| বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ইমিগ্রেশন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন। ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় যুগান্তকারী সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে বাইডেন প্রশাসন একটি বিল উত্থাপন করেছে। বৈধ কাগজপত্রহীন ১ কোটি ১০ লাখ অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দেওয়ার পরিকল্পনায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিলটি উত্থাপন করা হয়। বিলে বলা হয়েছে, বিরাটসংখ্যক অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ না দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তারা সেই সুযোগ দিতেই বিলটি এনেছেন।এসব অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য অভিবাসন নীতি সংস্কার ‘দীর্ঘদিনের চাওয়া’ বলে উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার এনে দেশে বসবাসরত বিপুল সংখ্যাক আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টকে বৈধতা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া যে অঙ্গীকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার নির্বাচনী অভিযান পরিচালনাকালে করেছেন বিলটির মধ্যে তারই প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। বাইডেন বলেছেন, পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ভুল নীতি’ থেকে সরে আসার লক্ষ্য ছিল তাদের। নতুন বিলে জোর দেওয়া হয়েছে লাখ লাখ অভিবাসীর আইনগত সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি ।
এসব অভিবাসীর বেশিরভাগ মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকো থেকে আসা। যারা অনেক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তাদের ব্যবসা, বাড়ি, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সন্তান ও নাতি-নাতনিও রয়েছে।এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন, ‘অভিবাসন আমাদের শক্তির যে অপরিমেয় উৎস এবং এটা আমাদের জাতির জন্য অপরিহার্য।’ অভিবাসন নীতি সংস্কারকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অভিবাসন নীতিগুলো উপযোগী করার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এটি। এটা পরিবারের সদস্যদের পুনর্মিলন ঘটাবে, আমাদের অর্থনীতির উন্নতি ও শক্তিশালী করবে এবং আমাদের নিরাপত্তার রক্ষাকবচ হবে। নতুন এই বিলের প্রধান লক্ষ্য হলো, আগামী আট বছরে যুক্তরাষ্ট্রে কাগজপত্রহীন অবস্থায় বসবাস ও কর্মরত ১ কোটি ১০ লাখ অভিবাসীকে নাগরিকত্ব প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এই অভিবাসীদের মধ্যে কৃষিশ্রমিক এবং শিশুকালে পরিবারের সঙ্গে আসা ব্যক্তিদের দ্রুত স্থায়ী বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে অথবা বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে তাঁদের দেওয়া হবে গ্রিন কার্ড।
ডেমোক্রেটদের প্রস্তাবিত বিলে ‘ডাকা’ কর্মসূচির আওতাধীন তরুণ এবং টিপিএস বা টেম্পোরারি স্ট্যাটাসে থাকা ইমিগ্রান্ট, রিফিউজি ও এসাইলাম আবেদনকারী এবং বিচ্ছিন্ন ইমিগ্রান্ট পরিবারকে একত্রীকরণসহ আরো অনেক সুবিধা সৃষ্টির বিষয় অন্তর্ভূক্ত থাকবে। তবে বিলে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের জেনারেল অ্যামনেটিষ্ট দেয়ার মত কোন প্রস্তাব নেই। ওবামার নির্দেশ অগ্রাহ্য করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ডাকা’ কর্মসূচি বাতিল করার নির্দেশ দিয়ে তাদের ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন বন্ধ করেছিলেন। এরপর বিষয়টি নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। গত বছর সুপ্রীম কোর্ট তাদের রায়ে বলেছে যে ‘ডাকা’ কর্মসূচির আওতায় যারা আছেন তাদের ওয়ার্ক পারমিটের নবায়ন বন্ধ করা যাবে না। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে ‘ডাকা’ কর্মসূচির আওতাধীন যারা ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছিলেন বাইডেন প্রশাসন তাদের গ্রীনকার্ড ইস্যু করাসহ নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান রেখে উদার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেন। অভিবাসীদের ঢল থামাতে সীমান্তজুড়ে দেয়াল নির্মাণ, বৈধ অভিবাসীদের বিতাড়ন ও বিদেশি দক্ষ কর্মীদের ভিসা দেওয়া কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল ট্রাম্পের শাসনামলে। মেক্সিকো সীমান্তে আগত এসাইলাম প্রার্থীদের মধ্যে যারা পরিবারসহ এসেছেন তাদের শিশু সন্তানদের অভিভাবক থেকে বিচ্ছিন্ন করে যে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন ত্ াসমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করবে বাইডেন প্রশাসন। ট্রাম্প প্রশাসন ওই সময় অনেক শিশু সন্তানকে যুক্তরাষ্ট্রে রেখে তাদের মা-বাবাকে ডিপোর্ট করেছিল।
সমস্যাটি এতো জটিল হয়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে রেখে দেয়া অনেক শিশুর মা-বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া ইমিগ্রেশন সংস্কার বিলে কৃষি শ্রমিকদের বৈধতা দেয়ার একটি সুযোগ রাখা হবে। সংস্কার বিলে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ভঙ্গুর ইমিগ্রেশন পদ্ধতিকেই ঠিক করবে না, একই সাথে বিভক্ত পরিবারগুলোকে পুনরায় একত্রিতকরণ, আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের অনিশ্চয়তা দূর করাসহ তাদেরকে নাগরিকত্ব প্রদান, মানবাধিকার রক্ষাসহ একটি চমৎকার সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছে, সাবেক ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান প্রশাসন যেভাবে ইমিগ্রেশন সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে তা মাথায় রেখে বাইডেন প্রশাসন ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার এনে সে ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে বদ্ধপরিকর। এছাড়া মেক্সিকো সীমান্তে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় ২৫ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীকে অবেশেষে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। অভিবাসন আদালতের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া স¤পাদন করা হবে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেয়ার বিষয়ে বাইডেন প্রশাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আগামী সপ্তাহ থেকে মাঠ পর্যায়ে অভিবাসীদের গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হবে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইমিগ্রেশন নীতিকে আমরা স্বাগত ও সাধুবাদ জানাই।
Posted ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh