| বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১
বেকারত্ব ৪.৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে গত অক্টোবর মাসে। গত বছরের তুলনায় ৪.৯ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সূচককে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক শ্রমবাজারে সুদিনের আভাস বলে উল্লেখ করছেন অর্থনীতিবিদরা। কৃষি শ্রমিক ছাড়াই অক্টোবর মাসে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার লোকের। যেখানে সাড়ে চার লাখ লোকের নতুন কর্মসংস্থান হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। করোনা মহামারীজনিত বিধিনিষেধ হ্রাস পাওয়ায় মানুষের চলাচল বেড়ে গেছে। সেকারণে কর্মসংস্থান বেড়েছে মূলত পরিবহন, বিনোদন ও আতিথেয়তা সেবা খাতে। ব্যবসা ও নির্মাণ খাতেও আগের চেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে যেসব খাতে স্থবিরতা নেমে এসেছিল এবং বেকারত্ব হার ছিল উর্ধমুখী। তা কেটে গত ছয় মাসে প্রায় ২৪ লাখ লোক তাদের কাজে ফিরে যাওয়ায় অর্থনীতিতে গতিশীলতা এসেছে। গতবছরের ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী দেড় বছরের বেশি সময় বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে এক অবিশ্বাস্য সময়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কায় সদা সন্ত্রস্ত থাকতে হয়েছে মানুষকে।
স্বাভাবিক জীবনযাপন তো বটেই, থমকে ছিল গোটা বিশ্বের বেশির ভাগ অর্থনৈতিক কার্যক্রম। কভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। ফলে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারেও পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। একটা দীর্ঘ সময় মন্দার কবলে থাকা এ বাজার এখন আগের চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক দক্ষ কর্মী খুঁজে নিতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে এ বিষয়ে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে ডিপার্টমেন্ট অফ লেবার। বিভিন্ন খাতে এখন কর্মী প্রয়োজন হচ্ছে। পাশাপাশি বেকারত্বের হারও কিছুটা কমেছে। আগের মাসের ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশে। শ্রমবাজারের এ অবস্থাকে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো উল্লেখ করে বেশ উচ্ছ্বসিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, এটি দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের বড় উদাহরণ।
আমাদের অর্থনীতির চাকা এগিয়ে চলেছে। ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অক্টোবরের তথ্য দেখে মনে হচ্ছে যে বছরের বাকি দিনগুলোও ভালো যাবে। বিশেষ করে যেহেতু ক্রিসমাসসহ নানা ধরনের ছুটির মৌসুম শুরু হচ্ছে, তাই এগুলো ঘিরে ক্রেতা চাহিদাও বাড়ছে। ফলে বিক্রি বাড়ার প্রত্যাশা বিক্রেতাদের। ব্যাংক অব আমেরিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রায়ান ময়নিহান বলেন, পৃথিবী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের অনেকাংশেই জয় হয়েছে। ভোক্তারা এখন অনেক অর্থ ব্যয় করছেন। মানুষ দীর্ঘদিনের বন্দিদশা ভুলে ঘুরতে বের হচ্ছে। হোটেল ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে জনসমাগম বাড়ছে। ডিপার্টমেন্ট অফ লেবারের এক রিপোর্টে আগের মাসগুলোর চিত্রও বেশ উজ্জ্বল। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরেও কংসংস্থানের গতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
ওই দুই মাসে প্রায় আড়াই লাখের মতো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল। সম্প্রতি আরেকটি নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে, যার ফলে আগামী ৪ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের সকল কর্মীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে একশ’ জনের বেশি কর্মী কাজ করেন তাদের সবাইকে অবশ্যই ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। মনে করা হচ্ছে যে, এ নিয়মের ফলে কর্মী নিয়োগ ও দক্ষ কর্মী খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। কারণ সংক্রমণের ভয়ে যারা এতদিন কাজে ফেরার কথা ভাবছিলেন না, তারাও কাজে ফিরতে আগ্রহী হবেন। মহামারী প্রায় শেষ হয়ে আসছে বলে নানা ধরনের লক্ষণ প্রকাশ হচ্ছে। শ্রবাজারে এ উন্নতিও তারই প্রমাণ। গত মাসে ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম কর্মীর সংখ্যাও কমেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানেই এখন কর্মীরা উপস্থিত হয়ে কাজ করতে শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে বছরের চতুর্থ প্রান্তিকটি অনেক ভালো যাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। মোটকথা আমেরিকান শ্রমবাজারের পুনরুদ্ধার ঘটছে।
তবে এর বিপরীত একটি চিত্রও রয়েছে। তা হচ্ছে, চাকুরি ছাড়ার হিড়িক। গত ১২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিকসের (বিএলএস) এক জরিপে দেখানো হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রে গত সেপ্টেম্বরে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষ চাকরি ছেড়েছেন, এবং এটি এক মাসে সর্বোচ্চ চাকরি ছাড়ার রেকর্ড। আগস্টে চাকরি ছেড়েছিল ৪৩ লাখ মানুষ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যখন লোকজন স্বেচ্ছায় চাকরি ত্যাগ করেন তখন বোঝা যায় যে তারা অন্য কোনো চাকরি খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। বিএলএসের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত ১ কোটি ৪ লাখ চাকরির বিজ্ঞাপন এসেছে। এর মধ্যে ৬৫ লাখ লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগের মাসেও একই সংখ্যক মানুষ নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও চাকরি ছাড়ছেন এমন মানুষের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ও সেবা খাতে চাকরির বিজ্ঞাপন বেড়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার। স্টেট ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদে বিজ্ঞাপন বেড়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার। রাজ্য ও স্থানীয় সরকারের এ হিসাব অবশ্য শিক্ষা খাত বাদে। অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন বিজ্ঞাপন বেড়েছে ৫১ হাজার। তথ্য খাতেও একই পরিমাণ বাড়তি বিজ্ঞাপন এসেছে।
Posted ১:৫৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh