বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২
অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারো আমেরিকান মুসলিম সেন্টারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো ইন্টারন্যাশনাল ইউনাইটেড সীরাত কনভেনশন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনাইটেড সীরাত কনভেনশনে ইসলামিক আলেম ও স্কলারগণ বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে ইহকাল ও পরকাল সুন্দর করার আহ্বান জানিয়েছেন। বক্তাগণ বলেন, মুহাম্মদ (সা.) শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য নন তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আদর্শ। বিশ্বের চলমান যেকোন সংকট সমাধানে মহানবীর আদর্শ অনুসরণ অনস্বীকার্য। বক্তাগণ কোরআন-হাদিসের আলোকে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং রাসুলের (সা.) জীবনাদর্শ প্রত্যেক মুসলমানকে অবশ্যই অনুসরণ করার পাশাপাশি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অন্যান্য ধর্মের মানুষদের কাছে তা পৌছে দেওয়ার আহ্বান জানান।
জ্যামাইকার একটি মিলনায়তনে গত ২ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় ‘মুহাম্মদ (সা:) বিশ্ব শান্তি ও সামাজিক ন্যায় বিচারের প্রতীক’ শীর্ষক এই কনভেনশন । এবারের ১৫তম কনভেনশনের আয়োজক ছিলো আমেরিকান মুসলিম সেন্টার। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর ছাড়াও লন্ডন থেকে কনভেনশনে অংশ নেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদগণ। কনভেনশনে প্রধান অতিথি ছিলেন ফার্মাসিস্ট আমীর খান। আলোচনায় অংশ নেন কনভেনশনের চেয়ারম্যান ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ ও ফাদার জিম সহ আমন্ত্রিত অতিথি আব্দুল হাদী আফসারী, মোয়াজ্জেম হোসেন ফারুকী, ড. আবুল কালাম আজাদ, ড. জহিরুল আলম, স্যোসাল অ্যাক্টিভিষ্ট ড. মোহাম্মদ নাদির, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ইমাম শামসে আলী, আবু হুরায়রা মসজিদের ইমাম ও খতিব মওলানা ফয়েক উদ্দিন, ইকনা মসজিদের ইমাম মওলানা সাঈদুর রহমান, বেলাল মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি আনসারুল করীম, মওলানা লুৎফর রহমান কাশিমী, জেএমসি’র ইমাম ও শিক্ষক আকিমুজ্জামান চৌধুরী মাদানী, মুফতি মোহাম্মদ ইসমাইল, মওলানা নোমান কাসিমী, মওলানা আহমদ, হাফেজ আব্দুল্লাহ কাফি, ইসলামিক স্কলার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আবু সাইদ মাহফুজ, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, জেবিবিএ’র সভাপতি গিয়াস আহমেদ, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর আনোয়ার হোসেন, এস্টোরিয়ার আল আমীন মসজিদের সভাপতি জয়নাল আবেদীন এবং এনওয়াইপিডি’র অফিসার এরিক রবিনসন। কনভেনশনে নাত পরিবেশন করেন এটর্নী মঈন চৌধুরী, ডা. অতাউল গণি ওসমানী ও ইকবাল হোসেন।
ইমাম আবু জাফর বেগ বলেন, জীবনের সকল ক্ষেত্রেই রাসুল (সা.)-কে অনুসরণ-অনুকরণ করা আমাদের কর্তব্য। নামাজ-দোয়ায় দরুদ শরীফ না পরলে তা কবুল হবে না। মুখে মুখে রাসুলের উম্মত দাবী করলে হবে না। তাঁর সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে। জীবনকে সুন্দর করতে আর শান্তিময় জীবনের জন্য আল্লাহ-রাসুল (সা.)-কে ভালবাসতে হবে সমানভাবে । তাঁর ভালবাসা পেলে হলে মহব্বতের সাথে আল্লাহ-রাসুল (সা.)-এর আদেশ-নিষেধ মানতে হবে। নবী-রাসুল (সা.)-কে ২৪ ঘন্টাই রাত-দিন সকল কাজেই অনুসরণ করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। অন্যান্য বক্তাগণ বলেন, মহানবীর (সা.) জীবন চরিত নিজেদের মধ্যে ধারণ করে আমাদের জীবনকেও মানবিকগুনাবলী সম্পন্ন করে তুলতে হবে। একজন আরেকজনকে সম্মান দিতে হবে, সম্মান জানাতে হবে। ইহকাল-পরকালের জীবন সুন্দর করতে হবে আল কোরআন ও রাসুলের আদর্শ অনুসরণ করে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানতে হবে। মসলিম ও নন মুসলিম সবার জন্যই মহানবীর আদর্শ অনুসরণীয়।
বক্তাগণ বলেন, রসুল (সা.) হচ্ছেন পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাঁর সুন্নাহ তথা জীবনাচরিত পালনের মধ্য দিয়ে প্রত্যেকেই আল্লাহতায়াল সন্তুষ্ট লাভ করতে হবে। আর এজন্য নবীকে সত্যিকারার্থেই জানতে হবে, বুঝতে হবে। সেই সাথে আল্লাহর কথা মানতে হবে। াসুল (সা.) সমগ্র মানবজাতির জন্য আদর্শ। তিনি রহমাতাল্লিল আলামীন অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বাসীর জন্য রহমত স্বরূপ। আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে রাসুল (সা.)-এর আদর্শ পৌছে দিতে হবে। নবী করীম (সা:) এর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বিশেষ করে পিতা-মাতার সাথে সন্তান আর সন্তান্তের সাথে পিতা-মাতার সম্পর্কের পাশাপাশি খাঁটি মুসলিম হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, পরিবার থেকেই প্রথম শিক্ষা নিতে হবে। আর মা-বাবই হচ্ছেন সন্তানদের প্রথম শিক্ষক। তাই সকল মা-বাবার দায়িত্ব ইহকাল-পরকালের কথা ভেবে সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। বক্তারা নবী করিম (সা:)-কে নিজের চেয়ে বেশী ভালোবাসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দুনিয়ার লালসা দুনিয়াকে যেমন ধ্বংস করে, তেমনী আখেরাতকে ধ্বংস করে।
একমাত্র নবীকে (সা.) অনুসরণ, অনুকরণ ও মহব্বত করেই আল্লাহকে সন্তষ্ট করা সম্ভব। বক্তাগণ ইসলামের আলোকে রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তিজীবনে বিশ্বনবীর জীবনাদর্শ মেনে চলার আহ্বান জানান। পরিবারে স্ত্রী-সন্তান, প্রতিবেশী এবং সমাজের অন্যান্য মানুষের প্রতি কি ধরণের আচরণ করতে হবে রসুল (সা.) এর জীবনী অনুসরণ করলেই তা পূর্ণতা পাবে। বক্তাগণ বলেন, ইসলামে শিক্ষাকে ফরজ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়েছে নারীকে। নারী শিক্ষার ক্ষেত্রও করা হয়েছে অবারিত। বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু মরক্কোয় ফেজ শহরের একটি মসজিদ থেকে। আর এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা একজন নারী। যার নাম ফাতিমা আল ফাহরি। মহানবী (সা.) প্রদর্শিত জীবন ব্যবস্থা থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণেই আজ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অশান্তি ও অবক্ষয় দৃশ্যমান বলে মন্তব্য করেন বক্তাগণ।
সম্মেলনে অনুষ্ঠান পরিচালানয় ছিলেন মুফতি আব্দুল মালেক। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ইমাম হাফেজ রফিকুল ইসলাম ও মওলানা মঞ্জুরুল করীম।এশার নামাজ শেষে বিশেষ মুনাজাতের মধ্যদিয়ে কনভেনশনের সমাপ্তি ঘটে।
Posted ২:৫৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh