম।
কানাডায় বেগমপাড়া গড়ে উঠার পর সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশ থেকে কানাডায় পালিয়ে আসা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন তারা। টরন্টোতে বাংলাদেশি ‘বেগমপাড়া’ নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই অনেক কথাবার্তা চলছে। বলা হয় বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া বহু ব্যবসায়ী-আমলা-রাজনীতিক তাদের স্ত্রী-সন্তানদের পাঠিয়ে দিয়েছেন কানাডায়। তাদের নিয়েই সেখানে গড়ে উঠেছে এই ‘বেগমপাড়া’। ডা. মুরাদ হাসানের দেশে ফিরে আসা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় সারা দেশে আলোচনা শুরু হয়েছে নতুন করে। এসব ঘটনায় দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারী এবং অপরাধপ্রবণ ব্যবসায়ী, রাজনীতিকসহ অনেকেই আতঙ্কে আছেন। সামনের দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় কি না, তা নিয়েও শঙ্কা বিরাজ করছে। বাড়ি ঘর বিক্রি এবং ব্যবসায় বাণিজ্য গুটিয়ে নিরাপদ অন্য কোন দেশে পাড়ি জমানোর কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের এসব দুর্বৃত্ত আস্তানা গেড়েছে। অঢেল অর্থ বিনিয়োগ করছে নানা ব্যবসায়। নগদ অর্থে কিনছে বাড়ি ও তৈরি করছে অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স। এরা দেশ ও জাতির শত্রু। এখন সময় এসেছে প্রবাসে এসব লুটেরাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা এবং আইন শৃংখলা রক্ষাবাহিনীর নিকট তথ্য সরবরাহ করা। দেশ ও জাতির স্বার্থেই এ কাজটি করতে হবে।
Posted ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh