| বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট ২০২১
জাতিগতভাবেই বাংলাদেশীরা সংগঠন প্রিয়। বিশ্বের যেখানেই বাংলাদেশীদের বসবাস সেখানেই গড়ে উঠছে সংগঠন। তা জনপরিসংখ্যান যাই হোক না কেন। সামাজিক, রাজনৈতিক, আঞ্চলিক, পেশাজীবী, ধর্মীয় পরিচয়েই সাধারণত তারা গড়ে তুলছে সংগঠন। এর বাইরেও বাহারি নামে জন্ম হচ্ছে ভুঁইভোড় সংগঠন। শুধুমাত্র নিউইয়র্ক সিটিতেই অস্তিত্ব রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক সংগঠনের। আবার একই সংগঠন কাজ করছে দ্বিধা বা ত্রিধা বিভক্তভাবে। এসব নিয়ে ঘটছে বিভেদ বিদ্বেষের বিস্তৃতি। সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়ছেন মারামারি ও মামলা মোকদ্দমায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রকাশ্য হাঙ্গামায় ডাকা হচ্ছে পুলিশ।
পরিবারের সদস্যদের সামনেই শারীরিকভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন অনেকে। গত সপ্তাহেও জ্যাকসন এলাকার বাংলাদেশীদের একটি বারবিকিউ পার্টিতে মারামারি ও পুলিশ ডাকার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা এখন খুবই মামুলি এবং গাঁ সহা হয়ে গেছে। বাহারি সংগঠন ছাড়াও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে একই ধরণের সংস্কৃতি চালু হয়ে গেছে। মোদ্দাকথা পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন মজবুত করার প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলো এখন পরিণত হচ্ছে অনৈক্য ও হানাহানির কারখানায়। পেশজীবী সংগঠনগুলোও পিছিয়ে নেই বিভক্তি-বিদ্বেষ চর্চার সংস্কৃতি থেকে। অতি সম্প্রতি চিকিৎসকদের সংগঠনটি বার্ষিক সম্মেলনের নামে ভিন্ন দু’টি রাজ্যে চেহলাম অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে বলে মন্তব্য করেন একজন চিকিৎসক। নিজেদের পারস্পরিক কল্যাণ সাধণের পাশাপাশি সমাজ এবং রাষ্ট্রের মহতি কর্ম সম্পন্ন করার অভিপ্রায়ে গঠিত সংগঠনগুলো এখন কার্যত পরিণত হচ্ছে অকল্যাণকর প্রতিষ্ঠানে। ভুল বার্তা দিচ্ছে সমাজ ও নূতন প্রজন্মকে। বিশেষ করে প্রবাসে বাংলাদেশীদের সংগঠনগুলোতে নূন্যতম কোন অংশগ্রহণ নেই নূতন প্রজন্মের সন্তানদের। এমনকি চিকিৎসকদের সংগঠনের প্রতিও তারা বিমুখ। নিউইয়র্ক সহ যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক কর্মরত রয়েছে। কিন্তু বিভক্তি ও মোড়লীপনায় কারণে নূতন প্রজন্ম বাধ্য হচ্ছে তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বেছে নিতে।
বাংলাদেশী কমিউনিটিতে সৃষ্ট বিভক্তির এই সংস্কৃতি নীতি আদর্শের দ্বন্দ্বে নয় বরং নেতৃতের কোন্দলকে কেন্দ্র করেই ডালপালা গজাচ্ছে। নেতা হওয়ার অশুভ প্রতিযোগিতা ঐক্য বিনষ্টের মূল কারণ। বাংলাদেশী সাংবাদিক সমাজও এর বাইরে নয়। সংগঠন যত বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভক্তি। নিজেদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এসব বিবেচনায় না নিয়েই রাতারাতি নেতা বনে যাওয়ার যে প্রতিযোগিতা চলছে তা দুর্দমনীয়। মূলধারার রাজনীতি এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই কায়দা-কৌশল পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে পিছিয়ে পড়ছে কমিউনিটি । রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জনপ্রতিনিধিদের মনে ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে বাংলাদেশীদের সম্পর্কে।
বাংলাদেশী কমিউনিটিতে অনৈক্যের কারণেই গড়ে উঠছে না সঠিক ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব। নিউইয়র্ক সিটির অনেক এলাকা এখন বাংলাদেশীদের নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত উর্বর। ঐক্যবদ্ধ হলে এসব এলাকায় নিজেদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা খুব একটা কষ্টসাধ্য বিষয় নয়। কিন্তু কে শুনে কার কথা। এখানে সবাই নেতা। কেহ কারে নাহি মানে সমানে সমান। চলমান নেতৃত্ব সংকটের কারণেই খুড়িয়ে চলছে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটি। ধারণা করা হয়েছিলো বৈশ্বিক মহামারি করোনার পর কমিউনিটি ঘুরে দাঁড়াবে। নূতন স্বাভাবিকতায় নূতনভাবে শপথ নিবে। শুরু করবে নূতন ধারায় পথচলা। কিন্তু সব ধ্যান-ধারণা পাল্টে দিয়ে পুরনো পথেই হাঁটছে কমিউনিটি। করোনাকালে কোন কোন ব্যক্তি ও সংগঠনের মাঝে সহমর্মিতা পরিলক্ষিত হয়েছিলো। এখন আর এসবের বালাই নেই। সবাই মেতে উঠেছে নানাবিধ অপ্রয়োজনীয় অনুষ্ঠানাদিতে। অনেকে অর্থ ব্যয়ও করছেন দেদারসে। করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের মানুষের প্রতিও সহমর্মিতা প্রকাশের কোন কোন উদ্যোগ আয়োজন চোখে পড়ছে না আজকাল। নানাবিধ উৎসব আয়োজনে বাংলাদেশী কমিউনিটি এখন মুখর। এ অবস্থা চলতেই থাকবে যতোদিন না আমরা পরিবর্তন করতে পারবো নিজেদেরকে। শুধু কমিউনিটি বা সংগঠন নয় সর্বাগ্রে প্রয়োজন ‘কমন ইউনিটি’ বা সাধারণ ঐক্য প্রতিষ্ঠা।
Posted ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh