নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
গত ১১ সেপ্টেম্বর রোববার লং আইল্যান্ডের হেকশেয়ার ষ্টেট পার্কে মনোরম পরিবেশে প্রবাসের অন্যতম সামাজিক সংগঠন মানিকগজ্ঞ সমিতি নর্থ আমেরিকা ইনকের বার্ষিক বনভোজন ২০২২ বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠিত হয়। বনভোজনে বিপুল সংখ্যক সদস্য, পরিবারবর্গ ও অতিথিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। নিউইয়র্ক, কানেকটিকাট, পেনসিলভেনিয়া এবং নিউ জার্সি থেকে সমিতির সদস্যরা সকাল সাড়ে নয়টায় নিজস্ব গাড়ি ও বাস নিয়ে পিকনিকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
সকালের নাশতা পরিবেশনের পর সংগঠনের সভাপতি লুৎফর রহমান, প্রধান অতিথি ও সংগঠনের উপদেষ্টা ডাঃ ইউসুফ আল মামুন, ঊদ্বোধক নুরুল আজিম, সাধারণ সম্পাদক এফ করিম, অর্থ সম্পাদক সাইদুর রহমান রন্জু আহবায়ক জিকরুল আমিন জুয়েল, সদস্য সচিব আবু সুফিয়ান, সমন্বয়কারী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদানন্দ হালদার, প্রাক্তণ সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন খান সেলিম, জাহিদুল ইসলাম, আহসান হাবিব, মনিউর রহমান জাহাঙ্গীর,আব্দুস সালাম আজম প্রাক্তণ সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ মিয়া, উপদেষ্টা এ,বি,এম মাহবুব আলম, নিশাত লস্কর, মাহমুদ আলম, ওমর ফারুক খসরু, কাজী আসাদুজ্জামান, কবি সালেহা ইসলাম, মুক্তিযাদ্ধা কমান্ডার খন্দকার লিয়াকত আলী, মো: নাসিম, ডঃ ফয়সাল খানসহ কমিটির প্রায় সবাইকে সাথে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে পিকনিকের শুভ উদ্বোধন করেন কমিটির অন্যতম উপেদেষ্টা ডা: ইউসুফ আল মামুন ও নুরুল আজিম।
উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠানস্থল রূপ নিয়েছিল একখন্ড বাংলাদেশে! কোভিড-১৯ এর কারণে দীর্ঘ সময় সবাই লকডাউনে বাসায় থাকায় অনেক দিন পর সবাই আবার একসাথে পরিবার-পরিজন নিয়ে একত্রিত হতে পেরে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরে যেন ঈদের আনন্দ উপভোগ করেন। পিকনিকের বাস জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকা থেকে ছেড়ে যায় পিকনিক স্পটে, বাসের দায়িত্বে ছিলেন লুৎফর রহমান ও সামাদ হোসেন দেলোয়ার। সবাই একসাথে হবার পর সকালের সুস্বাদু নাস্তা (চিতই পিঠা, মাংস ভুনা, ভর্তা, সুজি) বিতরণ করা হয়, নাশতা স্পন্সর করেন, কাজী ফজলুল করিম ও মনোয়ারা বেগম ও ইপক কাজী। এর পর পরই শুরু হয় বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা, খেলাধুলার যাবতীয় সামগ্রীর স্পন্সর করে শহীদুর রহমান ছানা ও কানিজ ফাতিমা অ্যামি, ক্রীড়া সম্পাদক ওসমান গনি পলাশের মুহূমুর্হূ বাঁশির আওয়াজে ছোট বড় সবাই ছুটে যান কোমল ঘাসে ঢাকা সবুজ মাঠে ছুটে যান খেলায় অংশ গ্রহণ করতে।
শুরুতেই ১-৭ বছরের বাচ্চাদের ৫০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে খেলাধুলার পর্ব শুরু হয়। এরপর ৮-১২, ১৩-১৮ বছরের ছেলে এবং মেয়েদের দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এছাডাও সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল খেলাধুলার কিছু কিছু ইভেন্ট যা সবাইকে সত্যিই এক অনাবিল আনন্দ দান করে। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় খেলা ছিলো মহিলাদের বল নিক্ষেপ এবং পিলো পাসিং। এতে প্রায় ১২৫ জন মহিলা এ খেলায় অংশগ্রহণ করে। পিলো পাসিং এ পুরস্কার স্পন্সর করেন ডঃ ফয়সাল খান। এছাড়াও বিশেষ আকর্ষণ ছিলো ‘যেমন খুশী তেমন সাজো’তে অংশগ্রহণ। এই ইভেন্টে বয়সের কোন বালাই ছিল না। এতে যুবক-বৃদ্ধসহ নতুন প্রজন্মের অনেকেই অংশগ্রহণ করে ভূয়সী প্রশংসাও কুড়িয়ে নেয়। এতকিছুর পরও সব খেলাকে পিছনে ফেলে সবার দৃষ্টি যেয়ে পরে রঙিন ঘাঁসে ঘেরা বিবাহিত বনাম অবিবাহিত ফুটবল খেলা। আর এই ফুটবল খেলার টি-শার্ট স্পন্সর করেছেন মোসলেহ উদ্দীন খান সেলিম এবং ডিজাইনারে অন্তর। পিকনিকে অংশগ্রহণকারী সবাই কোনো না কোনো উপহার নিয়ে বাড়ি ফিরে যাক চেতনায় শিশুদের মাঝে সান্তনা পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এ পুরস্কার স্পন্সর করেন আটলান্টার কমিটির অন্যতম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আহমেদ স্পন্সর করেন। খেলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন দেওয়ান ওসমান গনি পলাশ, সদানন্দ হালদার, মোঃ রাশেদ মিয়া, আবু সুফিয়ান, সজীব আহমেদ, ইব্রাহীম খান বাঁধন, রিতা, অ্যামি, শাম্মী, পলাশী সাহা, আব্দুস সালাম আজম, শহিদুর রহমান ছানা, ইপক কাজী ও রাকিবুল হক রাকিব। বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন সভাপতি, সেক্রেটারী ও টুটুল।
খেলাধুলার পর পরই শুরু হয় দুপুরের জন্য উপাদেয় সব খাবার। এত রকমারী খাবারের বাহার দেখে সবারই চোখ জুড়িয়ে যায়। এই খাবারের দায়িত্বে ছিলেন কানিজ ফাতিমা এমি, ফজলুর রহমান, খন্দকার এফ করিম, মো: আবু ইমদাদুল হক, মোজাফফর, রওনক, বাঁধন, শাহীন মোল্লা, শাহীন আজাদ, মোজাম্মেল হক, সামাদ হোসেন দেলোয়ার, শহিদুর রহমান ছানা, হাবিব শেখ, লিটন ঘোস, বাবুল সাহা, মোমরেজ খান, কুব্বাত বিশ্বাস, নাসির হোসেন, মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সাইদুর রহমান রঞ্জুু, টিপু সুলতান, আহসানুর রহমান, সুফিয়ান এমরান, রেজাউল করিম, আমিনুর ইসলাম, আল নোমান সুমন, খবির মিয়া, পলাশী সাহা, সজিব, শাম্মী আক্তার রিতাসহ সমিতির অন্যান্য সদস্য।
দুপুরের খাবারের পর পরই প্রায় সবাই সমুদ্র বিলাসে চলে যান। সমুদ্র বিলাস শেষে চলতে থাকে ঝাঁল মুড়ি পরিবেশন। নাজমা নাজনীন তার সুস্বাদু ঝাল মুড়ি পরিবেশন করে সকলের মন জয় করে নেন । সেই সাথে চলতে থাকে তরমুজ দিয়ে অতিথিসহ সবাইকে আপ্যায়ন। আপ্যায়নের দায়িত্বে ছিলেন- চাতক মাস্টার, নদী, এ,বি,এম মাহবুব আলম, জাকির আহম্মেদ ও লিপি আক্তার, চা ও পান বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন জাহিদুল ইসলাম এবং মিতা জাহিদ।
অতিথি হিসাবে ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিক, মোঃ আলি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী, আহসান হাবীব, রাব্বি সৈয়দ, মাহমুদ আলম সদস্য প্রার্থী, সাদি মিন্টু, অলিভ আহমেদ, কামরজ্জামান বাবু, মির্জা ফরিদ উদ্দিন, মিলন মোল্লা ও ফখরুল আলম, এ ছাড়াও আরও অনেকেই ছিলেন অতিথির তালিকায়। দোয়া পরিচালনা করেন, মোঃ তৈয়ব আলী মোল্লা। সমিতির প্রধান উপদেষ্টা তৈয়েবুর রহমান হারুন অসুস্থ বোধ করায় পিকনিকে উপস্থিত হতে পারেন নি। তার সুস্থতা কামনা করে দোয়া করা হয় ।
এরপর শুরু হয় র্যাফল ড্র। র্যাফল ড্র’র ১৬ টি আকর্ষনীয় পুরস্কার এর মধ্যে ১ম পুরষ্কার: নিউইয়র্ক- ঢাকা-নিউইয়র্ক এয়ার টিকেট, স্পন্সর করেছেন আহসান হাবিব, উপদেষ্টা মানিকগঞ্জ সমিতি, ২য় পুরষ্কার স্বর্ণের গহনা স্পন্সর করেন আব্দুস সালাম আজম, উপদেষ্টা মানিকগঞ্জ সমিতি, ৩য় পুরস্কার: অ্যাপল ওয়াচ সৌজন্যে শরিফ রহমান টুটুল, ৪র্থ পুরস্কার : ৫৫” টিভি, মোঃ আলম পিসি রিচার্ড; ৫ম পুরস্কার: ৫০” টিভি, সৌজন্যে কারওয়ান বাজার, ৬ষ্ঠ পুরস্কার: স্যামসন ট্যাবলেট সৌজন্যে মোঃ আলী, প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশী আমেরিকান সোসাইটি; ৭ম পুরস্কার: ল্যাপটপ, আহসান হাবীব, প্রেসিডন্ট, নিউইয়র্ক বাংলাদেশী আমেরিকান লায়ন্স ক্লাব; ৮ম পুরস্কার ল্যাপটপ কামরুল লাবনী, ৯ম পুরস্কার এয়ার কন্ডিশনার, খলিল বিরিয়ানি, ১০ম পুরস্কার মিলন মোল্লা সিনিয়র সহ সভাপতি, নবাবগঞ্জ সমিতি, ১১তম পুরস্কার কামরুজ্জামান বাবু, সভাপতি নাটোর জেলা সমিতি, ১২তম পুরস্কার মাইক্রোভেন, রাব্বি সৈয়দ; ১৩তম পুরস্কার ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, মীর শিবলী, বাংলা টিভি; ১৪তম পুরস্কার, শাহনাজ পারভীন রিতা, ডিনার সেট, ১৫তম পুরস্কার আরজুমান্দ বানু, ব্লেন্ডার এবং বিশেষ পুরস্কার, ল্যাপটপ, সাজ্জাদ হোসেন । এছাড়াও আরও আকর্ষনীয় মূল্যবান পুরস্কার থাকায় লটারির কুপন কেনার জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন এড: সামিউল করিম আলমগীরের উপর। র্যাফেল ড্র’র কুপন বিক্রয়ের কাজে নিয়োজিত ছিল:- শাহনাজ পারভীন রিতা, কানিজ ফাতেমা এমি, জয়টিকা জয়া ও কামরুল খান।
পরবর্তী পর্ব ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সুরের ঝংকারে মন মাতানো গানের আসর। এতে গান পরিবেশন করেন: স্বনামধন্য শিল্পী রথীন্দ্র নাথ রায়ের কন্যা প্রবাসের অন্যতম শিল্পী আর টিভি বাংলার গায়েনের প্রথম রানার আপ চন্দ্রা রায়, প্রবাসের নায়ক আলমগীর খ্যাত শিল্পী জহির টিপু , এবং প্রবাসে বেড়ে উঠা এসময়ের জনপ্রিয় শিশু কণ্ঠ শিল্পী সুস্মিতা হালদার আরও ছিলেন বাংলার গায়েনের আলভান চৌধুরী ও ফাবিহা নিসা ।শিল্পীর গানের মনমাতানো তালে তালে অনেকেই নৃত্যের প্র্যাকটিসও সেরে নেন ক্ষণিকের জন্য।
ফটো ও ভিডিও ধারণের দায়িত্বে ছিলেন বাঁধন সজীব ও তুষার পিক, গেষ্ট অফ অনার হিসাবে ছিলেন ফাহাদ সোলায়মান, সিটি মেয়রের এশিয়ান উপদেষ্টা মেয়র নিউইয়র্ক সিটি, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার ডিষ্ট্রিক ৪, নয়ন আলী পরিষদের নয়ন ও মোঃ আলি। র্যাফল ড্র পরিচালনা করেন, আহসান হাবিব, জাহিদুল ইসলাম ও মোসলেহ উদ্দিন খান সেলিম ।
রেফেল ড্র এর প্রথম পুরস্কার পান আব্দুস সালাম আজম ২য় পুরস্কার লাবনী কামরুল ৩য় পুরস্কার সিমু জুয়েল। সব শেষে সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, আহবায়ক, সদস্য সচিব, প্রাক্তণ সভাপতি, প্রাক্তণ সাধারণ সম্পাদক এবং উপদেষ্টাগণ তাদের নিজ নিজ বক্তব্য পেশ করেন। প্রধান অতিথি ডাঃ ইউসুফ আল মানুন তার বক্তব্যে মানিকগঞ্জ সমিতির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন এবং ভবিষ্যতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশ ও প্রবাসে সকলের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোর উদাত্ত আহবান জানান। নুরুল আজিম তার উদ্বোধনী বক্তব্যে মানিকগঞ্জ সমিতির একতা দেখে অভিভুত হয়ে বলেন, সব সময় সমিতির পাশেই ছিলেন ও ভবিষ্যতেও থাকবেন, আহবায়ক জিকরুল আমিন জুয়েল সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞ্যাপন করেন পিকনিকে আসার জন্য। সদস্য সচিব আবু সুফিয়ান ভুল ক্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করেন। সাধারণ সম্পাদক আগত অতিথি ও মানিকগঞ্জ বাসীর দীর্ঘজীবন এবং পরবর্তীতে সবার উপস্থিতি কামনা করেন।
সর্বশেষে সংগঠনের সভাপতি লুৎফর রহমান তার সমাপণী বক্তব্যে বনভোজনে আগত সবাইকে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন মানিকগঞ্জ সমিতির সব অনুষ্ঠানই প্রমাণ করে দিয়েছে প্রবাসের অন্যতম সংগঠন হচ্ছে আমাদের প্রাণের সংগঠন মানিকগঞ্জ সমিতি। ভবিষ্যতে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সমিতির প্রাক্তণ সভাপতি আহসান হাবিব ও সদানন্দ হালদার।
Posted ১২:৫০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh