বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর ২০২১
নিউইয়র্কের পার্শ্ববর্তী স্টেট পেনসিলভেনিয়ার বড় সিটি ফিলাডেলফিয়ায় যাত্রীভর্তি চলন্ত ট্রেনে এক নারী যাত্রীকে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনা সকলকে স্তব্ধ করেছে। ধর্ষণের ঘটনার চেয়েও যা ভীতিকর ছিল, তা হচ্ছে ট্রেনভর্তি যাত্রীদের অকল্পনীয় নীরবতা। অসহায় যাত্রীকে ধর্ষকের কবল থেকে রক্ষা করতে কেউ বাধা দেয়নি, কোন যাত্রী তাদের ফোনে একটি ছবিও ধারণ করেনি, এমনকি কেউ ৯১১ এ কল করে পুলিশের সহায়তা পর্যন্ত চায়নি। ট্রেনটি একটি একটি করে ২৭টি স্টেশন অতিক্রম করেছিল এবং যাত্রীরা পুরো সময় ধরে তামাশা দেখেছে। গত ১৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে এ দু:খজনক ঘটনাটি ঘটে ফিলাডেলফিয়ার সাউথইস্টার্ন পেনসিলভেনিয়া ট্রান্সপোর্টেশন অথরিটি (সেপটা )পরিচালিত ট্রেনে।
ট্রেনে কত যাত্রী ছিল সে সম্পর্কে সেপটার কাছে সুনির্দিষ্ট রেকর্ড নেই। কিন্তু যখন ঘটনাটি ঘটে তখন ট্রেনের ব্যস্ততম সময় সেপটার একজন একজন কর্মী, যিনি কর্তব্যরত অবস্থায় না থাকলেও ট্রেনটি অতিক্রম করার সময় আশে পাশে ছিলেন, তিনি পুলিশকে ফোন করে ট্রেনের একজন নারী যাত্রীর সঙ্গে বাজে কিছু ঘটেছে বলে জানানোর পর পরবর্তী স্টেশনে অপেক্ষায় থাকা পুলিশ ট্রেনে পুলিশ ঘটনার মধ্যবর্তী অবস্থায় ওই নারীকে ও ধর্ষককে পায়। পুলিশ ধর্ষক ফিস্টন এনগয়কে গ্রেপ্তার করে এবং ঘটনার শিকার ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেপটা পুলিশের প্রধান থমাস জে নেসটেল সাংবাদিকদের জানান, ট্রেনটি স্টেশনে থামার পর দরজা খুলতেই একজন পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করে ধর্ষককে প্ল্যাটফর্মে ফেলে তাকে গ্রেফতার করে। তিনি জানান ফিস্টন ও সেই নারী যাত্রী ফ্র্যাংকফোর্ড ট্রান্সপোর্টেশন সেন্টার স্টেশনে ট্রেনে ওঠেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ পাওয়ার তিন মিনিট পর মার্কেট-ফ্র্যাংকফোর্ড লাইনের ৬৯ স্ট্রিট টার্মিনালে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেন।
পুলিশ এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা হতবাক এ ধরনের একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনায় এত বিপুল সংখ্যক যাত্রী কিভাবে নীরবতা পালন করে থাকতে পারলো, কেউ একটা ছবি তোলার বা ৯১১ কল করার বা ট্রেনে থাকা ইমার্জেন্সি বাটনে চাপ দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। অস্বাভাবিক কিছু ঘটতে দেখলে যাত্রীসহ সকলের উচিত অবিলম্বে তা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করা, এবং তারা তাদের পরিচয় গোপন রাখতে চাইলেও অপরাধ দমনে তাদের ভূমিকা থাকা জরুরী। তিনি বলেন, যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে সেজন্য প্রত্যেকের ক্রদ্ধ হওয়া ও বিরক্তি প্রকাশ করা উচিত। কারণ সভ্য সমাজে প্রকাশ্যে এধরনের কোন ঘটনা মেনে নেওয়ার মত নয়। প্রত্যেকের উচিত প্রতিটি ব্যবস্থাকে নিরাপদ করতে এগিয়ে আসা। দীর্ঘ চল্লিশ মিনিট ধরে একটি হামলার ঘটনা ঘটলো এবং কেউ ঘটনা প্রতিহত করতে এগিয়ে এলো না, এ পরিস্থিতিতে আমি উৎকণ্ঠিত।
জন জে কলেজ অফ ক্রিমিনাল জাস্টিস এর সাইকোলজি বিভাগের প্রফেসর এলিজাবেথ জেগলিক, যিনি যৌন সহিংসতা প্রতিহত করার বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন, তার মতে, লোকজন যদি দৈহিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে অস্বস্থি বোধ করে, তাহলে এর অন্য বিকল্পও রয়েছে, যেমন পুলিশকে জানানো। যখন বেশি লোক থাকে, তখন তারা হস্তক্ষেপ করে না। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায় যে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ অপরাধ সংঘটনের ঘটনা প্রতিরোধ করতে হস্তক্ষেপ করছে। কিন্তু এক্ষেত্রে একজন নারীকে রক্ষা করার জন্য কারো হস্তক্ষেপ না করা ব্যতিক্রমী ঘটনা।
অভিযুক্ত ফিস্টন এনগয়ের বিরুদ্ধে অতীতেও ধর্ষণসহ একাধিক ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা বলেছেন যে, রাত ৯টা ১৫ মিনিটের একটু পর ট্রেনে উঠার এক মিনিট পর ফিস্টন নারী যাত্রীর পাশে বসে। ভিডিওতে দেখায় যে তিনি নারীটিকে কয়েকবার ধাক্কা দেন। রাত ৯টা ৫২ মিনিটে ফিস্টন তার প্যান্ট খোলেন। আপার ডারবি পুলিশের সুপার টিমোথি বার্নহার্ডট বলেছেন যে ঘটনাস্থলে যে স্টেশনে ধর্ষক ফিস্টনকে আটক করা হয় তখন রাত ১০টা বেজেছিল। তিনি বলেন, আমার ধারণা ট্রেনে অনেক যাত্রী ছিল, যারা হস্তক্ষেপ করতে পারতেন। কারো না কারো কিছু করা উচিত ছিল। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনা প্রমাণ করে যে আমরা সমাজে কোথায় আছি, যারা এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটতে দেয়। অতএব ঘটনাটি শুধু বিব্রতকরই নয়, বরং ভীতিকর। আমি হতবাক, আমি বাকরুদ্ধ। যাত্রীরা নিজের চোখ দিয়ে যা দেখছে তা আমি কল্পনাও করতে পারছি না এবং তারা এই নারীর ওপর কী চলছে তা দেখেও কেউ এগিয়ে এসে তাকে সাহায্য করল না’।
অভিযুক্ত ধর্ষক ফিষ্টন এনগয় (৩৫) কঙ্গোর নাগরিক। ২০১২ সালে তিনি স্টুডেন্ট ভিসায় বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। ২০১৫ সালে তার ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রয়ে যান। তিনি যে ঠিকানা দিয়েছেন, সেটি একটি হোমলেস শেল্টার। তিনি বেশ ক’বার গ্রেফতার হয়েছেন এবং দু’বার সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন অসদাচরণের অভিযোগে। ২০১৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে তার বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের জন্য মামলা দায়ের করা হয় এবং ১২০ দিনের কারাদন্ড ও নয় মাসের প্রবেশনের সাজাপ্রাপ্ত হন। আরেকবার তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগে। ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে তাকে ইমিগ্রেশন ডিটেনশনে পাঠানো হয়, কিন্তু ২০১৯ সালে একজন ইমিগ্রেশন বিচারক তার ডিপোর্টেশনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর তিনি ডিটেনশন থেকে মুক্ত হন। বিষয়টি বোর্ড অফ ইমিগ্রেশন আপিলস এ আসার পর তারা অভিযুক্তের দ্বারা সংঘটিত যৌন অপরাধ গুরুতর কোন অপরাধ নয়, যা তাকে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অযোগ্য করতে পারে। ফিস্টন এনগয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। আগামী ২৫ অক্টোবর তাকে আদালতে হাজির করা হবে।
Posted ৩:২৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh