| বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২২
নিউইয়র্ক সহ যুক্তরাষ্ট্রে এবার একদিনে রেকর্ড ১০ লাখের বেশি মানুষের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। বজ্রের গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে কোভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। সব মিলিয়ে কোভিড পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দ্রুত। এরমধ্যে মারা গেছেন সাড়ে ৮ লাখ। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন এবং বুস্টার ডোজ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রভাব ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে শিশুদের মধ্যেও।
আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক জানিয়েছে, প্রায় ২ লাখ শিশু করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের মহামারির ঢেউ এর আগেও আঘাত হেনেছে। তবে সম্প্রতি যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তা আগে দেখেননি বিশেষজ্ঞরা। হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগের কক্ষগুলো সব সময় ভর্তি থাকছে রোগীতে। এমনকি, এর আগে যখন সংক্রমণ সর্বোচ্চ চূড়ায় ছিল তখনো পরিস্থিতি এমন ছিল না। শুধু ওয়াশিংটন ডিসির এমন অবস্থা নয়। নিউ জার্সি, নিউইয়র্ক থেকে আরাকানসাস এবং শিকাগোতে একই পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব এলাকার হাসপাতালের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরা। অ্যারিজোনা ও নিউ মেক্সিকোয় ফেডারেল মেডিকেল কর্মকর্তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে মোতায়েন করা হয়েছে সেবা দেওয়ার জন্য। জর্জিয়ার কিছু এলাকার হাসপাতালে সম্প্রতি রোগী দ্বিগুণ হয়েছে।
যাদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে তাদের অধিকাংশই টিকা নেননি। সেখানকার হাসপাতালগুলোর পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে, করোনার পরীক্ষা অন্য কোথাও করুন। যাতে জরুরি বিভাগের রুমগুলোয় রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া যায়। লুইজিয়ানায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। এখানেও সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। অঙ্গরাজ্যের লেক রিজিওনাল মেডিকেল সেন্টার মুখ্য চিকিৎসক ক্যাথরিন ওনিল বলেন, হাসপাতালে যে হারে রোগী ভর্তি বাড়ছে তা বিস্ময়কর। এই চিকিৎসকও জানিয়েছে, যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই টিকা নেননি। করোনা ভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণশীল ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের বিস্তারের মধ্যে যেসব আমেরিকানের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জরুরী প্রয়োজন রয়েছে তাদের গন্তব্যে পৌছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পর কোয়ারেন্টাইন ও ভাইরাস টেস্টের প্রস্তুতি রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এক বিজ্ঞপ্তিতে স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে যে, আমেরিকান সিটিজেন যারা ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের বিস্তারের মধ্যেও আন্তর্জাতিক ভ্রমণে যাবেন তাদের কোভিড ১৯ সংশ্লিষ্ট অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে।
বিশেষ করে আমেরিকান সিটিজেনদের যদি বিদেশে তাদের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অধিক সময় কাটাতে হয়, তাহলে তা তাদের করতে হবে নিজেদের খরচে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বিদেশযাত্রী আমেরিকানদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বীমা করার জন্যও পরামর্শ দান করেছে, যে বীমার মধ্যে কোভিড ১৯ সংশ্লিষ্ট ভ্রমণ বাতিল ও স্বাস্থ্যসেবার বিষয়গুলোও অন্তর্ভূক্ত। এছাড়া সংশ্লিষ্টদের এটাও অবহিত করা হয়েছে যে মেডিকেয়ার এবং মেডিকেইড সাধারণত আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যয় বহন করে না।
সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন করোনা ভাইরাসের সকল ভেরিয়েন্টের মধ্যে ওমিক্রনে যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমিতের হার ৫৮.৬ শতাংশ বলে উল্লেখ করেছে। নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সিসহ দেশের বিশেষ বিশেষ অংশে এবং টেক্সাসের মত দক্ষিণের স্টেটগুলোতে ওমিক্রনে নতুন করে সংক্রমণ হার ৯০ শতাংশ বলে সিডিসি জানিয়েছে। সিডিসি যাত্রীদের ভ্রমণ-পূর্ব টেস্টিং ছাড়াও পরামর্শ দিয়েছে যে পূর্ণ ভ্যাকসিন নেয়া যাত্রীদেরও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে কোভিড টেস্ট করাতে হবে। যেসব যাত্রী ভ্যাকসিন নেননি, তারা আন্তর্জাতিক বা অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও গন্তব্যে পৌছার পর পূর্ণ সাতদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছে, এমনকি তা যাদের টেস্ট ফলাফল নিগেটিভ আসবে তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
যুক্তরাষ্ট্র যখন সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণের মুখোমুখি, তখন সারা দেশের ছাত্রছাত্রীদের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে খাপ খাইয়ে নিতে হচ্ছে। ওমিক্রন ভাইরাস সংক্রমণে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের সংখ্যা দিনে ৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, যে সংখ্যা এক সপ্তাহ আগের চাইতে দ্বিগুণ এবং দুই সপ্তাহ আগের চাইতে তিনগুণ বেশি। শিক্ষক ঘাটতি ও নতুন সংক্রমণের ঢেউ সামলানোর প্রয়াসের কারণে মিলওয়াকি, ক্লিভল্যান্ড, ডেট্রয়েট ও ফিলাডেলফিয়ার স্কুলগুলিকে তাদের কিছু বা সকল ক্লাস পরিবর্তন করে অনলাইনের মাধ্যমে নিতে বাধ্য করবে।
মহামারী চলাকালীন ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার এই পদ্ধতির ওপর নির্ভর করতে হবে। স্কুলের বাইরে অন্য প্রতিষ্ঠানে এর প্রভাব পড়েছে। স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন ঘোষণা করেছে যে ওয়াশিংটনে তাদের প্রধান জাদুঘরগুলি অভাবনীয় স্টাফ ঘাটতির জন্য বন্ধ থাকবে বা অন্তত ১২দিনের জন্য হ্রাস করা সময়ের জন্য খোলা থাকবে। বহু বাণিজ্যিক বিমান সংস্থা যখন আবহাওয়া সমস্যা মোকাবেলা করছে, তাদেরকেও সুস্থ ক্রু সদস্যের অভাবে অনেক ফ্লাইট বাতিল করতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন বিকল্প নেই।
Posted ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh