| বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কেবল মানুষের জীবন নয়, জীবিকার উপরও ভয়াল থাবা বিস্তার করেছে। বারবার লকডাউন ও বিধিনিষেধে জীবিকার উপায়-উপকরণ রুদ্ধ হওয়ায় নতুন করে বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। কোটি কোটি মানুষের দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের সংস্থান করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। অনেকে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। এখন কোভিড মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার প্রেক্ষাপটে মধ্যবিত্তও নেমে যাচ্ছে দুস্থদের কাতারে। কয়েক দিনে লকডাউনের সময় টিসিবির ট্রাক সেলের লাইনে মধ্যবিত্তদের ভিড় দেখা যাচ্ছে যা আগে তেমন চোখে পড়েনি। অর্থনৈতিক অবস্থা কতটা ভঙ্গুর হলে একজন মানুষ সামাজিক অবস্থান, মর্যাদা এবং আত্মসম্মান ভুলে ন্যায্যমূল্যের পণ্য কিনতে প্রতিযোগিতায় নামেন, তা ভেবে দেখার মতো।
গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, চলমান লকডাউনের মধ্যে খাবার ও ত্রাণসহায়তার জন্য গত ১১ দিনে ১৯ লাখেরও বেশি কল এসেছে জাতীয় তথ্যসেবার ‘৩৩৩’ নম্বরে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের অধীনে এই নম্বরে কল করলে প্রশাসন যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছে। খবরে বলা হয়, ১৯ লাখ আবেদনকারীর মধ্যে প্রশাসন মাত্র ৫৯ হাজার ১৬৪টি পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে। আর গত পাঁচ দিনে খাদ্যসহায়তা চেয়ে এই নম্বরে কল এসেছে এক লাখ ৭০ হাজার ৯৮৪টি। এর মধ্যে বাছাই করে ১৩ হাজার ১৫১ জনের নম্বর মাঠ প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। মাঠ প্রশাসন খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দিয়েছে এক হাজার ৭৩৬টি পরিবারে। একেকটি পরিবারের জন্য চাল, ডাল, তেল, আলুসহ ৫০০ টাকার খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকারি এই সেবা যে মরুভূমিতে একবিন্দু পানি ছিটানোর মতোই অকার্যকর সেটি স্পষ্ট। এতে দরিদ্রদের জন্য খাদ্যসহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। আর খাদ্যসহায়তা ছাড়া লকডাউন বা বিধি-নিষেধ বাস্তবে কার্যকর করাও কঠিন। গত কয়েক দিনে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে কাজের সন্ধানে মানুষের বাইরে বেরিয়ে আসার প্রবণতা বেড়েছে। পাড়া-মহল্লায় পুলিশের সাথে লুকোচুরি খেলা চলছে ছোট দোকানি, ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের। কারণ তাদের পেটে ভাত নেই। পরিবার নিয়ে ঘরে না খেয়ে মরার চেয়ে করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি নেয়া তাদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে। পয়লা জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনে শ্রমজীবীদের জীবিকা নির্বাহের সব পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, লকডাউনের বিধি-নিষেধ ভেঙে গত কয়েক দিনে যারা গ্রেফতার বা আটক হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই দরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষ।
অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা বলছেন, দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ কাজ করে। এরা লকডাউনে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত। এর বাইরে বিপুলসংখ্যক দোকান কর্মচারী কিংবা পরিবহন খাতের লোকজন রয়েছে। লকডাউন আরোপের সময় এদের বিষয়টি ধর্তব্যে নেয়া হয়নি। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিডের অভিঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে। কিন্তু নতুন গরিবদের গণনায় নিচ্ছে না সরকার। ফলে জাতীয় বাজেটে তাদের জন্য নতুন কোনো পরিকল্পনা বা কর্মসূচি আসেনি।
সমস্যা হলো, বালুতে মাথা গুঁজে থাকলে বিপর্যয় এড়ানো যায় না। অর্থনৈতিক দুরবস্থা মানুষের জন্য কোভিডের চেয়েও শোচনীয় পরিণতি বয়ে আনতে পারে যদি সময়মতো ব্যবস্থা নেয়া না হয়। সামনে কোরবানির ঈদ। অতিবৃষ্টির কারণে বন্যার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এই চতুর্মুখী সঙ্কটের সময়ে আমরা সরকারের প্রতি বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবনের এবং তার ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।
Posted ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh